ট্রেনে বিনা টিকিটে রেলকর্মী, এসে পড়লেন চেকার! অতঃপর…

চেকার ওই যাত্রীর কাছে টিকিট চাইতেই ম‌েজাজ দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি রেলকর্মী।’’ চেকার বলেন, তাতে কী! টিকিট কাটেননি কেন? যাত্রী বিতণ্ডা শুরু করেন চেকারের সঙ্গে। তাঁর বক্তব্য, তিনি টিকিট না কেটে এমন কিছু অপরাধ করেননি।

রেলের যাঁরা নিত্যযাত্রী তাঁরা এমনটা তো কতবার ঘটতে দেখেছেন। বিনা টিকিটে ট্রেনে উঠে পড়েছেন কোনও যাত্রী। তারপর টিকিট চেকার বা টিটিই (ট্রেন টিকিট এক্সামিনার)-এর দেখাই নেই গোটা যাত্রাপথে। ফলে টিকিটিহীন যাত্রী দিব্যি নিশ্চিন্ত নির্ঝঞ্ঝাট যাত্রা সেরে নেমে গেলেন গন্তব্যে। সেই স্টেশনেও নিজের ভূমিকায় নেই টিকিট পরীক্ষক। ফলে অসুবিধা হল না স্টেশন থেকে বেরিয়ে যেতেও। আর যদিও-বা টিকিট চেকার এসেই পড়েন দৈবাৎ, তাহলেও তাঁর হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিলেই হল।

সন্তুষ্ট হয়ে চলে যাবেন চেকার। এমনটা হরদম ঘটে বলেই ট্রেনের যাত্রীদের মধ্যে একটা বড় অংশের মধ্যে এখনও টিকিট না কেটেই ট্রেন যাত্রা সারবার একটা প্রবণতা রয়ে গিয়েছে। কিছুদিন আগে ইসলামপুর ও দিল্লির মধ্যে গতায়াতরত মগধ এক্সপ্রেসের এক যাত্রীও তেমনই অভ্যাসে অভ্যস্ত ছিলেন। উপরন্তু তিনি আবার ভারতীয় রেলেরই কর্মী। স্বভাবতই তিনি প্রয়োজনই বোধ করেননি টিকিট কাটার।

পছন্দ অনুযয়ী জায়গা বেছে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন সুবিধামতো। সেই সময় আচমকাই এসে পড়েন টিটিই। ওই যাত্রীর ধারণা ছিল, আর পাঁচটা টিটিইর মতো এঁকেও নিজের রেলকর্মী পরিচয়টুকু দিয়ে ‘বন্দোবস্ত’ করে নেওয়া যাবে। কিন্তু ওই যাত্রী জানতেন না, এই টিকিট চেকার অন্য ধাতুতে গড়া।

চেকার ওই যাত্রীর কাছে টিকিট চাইতেই ম‌েজাজ দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি রেলকর্মী।’’ চেকার বলেন, তাতে কী! টিকিট কাটেননি কেন? যাত্রী বিতণ্ডা শুরু করেন চেকারের সঙ্গে। তাঁর বক্তব্য, তিনি টিকিট না কেটে এমন কিছু অপরাধ করেননি। অন্যদিকে চেকারও অনড়। তিনি সরসভাবে কথা বলে ওই যাত্রীকে বুঝিয়ে দেন যে, তিনি অন্যায় করেছেন। ক্ষুব্ধ যাত্রীর সঙ্গে মৃদু হাতাহাতিও হয় তাঁর।

কিন্তু চেকার তাঁর নৈতিক অবস্থান থেকে সরবেন না। রেলকর্মী হওয়ার সুবাদে তিনি বড়জোর ‘ফাইন’ থেকে অব্যাহতি দিতে পারেন ওই যাত্রীকে, কিন্তু বিনা টিকিটে যাত্রা করা যাবে না। অর্থাৎ ট্রেন থেকে নেমে যেতে হবে ওই যাত্রীকে। রেলকর্মী-যাত্রী বেশি হম্বিতম্বি শুরু করায় চেকার বলেন, তিনি যদি ট্রেন থেকে নেমে না যান, তাহলে তিনি আর এগোতেই দেবেন না ট্রেন। চেকারের অনড় মনোভাব দেখে স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেন থেকে নেমে যেতে বাধ্য হন ওই যাত্রী।

চেকারের এই আচরণ এতটাই ব্যতিক্রমী লেগেছিল ওই ট্রেনেরই আর এক যাত্রী কমল কান্তের যে, তিনি পুরো ঘটনাটি নিজের মোবাইলের ক্যামেরায় বন্দী করে ফেলেন। তারপর শেয়ার করেন সোশ্যাল নেটওয়ার্কে। শেয়ার করার পরেই ভাইরাল হয়ে যায় এই ভিডিও। প্রশংসার ঢেউ বহে আসতে শুরু করে ওই চেকারের প্রতি। তাঁর কর্তব্যপরায়ণতাকে কুর্নিশ জানান সকলেই।

দেশ জোড়া দুর্নীতির বাজারে এহেন নিষ্ঠাবান একজন রেলকর্মী সকলেরই শ্রদ্ধা আদায় করতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই টিকিট চেকারের নামটা উল্লেখ করতে পারেননি কমল। তা না পারুন, তিনি নিজের কর্তব্যে একইভাবে অবিচল থাকবেন, এই আশা তো করাই যায়।



মন্তব্য চালু নেই