ট্রাম্প রাশিয়ার প্রতি অন্ধ !

ক্ষমতা গ্রহণের আগে ধারাবাহিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ইন্টেলিজেন্স বিভাগকে কটাক্ষ করে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার সিআইএ ও এফবিআইসহ গোয়েন্দা দপ্তরগুলোর উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দলের সম্মিলিত ইন্টেলিজেন্স ব্রিফিং দেওয়ার কথা ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। বিষয় নির্বাচনে রাশিয়ার সাইবার হ্যাকিং আর ভবিষ্যতের জাতীয় নিরাপত্তা। সেই ব্রিফিংটি শুক্রবার পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে কেন সেটা জানতে চেয়ে টুইট করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে তিনি বলছেন, ‘কথিত রাশিয়ান সাইবার হ্যাকিং সম্পর্কিত ইন্টেলিজেন্স ব্রিফিংটি শুক্রবার পর্যন্ত পেছানো হয়েছে, সম্ভবত গল্প ফাঁদতে তারা আরো প্রস্তুতি চান, অদ্ভুত!’

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই টুইট বার্তায় নতুন ভাবে চিন্তায় পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিশ্লেষক আর সিনিয়র সিনেটররা। ভাবখানা এমন যে, পাগলটা বলে কি! সেকি যুক্তরাষ্ট্রের মূল অঙ্গ, নিরাপত্তা গোয়েন্দা দফতরের সঙ্গে বিরোধে জড়াতে চায়? সিএনএন বলছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প গোয়েন্দা দফতরের ক্ষমতা এবং প্রভাব কমাতে চায় বলে, তারা ট্রাম্পের কাছের সংবাদসূত্র থেকে খবর পাচ্ছে।

এসব ধারণা বা বিশ্বাসের যথেষ্ট কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই দিচ্ছেন তার নানা প্রতিক্রিয়ায়। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বা গোয়েন্দা দফতরের শত্রু বিবেচিত উইকিলিকস (যারা ডেমোক্রেট দলের সার্ভার হ্যাক করা তথ্য ফাঁস করেছে) এর প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের কথাকেই ঠিক ধরে টুইট করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে আনতে কূটনৈতিক যুদ্ধ চালাচ্ছে। তার একটি সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়েছে রিপাবলিকান দলের প্রচার মাধ্যম ফক্সনিউজে। সেখানে অ্যাসাঞ্জ পরিষ্কার করে বলেছেন, তার যেসব তথ্য তিনি ফাঁস করেছেন সেটা রাশিয়া তাকে সরবরাহ করেনি। ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই বার্তাকেই সামনে নিয়ে এসে টুইট করেছেন, ভাবখানা এমন, দেখ জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ পর্যন্ত বলছে রাশিয়া হ্যাকিংয়ের সঙ্গে জড়িত নয়।

এসব আলোচনায় মহাক্ষমতাধর যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আর গোয়েন্দা সক্ষমতা বার্তাদের অবস্থান নিয়ে বলা চলে একের পর এক মলাট উল্টিয়ে ফেলার চেষ্টা করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যেই দল থেকে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন সেই দলের সিংহ ভাগ সিনিয়র সিনেটর রাশিয়াকে কড়া অবরোধ ঘোষণায় কাজ করছেন, যেটা ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পরে তার প্রশাসন দিয়েই বাস্তবায়ন করাতে চান। সাবেক ভিয়েতনাম যোদ্ধা, ২০০৮ এ প্রেসিডেন্ট ওবামার প্রেসিডেন্সিয়াল প্রতিদ্বন্দ্বি জন ম্যাককেইন, সিনেটে রিপাবলিকান দলের প্রধান মিচ ম্যাকার্নাল আর সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামরা মিলে গেল সপ্তাহে বার বার বলেছেন রাশিয়াকে তার মাশুল গুনতে হবেই। ওবামা যে অবরোধ আরোপ করেছেন কূটনৈতিক বহরকে বহিষ্কার করে সেটা যথেষ্ট নয় বলেই তারা বলছেন। অন্যদিকে তাদের দলের প্রেসিডেন্ট রাশিয়া আর পুতিন প্রেমে মগ্ন। এমন মগ্ন যে নিজ দেশের গোয়েন্দাদের তথ্যকেও বিশ্বাস করছেন না তিনি। নির্বাচনে রাশিয়ার প্রভাব নিয়ে ১৭ গোয়েন্দা সংস্থা সম্মিলিত প্রতিবেদন দেওয়ার পরই গেল সপ্তাহে ওবামা যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করা রাশিয়ার ৩৫ কূটনীতিককে ৩ দিনের মধ্যে দেশত্যাগের নির্দেশ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়া বিরোধকে প্রকাশ্যে এনেছেন।

রাশিয়াকে শায়েস্তা করতে বদ্ধপরিকর, সিনেটরদের মধ্যে অন্যতম সাবেক প্রেসিডেন্সিয়াল প্রার্থী সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম তাই বলছেন, ট্রাম্প রাশিয়া প্রশ্নে অন্ধ, এটা প্রকাশ্য হয়ে গেছে’। সিএনএন এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে গ্রাহাম বলছেন, ‘ট্রাম্প সবই বুঝেন। চীন কিভাবে সমস্যা সৃষ্টি করছে, ইরানের নিউক্লিয়ার চুক্তি ভালো না, প্রভৃতি প্রশ্নে তিনি যেটা বুঝেন, রাশিয়ার প্রশ্ন আসলে তিনি অন্ধ হয়ে যাচ্ছেন কেন সেটা তার বোধগম্য নয়’। রাশিয়ার সহযোগিতায় ট্রাম্প জয়ী হননি উল্লেখ করে গ্রাহাম বলছেন, ‘তাকে বুঝতে হবে আজ ডেমোক্রেট দল আর হিলারিকে বাটে ফেলে হেনস্থা করছে রাশিয়া, আগামীকাল রিপাবলিকান দলকে করতে পারে সেটা। তাই রাশিয়াকে থামাতে রিপাবলিকান দল আরো কঠোর অবরোধ বাস্তবায়ন করবে বলে অঙ্গীকার করেছেন গ্রাহাম।

এদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প মনোনীত তার রাশিয়াপন্থী সেক্রেটারি অফ স্টেট বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী, তেল ব্যবসায়ী রেক্সতিলার সন ক্যাপিটাল হিলে দেখা করেছেন, সিনেটে সংখ্যা গরিষ্ঠ দল রিপাবলিকান পার্টির নেতা মিচ ম্যাকার্নাল এর সাথে। মন্ত্রী নিয়োগের ঘোষণা আসলেও তিলারসনকে সিনেটে শুনানির মাধ্যমে তার নিয়োগ চূড়ান্ত হতে হবে, যেই নিয়োগের বিরোধিতা করছেন মিচম্যাকার্নাল সহ সিনিয়র প্রায় সব সিনেটর। এই বৈঠক সেই শুনানির বিষয়ে, রাশিয়ার সঙ্গে তিলারসনের সম্পর্ক আর যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থরক্ষায় তার ভূমিকা কী হবে সেসব বিষয়ে বোঝাপড়ার একটি ক্ষেত্র বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। উল্লেখ্য, তিলারসন তার নিয়োগ ঘোষণার পর এই প্রথম সামনে এলেন তবে এই বৈঠক আর বৈঠকের বিষয় বস্তু নিয়ে কোনো পক্ষই গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেননি।



মন্তব্য চালু নেই