ট্রাম্প প্রশাসনের আরেকটি ’উইকেট’ পড়ার অপেক্ষায়?

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুধু কট্টর সমর্থন দানকারী নয়; কেবিনেট বা মন্ত্রিসভায় তার ডান হাত আর বাম হাত বলে যদি দুজনের নাম আসে তার একটি ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেনারেল মাইকেল ফ্লিন। রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বেঠকে অবরোধ উঠিয়ে নেওয়ার আগাম প্রতিশ্রুতির কথা বলে তা অস্কীকার করেছিলেন। সেই তথ্য ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির মাধ্যমে ফাঁস হয়ে গেলে তাকে সরে যেতে হয়েছিল। তিনি ছিলেন ট্রাম্পের কথিত বাম হাত।

এখন মন্ত্রিসভায় ট্রাম্পের ডান হাত বলে পরিচিত, মাত্র কিছুদিন আগে নিয়োগ সম্পন্ন হ্ওয়া অ্যাটর্নি জেনারেল বা আইনমন্ত্রী জেফ শেসনস এর উইকেটটি দূর্বল হয়েছে সেই একই রাশিয়া কানেকশনকে কেন্দ্র করে। আলাবামার এ সিনেটর এর নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়েছে অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে। তার বিরুদ্ধে মার্টিন লুথার কিং এর বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় বর্ণবাদী আচরণের স্পষ্ট অভিযোগ তুলে রেখেছেন স্বয়ং মার্টিন লুথার কিংয়ের স্ত্রী। ডেমোক্রাট দল তার নিয়োগ ঠেকাতে সর্বোচ্চ প্রতিবাদই করেছিল।

নির্বাচন চলাকালে তিনি রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করেছিলেন। এ তথ্য ফাঁস হয়েছিল অনেক আগেই কিন্ত তিনি তা লুকিয়েছিলেন। সম্প্রতি এ বৈঠকের তথ্য আর প্রমাণ ফাঁস হওয়ার পর রাশিয়ার প্রভাব সর্ম্পকিত সব তদন্ত প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস অফিসের সংবাদ সম্মেলনে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘হয়তো সিনেট শুনানির সময় আমি ঠিকমতো প্রশ্নটি শুনতে পাইনি। নাহলে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই।’

‘রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত তার এক স্টাফকে পাঠিয়েছিলেন আমার অফিসে। আমি একটি দিন তারিখ ধার্য করে বৈঠক করি। সে বৈঠকে কোনো রাজনৈতিক আলোচনা হয়নি। দু’জন সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মানুষের সামনেই কথা হয়েছিল আমাদের’ ব্রিফিং এ জানাচ্ছিলেন জেফ সেশনস।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, একজন সিনেটর হিসেবে একটি দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক হওয়াটা দোষের কিছু নয়, তবে দোষ তখনই যখন সেটি সর্ম্পকিত সিনেট কমিটির শুনানিতে প্রশ্ন করা হলে তা এড়িয়ে যাওয়া হয় অথবা অস্বীকার করা হয়। সেশন এ ব্রিফিংয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে একবার বৈঠক করার কথা স্বীকার করলেও বাস্তবে প্রমাণ হচ্ছে তিনি ডেমোক্রাট দলীয় কনভেনশনের আগে একবার এবং অন্যটি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প নির্বাচিত হ্ওয়ার পর আরো একবার রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। তার বেশ পরই তার মন্ত্রিত্ব ঠিক হয়। সিনেটে অনেকদিন তার মনোনয়ন চূড়ান্তকরণ ঝুলে ছিল ডেমোক্রাট দলীয় সিনেটরদের প্রবল আপত্তির কারণে। নিজে একজন সিনেটর হয়েও সহকর্মী অন্য ডেমোক্রাট দলীয় সিনেটরদের প্রশ্নের সম্মুখিন হয়েছিলেন এবং বাইবেল এ শফৎ নিয়ে সত্যা কথা বলার ওয়াদা করলেও তিনি তখন রাশিয়ার সংশ্লিষ্টতা এড়িয়ে গিয়েছিলেন। রাশিয়ার সাথে বৈঠক প্রশ্নে জানুয়ারির ১০ তারিখে অনুষ্ঠিত সিনেট শুনানিতে সিনেটর আল ফ্রাঙ্কেন তাকে স্পষ্টতই এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন।

জেফ সেশনের রাশিয়া সংশ্লিষ্টতা নিয়ে বিব্রত সিনিয়র রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা। যদিও তারা প্রকাশ্যে বলছে, এটা নিয়ে ডেমোক্রাট আর মেইনস্ট্রিম মিডিয়া আবার মাঠ গরমের চেষ্টা করছে। একটা বড় অংশ প্রকাশ্যেই দাবি তুলেছিলেন, সেশন যেন ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস বা ন্যায়বিচার দপ্তরের যাবতীয় অনুসন্ধান আর তদন্ত প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। সিনিয়র আইন প্রণেতাদের চাপে নিজেকে তদন্ত প্রক্রিয়া থেকে গুটিয়ে নিতে বেশি সময় নেননি পতনের অপেক্ষায় থাকা জেফ সেশনস। তবে শুধু তদন্ত প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নয় ডেমোক্রাট দল। জেফ সেশনের পদত্যাগের দাবিতে ব্যাপক প্রতিবাদ আর আন্দোলনের দিকে যাচ্ছে দলটি। সিনেটে ডেমোক্রাট দলীয় নেতা নিউইয়র্ক সিনেটর চাক শুমার বলছেন, আইনমন্ত্রী হিসেকে তার আর পদে থাকার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। কেননা সিনেট শুনানিতে তিনি রাষ্ট্রের সঙ্গে সত্য না লুকানোর ওয়াদা করেছিলেন, কিন্তু বাস্তবে তিনি মিথ্য কথা বলেছেন। এমন ব্যক্তির অন্তত ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের পদে থাকার কোনো কারণ নেই।

এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিতর্কের মধ্যে থাকতেই নতুন বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন তার বড় ছেলে ট্রাম্প জুনিয়র। রাশিয়াপন্থী ফ্রান্সের একটি প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি অন্তত ৫০ হাজার ডলার গ্রহণ করেছেন। বৃহস্পতিবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এমন খবর প্রকাশ করেছে। গেল অক্টোবর মাসের ১১ তারিখে প্যারিসের রিজ হোটেলে সিরিয়া বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন জুনিয়র ট্রাম্প।

অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল সেন্টার ফর পলিটিক্যাল অ্যান্ড ফরেন অ্যাফেয়ার্স। এর প্রতিষ্ঠাতা ফাবিয়ান বাজার্ত। তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ জন বলে পরিচিত। প্রতিষ্ঠানটি সিরিয়ায় রাশিয়ার নীতির পক্ষে কৌশলগত আলোচনা করছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল সিরিয়ায় যুদ্ধ বিরতি যেখানে রাশিয়া কূটনৈতিক সফলতা পাবে। রাশিয়া সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পক্ষ নেয়। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ছিল বিদ্রোহীদের পক্ষে। গেল ডিসেম্বর মাসে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদানের আহ্বান জানান।



মন্তব্য চালু নেই