ডাকাত আসছে, এলাকাবাসী জাগো…

ঘড়িতে তখন রাত একটা। স্থানীয় মসজিদের মাইক থেকে হঠাৎ ঘোষণা আছে ‘ডাকাত আসছে, এলাকাবাসী জাগো, এলাকাবাসী জাগো…।’ এমন ঘোষণায় ঘুম থেকে ধড়ফড় করে উঠে গ্রামবাসী। সবাই লাঠিসোটা নিয়ে বের হয় ঘর থেকে। চারদিক থেকে মুঠোফোনে কল আসতে থাকে। রাস্তায় গিয়ে সশস্ত্র অবস্থান নেয় গ্রামবাসী।

প্রতিরাতেই এমন দৃশ্যের অবতারণা হয় চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সুজাতপুর বাজার, ছেংগারচর বাজার, আনন্দ বাজার, ষাটনল, নাউরী, লুধুয়া, লালপুরসহ বিভিন্ন এলাকায়। ডাকাত আতঙ্কে রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে এসব এলাকার নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধা সকলের। গভীর রাতে স্থানীয় মসজিদ থেকে ডাকাত আসার মাইকিংয়ে ঘুম ভেঙে যাচ্ছে। ডাকাত প্রতিহত করতে লাঠি-সোটা নিয়ে লোকজন বেরিয়ে আসছে রাস্তায়। এরপর সারারাত পাহারায় থাকতে হচ্ছে। আর এভাবেই কেটে যাচ্ছে মতলব উত্তর উপজেলাবাসীর রাত।

কিছুক্ষণ পর-পরই খবর আসে উপজেলার পূর্ব দিক থেকে ডাকাত আসছে, কখনো খবর আসে পশ্চিম দিক থেকে। কখনো উত্তর দিক, কখনো দক্ষিণ দিক থেকে আসছে। কিন্তু এলাকাবাসী রাতভর জেগে পাহারা দিলেও ডাকাতের সন্ধান মিলেনি।

ছেংগারচর পৌর বাজার বণিক সমবায় সমিতির সম্পাদক ইবনাল মঈন আহমেদ রিপন ও সুজাতপুর বাজারের ব্যবসায়ী শাখাওয়াত হোসেন সরকার মুকুল জানান, বিভিন্ন এলাকায় ডাকাত এসেছে এমন মাইকিং শোনার পর আমরা রাতভর এলাকাবাসী নিয়ে পাহারা দিয়েছে।

মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন বলেন, ঈদ সামনে রেখে ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আমরা বিভিন্ন এলাকায় টহল জোরদার করেছি।

এদিকে, মতলব উত্তর উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের চান্দ্রাকান্দিতে মেঘনার শাখা নদী দিয়ে গত ১৩ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে ট্রলারে করে যাওয়ার সময় ডাকাত সন্দেহে ৯ সিকিউরিটি গার্ডকে মারধর করে জনতা। এ ঘটনায় সিকিউরিটি গার্ড প্রতিষ্ঠান থ্রি এঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের একনলা একটি বন্দুক ও ৮ রাউন্ড গুলি হারিয়ে যায়।

মতলব উত্তর থানা পুলিশ খবর পেয়ে এসআই মিজানুর রহমান সরকারের নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে ওসি মো. কবির হোসেনও সেখানে অতিরিক্ত ফোর্স নিয়ে যান। আহতদের জনতার হাত থেকে রক্ষা করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামান ও এএসপি (হেড কোয়ার্টার) শাকিল আহমেদ ঘটনার তদন্ত করে থ্রি এঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের ডিএমডির জিম্মায় তাদের দেয়া হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামান জানান, মতলব উত্তরে কয়েকদিন ধরে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে, প্রতিহত করতে আমরা চেষ্টা করছি। এ বিষয়টি ছিল ভুল বুঝাবুঝি। এ ধরনের পরিস্থিতিতে আইন নিজের হাতে তুলে না নিতে আহ্বান জানাবো। এমন কিছু হলে পুলিশকে খবর দিতে হবে।

এসপি আরো বলেন, মসজিদের মাইক যত্রতত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। মসজিদের মাইক নামাজের আজান দেয়ার জন্য। কাউতে বিভ্রান্ত করার জন্য নয়।



মন্তব্য চালু নেই