ডাক্তারদের ফাঁকিবাজি ঠেকাতে মাঠে নেমেছে ‘হ্যালো ডাক্তার’!

আগের কলাকৌশল বা পদ্ধতি কাজে দেয়নি। তাই এবার কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা ফাঁকিবাজ ডাক্তারদের আটকাতে সরাসরি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় ‘হ্যালো ডাক্তার’ জাল নিয়ে মাঠে নেমেছে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আশা করছেন এখন থেকে বিনা অনুমতিতে কোনো ডাক্তার কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে কিংবা সময়মতো কর্মস্থলে না এলেই ধরা পড়তে হবে ‘হ্যালো ডাক্তার’ জালে। আর তাৎক্ষণিকভাবেই ওই ফাঁকিবাজ ডাক্তারের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে একদিকে ডাক্তারদের ফাঁকিবাজির সুযোগ ও প্রবণতা যেমন কমে যাবে, অন্যদিকে হাসপাতালে রোগীদের সেবার মান ও পরিধি আরো সুরক্ষিত হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘হ্যালো ডাক্তার’ নামের ওই মনিটরিং সেলের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমাদের জালে ধরা পড়তে শুরু করেছেন ফাঁকিবাজ ডাক্তাররা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অনেকে ধরা পড়েই শুরু করে দেন তদবির; যাতে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া না হয়। আবার প্রভাবশালী অনেকেও তাঁদের পক্ষে তদবির করেন। এমন তদবিরপ্রবণতা বন্ধ না হলে শেষ পর্যন্ত আগের মতো এবারের উদ্যোগও ভেস্তে যেতে পারে।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডাক্তারদের কর্মস্থলে অনুপস্থিতি রোধে হিমশিম খেতে হচ্ছে এই মন্ত্রণালয়কে। মন্ত্রণালয়ের অধীন দুটি অধিদপ্তর- স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ডাক্তারদের অনুপস্থিতি ঠেকাতে দিশাহারা। ফলে নিত্যনতুন কৌশল ও পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হচ্ছে অবাধ্য ও ফাঁকিবাজ ডাক্তারদের জন্য। আগের প্রচলিত পদ্ধতি অনুসারে নিজ নিজ জেলার সিভিল সার্জন, বিভাগীয় পরিচালকও ব্যর্থ হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। কয়েক বছর আগে উপজেলা পর্যায়ের ডাক্তারদের কর্মস্থলে আটকে রাখার কৌশল হিসেবে স্থাপন করা হয়েছিল বায়োমেট্রিক ফিঙ্গার পুশ মেশিন। তাতেও লাভ হয়নি, বরং ওই মেশিনও নষ্ট করে ফেলার অভিযোগ ওঠে। এমনকি মোবাইল ফোন কিংবা ল্যাপটপের মাধ্যমে ইন্টারনেটে ট্র্যাকিং পদ্ধতিও তেমন কাজ দেয়নি। আবার কেবল উপজেলা বা জেলা হাসপাতালই নয়, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোতেও একই সমস্যা বিদ্যমান। এসব হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও ফাঁকি দেন রোগীদের। প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ অন্যরা অহরহ নানা বৈঠক-বক্তব্যে অনুপস্থিতির বিষয়ে সতর্ক করেন ডাক্তারদের। প্রায় প্রতিদিনই অনুপস্থিতির দায়ে কোনো না কোনো ডাক্তারের বিভাগীয় শাস্তিও হচ্ছে। এত কিছুর মাধ্যমে পরিস্থিতি আগের তুলনায় কিছুটা উন্নতি হলেও তা এখনো আশানুরূপ পর্যায়ে পৌঁছায়নি। তাই এবার অবাধ্য ও ফাঁকিবাজ ডাক্তারদের কর্মস্থলে বেঁধে রাখতে সরাসরি মন্ত্রণালয় থেকেই শুরু হয়েছে নতুন আরেক কার্যক্রম। এ ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হচ্ছে ল্যান্ড ফোনে মনিটরিং পদ্ধতি। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘হ্যালো ডাক্তার’।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অধিশাখা সূত্র জানায়, ‘হ্যালো ডাক্তার’ কার্যক্রমের আওতায় ঢাকাসহ দেশের সব এলাকার সর্বস্তরের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকদের অবস্থান তাৎক্ষণিক নিশ্চিত হওয়ার জন্য ল্যান্ড ফোন বা টিঅ্যান্ডটির সংযোগকৃত ফোনকেই মনিটরিংয়ের জন্য বেশি কার্যকর বলে মনে করা হচ্ছে। এ জন্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিংয়ে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের ৬৬ জন কর্মকর্তাকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এসব কর্মকর্তা প্রতি মাসে অন্তত যেকোনো দুই দিন আকস্মিক ল্যান্ড ফোনে নিজের আওতায় থাকা হাসপাতালের যেকোনো চিকিৎসক-কর্মকর্তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন। ফলে কেউ কর্মস্থলের বাইরে থেকেও কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার মতো অসত্য তথ্য দিতে পারবেন না। অবশ্য যেসব কর্মস্থলে ল্যান্ড ফোনের সুবিধা নেই সেগুলোর বিষয়ে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হবে। ‘হ্যালো ডাক্তার’ কার্যক্রম বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও অধিশাখার নামের তালিকাসহ গত ৬ জুলাই একটি অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। প্রশাসন অধিশাখার উপসচিব ফাতেমা রহিম ভীনা স্বাক্ষরিত ওই অফিস আদেশে মন্ত্রণালয়ের কোন কর্মকর্তা কোন কোন হাসপাতাল বা চিকিৎসাকেন্দ্রের ডাক্তারদের উপস্থিতি মনিটরিং করবেন সেই নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই