ট্রাম্প-নেতানিয়াহু ‘হানিমুন’ শেষ!

ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ায় উল্লসিত ছিলেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তার কোয়ালিশন সরকার ৮ বছর পর প্রথমবারের মতো হোয়াইট হাউসে একজন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পেলেন। মার্কিন কংগ্রেসের হাউস ও সিনেটেও ডানপন্থী রিপাবলিকানদের আধিপত্য। নেতানিয়াহুর কট্টর ডানপন্থী সরকারের জন্য নতুন মার্কিন সরকারকে ‘খাপে খাপ মিলন’ মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু মাত্র দু’মাসের মধ্যেই নেতানিয়াহু-ট্রাম্পের হানিমুন ‘সাংসরিক কলহে’ রূপ নিয়েছে।

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী ভেবেছিলেন, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে অবৈধ বসতি স্থাপনে এখন আর কারও নিন্দা শুনতে হবে না। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আট বছরের শাসনে রুটিনমাফিক এ বকাঝকা শুনতে হয়েছিল নেতানিয়াহুকে। ট্রাম্প আসায় আর ভয় নেই! এখন বিনা বাধায় ইচ্ছামতো অবৈধ বসতি স্থাপন করা যাবে! ট্রাম্পের শপথের ১০ দিনের মাথায় পশ্চিম তীরের মিউনিসিপ্যাল এলাকায় গত দুই দশকে প্রথমবারের মতো ৬ হাজার নতুন বসতি স্থাপন অনুমোদন করে ইসরাইল।

ওয়াশিংটনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রথম যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু প্রশংসায় বন্যা বইয়ে দেন। তিনি বলেন, ইহুদি জনগণ ও ইহুদি রাষ্ট্রের জন্য ট্রাম্পের মতো বড় কোনো সমর্থক নেই। হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারাও বসতি স্থাপনের পক্ষে কথাবার্তা বলেন। রামাল্লার বাইরে বসতি স্থাপনবিষয়ক কমিটির মুখপাত্র শাইম সিলবারস্টেইন বলেন, আমি মনে করি তিনি (ট্রাম্প) ইসরাইলকে ভালোবাসেন। এটা বাইবেলের প্রাণকেন্দ্র। ইসরাইলের শিক্ষামন্ত্রী ও উগ্র ডানপন্থী জিউ হোম পার্টির প্রধান নাফাতালি বেনেট মার্কিন নির্বাচনের পর ঘোষণা দিয়েছিলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অধ্যায় এখানেই শেষ!

তবে ক্ষমতা নেয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরাইল ইস্যুতে আবেগী কথাবার্তা ছেড়ে দিয়েছেন। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি থাকলেও তেলআবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা থেকে সরে দাঁড়ান। আর প্রকাশ্যেই ইসরাইলের অবৈধ বসতি স্থাপনের সমালোচনা করে বলেন, সেটা ‘শান্তির জন্য ভালো হবে না’। এমনকী হোয়াইট হাউস বৈঠকে ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে বসতি স্থাপন আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ট্রাম্প জানিয়েছেন, এখন ‘চূড়ান্ত শান্তিচুক্তি’ করার সময় এসেছে। রোববার আমেরিকান ইসরাইল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটির বার্ষিক সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স সেখানে যোগ দিচ্ছেন। তার আগে বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বসতি স্থাপনের ব্যাপারে উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তবে তিনি একটি শান্তিচুক্তির কথা ভাবছেন।’ এমন প্রেক্ষাপটে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু পড়েছেন উভয় সংকটে। তার জোট সরকারের মিত্র দল জিউ হোম পার্টি এমনকি নিজের দল লিকুদ পার্টি দ্বিরাষ্ট্রিক সমাধান পরিকল্পনা ছুড়ে ফেলার চাপ দিচ্ছে। আর হোয়াইট হাউসের চাপ নতুন শান্তি প্রক্রিয়ার উপায় খোঁজার। একই সঙ্গে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে একটি দুর্নীতি মামলার তদন্ত চলছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে নতুন নির্বাচনের মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে। নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘এ সরকারের মতো আর কেউ বসতি স্থাপনবান্ধব হবে না।’ তবে ইন্সটিটিউট অব ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজের প্রধান গবেষক এহুদা বেন মেইর বলেন, ‘আমি মনে করি, ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরাইল সরকারে যোগ দিচ্ছেন না। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং সারা দুনিয়ায় ওয়াশিংটনের স্বার্থ জড়িত।’

ইসরাইলের জাতীয় দৈনিক হারেজ পত্রিকার সিনিয়র কলামিস্ট শেমি শালেভ বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি সত্যিকার শান্তি চুক্তিতে আগ্রহী। তিনি এটাকে ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন।’

এখন শান্তি চুক্তি হতে গেলে সবকিছুই ইসরাইলের মনমতো হবে না। অন্যদিকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নেতানিয়াহুর সরকার রয়েছে। কিন্তু অনেকের মতে, তার আগেই সরকার ভেঙে যেতে পারে।



মন্তব্য চালু নেই