‘ডিজিটাল লীগের’ নামে ‘অ্যানালগ চাঁদাবাজি’

‘ডিজিটাল আওয়ামী লীগ’, ‘ডিজিটাল ছাত্রলীগ’, ‘ডিজিটাল আওয়ামী প্রজন্ম লীগ’, ‘ডিজিটাল আওয়ামী ওলামা লীগ’- হরেক নামে ডিজিটাল ব্যানার-ফেস্টুন দেখা যাচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে। এসব ব্যানারে আবার সংগঠনগুলোর নেতাদের নামের প্রচারও দৃশ্যমান।

এসব সংগঠনের অনেকগুলো ঠিকানা হিসেবে আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নাম ব্যবহার করলেও দল থেকে এগুলোর অনুমোদন না থাকার কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

‘ডিজিটাল’ নামে এই সংগঠনগুলোর নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দলটির সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাদের মধ্য থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। “এরা ডিজিটালের নামে অ্যানালগ চাঁদাবাজি করছে,” বলেছেন একটি সহযোগী সংগঠনের এক নেতা।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে সরকার গঠন করে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার ঘোষণা দেওয়ার পর ‘ডিজিটাল’ নামে এই সব সংগঠন গড়ে উঠতে দেখা যায়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে কয়েকটি সংগঠনের পেইজ থাকলেও নিয়মিত কার্যক্রম ও বিস্তারিত কোনো তথ্যই পাওয়া যায়নি। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে তাদের কোনো তৎপরতাও দৃশ্যমান নয়। তবে তাদের অস্তিত্বের জানান রয়েছে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টারে।

পুরান ঢাকার টিকাটুলী মোড় থেকে গেন্ডারিয়া রেল স্টেশন পর্যন্ত পুরো এলাকার সড়কে ‘বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল আওয়ামী প্রজন্ম লীগ’ ও ‘ডিজিটাল আওয়ামী ওলামা লীগের’ কেন্দ্রীয় কমিটির ব্যানার-ফেস্টুন রয়েছে।

গেন্ডারিয়া রেল স্টেশনে কয়েকটি ফেস্টুনে ‘বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল আওয়ামী প্রজন্ম লীগের’ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে শুভেচ্ছা জানিয়ে সংগঠনটির শ্যামপুর থানার আহ্বায়ক দাবিদার মো. শাহিনের ব্যানার-ফেস্টুন দেখা গেছে।

জয়কালী মন্দির মোড়ে দেখা গেছে একই সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি নাসির উদ্দিন ভূইয়ার এবং টিকাটুলী মোড়ে সাধারণ সম্পাদক আল আমিন হাওলাদারের ব্যানার-ফেস্টুন।

‘ডিজিটাল আওয়ামী ওলামা লীগের’ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম পাওয়া না গেলেও তাদের ছবিসহ কয়েকটি ব্যানারে-ফেস্টুনে সংগঠনটির সদস্যদের নাম-ছবি দেখা গেছে।

ফেইসবুকে রয়েছে ডিজিটাল আওয়ামী লীগ, ডিজিটাল ছাত্রলীগ, ডিজিটাল আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের প্রচার।

কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ লেখা থাকলেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে তাদের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

ক্ষমতাসীন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, “আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এদেরকে অনুমোদন দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো হচ্ছে যুবলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও তাঁতী লীগ। এছাড়া ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের স্বীকৃতি রয়েছে ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের।

অনুমোদন না থাকলেও এসব ‘ডিজিটাল সংগঠন’ মাঝে-মধ্যে আলোচনা সভা করলে তাতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিত হতেও দেখা যায়।

আহমদ হোসেন বলেন, “এরা তো আমাদের দলের কথা, আদর্শের কথাই বলে। সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের বাইরে যে কেউ বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলতে পারে।”

এসব সংগঠন আসলে কী করছে- তা নিয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাই চাঁদাবাজির দিকে ইঙ্গিত করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, “দেখেন যত ব্যানার-ফেস্টুন লাগিয়েছে, তার টাকা কোত্থেকে আসে? আর আদর্শের প্রচারের চেয়ে নামের প্রচারই তো বেশি। এই নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন স্থান থেকে সুযোগ-সুবিধা নেয়।”

ব্যানার-ফেস্টুনে নামের প্রচার নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের অনেক দিন ধরে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছেন।

তিনি একবার বলেছিলেন, “আমি সবচেয়ে বেশি ব্যথিত হই বঙ্গবন্ধুর ছবির পাশে চিহ্নিত চাঁদাবাজ-ধান্দাবাজ, টাউট-বাটপাড় লোকদের ছবি দেখলে। বঙ্গবন্ধুর ছবির পাশে এসব ভূমি দখলকারী ও লুটপাটের সাথে জড়িতদের ছবি দেখতে চাই না। আমি নেতাকর্মীদের বলব-এসব ছবি ছিঁড়ে ফেলুন।”

নতুন এই ‘ডিজিটাল সংগঠন’গুলোকে নিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থক পুরনো সংগঠনগুলোরও ক্ষোভ রয়েছে, যদিও ওই সংগঠনগুলোরও দলীয় স্বীকৃতি নেই।

‘বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল আওয়ামী প্রজন্ম লীগ’ নিয়ে এ ধরনের অসন্তোষ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের।

এই সংগঠনের একাংশের সভাপতি রুকনুদ্দিন পাঠান বলেন, “বঙ্গবন্ধুর নামে প্রজন্ম লীগের নাম ব্যবহার করে এরা চাঁদাবাজি ও সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নিতে চাচ্ছে। এরা প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী মুখোশধারী।”

‘ডিজিটাল’ নাম ব্যবহারকারী এসব সংগঠনের সঙ্গে কথা বলতে আর কোনো মাধ্যম না পেয়ে তাদের ফেইসবুক পাতার মাধ্যমে মাস ধরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। বিডিনিউজ24



মন্তব্য চালু নেই