ট্রাম্পের মন্ত্রিসভায় ট্রাম্প বিরোধী মিট রোমনি!

ট্রাম্পের মন্ত্রিসভায় সেরা চমকের নাম কি হতে যাচ্ছে মিট রোমনি? আপাত ভাবে যতই অবিশ্বাস্য মনে হোক না কেন , এবারের নির্বাচনের অনেক অভূতপূর্ব ঘটনার মতোই হয়তো এই বিষয়টাও সত্যি হয়ে যাবে। অন্তত সে রকমই জল্পনায় এখন সরগরম মার্কিন মুলুক।

রিপাবলিকানদের তরফে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী নির্বাচনে মনোনয়নের দৌড়ে ছিলেন রোমনিও। ট্রাম্প এবং তাঁর মধ্যে সম্পর্ক আদায় কাঁচকলায় বললেও বোধহয় সে সময় কম বলা হত৷ প্রকাশ্যেই পরস্পরের বিরুদ্ধে রীতিমতো ফুঁসতে দেখা গিয়েছে দু’জনকে।

তাঁদের পারস্পরিক বিদ্বেষ, কাদা ছোড়াছুড়ি, তরজা যেন শেষই হতে চাইত না। সেই রোমনি যে ট্রাম্প মন্ত্রিসভার মুখ হতে পারেন, অতি বড় রিপাবলিকান সমর্থকও এমন কথা ভাবার সাহস পাননি৷ বরং ট্রাম্প যাঁকে ‘চোক আর্টিস্ট’ আখ্যা দিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরেও তাঁর সঙ্গে তলায় তলায় শত্রুতা জারি থাকবে, এমন আশঙ্কা ছিল প্রবল।

কিন্তু অঘটনের নির্বাচনে আরও একটা মোড় ফেরানো ঘটনা বোধহয় অপেক্ষায় রয়েছে৷ নিউ জার্সির বেডমিনস্টারে রোমনির সঙ্গে প্রেসিডেন্ট-ইলেক্টের বৈঠকের আগে এমন গুঞ্জন ভেসে আসছে ট্রাম্প -ঘনিষ্ঠদের মধ্যে থেকেই৷

সিএনএন-কে দেয়া একটি সাক্ষাত্কারে রোমনি এক সময় বলেছিলেন, ট্রাম্পের জয় মানে হবে গোটা মার্কিন সমাজে জাতিবিদ্বেষ এবং গোঁড়ামি চুঁইয়ে পড়া। সেই রোমনি যে আদৌ এক সময়ের ঘোরতর শত্রুর সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলতে রাজি হয়েছেন, এতেই বিস্ময়ের সীমা নেই অনেকের৷

তার উপর একটি সূত্র আবার দাবি করেছে, ম্যাসাচুসেটসের প্রাক্তন গভর্নর রোমনি নাকি ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করবেন সেক্রেটারি অফ স্টেটসের দায়িত্ব সামলানো নিয়ে৷ অর্থাত্, মার্কিন মন্ত্রিসভার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ বলা হয় যেটিকে , সেই বিদেশ সচিবের (আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে যা বিদেশমন্ত্রীর পদমর্যাদার সমতুল) পদে দেখা যেতে পারে রোমনিকে।

ট্রাম্পের প্রাক্তন প্রতিদ্বন্দ্বীর ঘনিষ্ঠ শিবির অবশ্য ঠিক খোলসা করে বলছে না, মার্কিন কূটনীতির ভার নেয়া নিয়েই বেডমিনস্টারের বৈঠকে কথা হবে কি না৷ তবে সম্ভাবনাটা একেবারে উড়িয়েও দিচ্ছেন না তাঁরা। আর সে জন্যই জল্পনার আঁচ ক্রমশ বাড়ছে৷ ওয়াকিবহাল মহলের মতে, অভাবনীয় এই ঘটনাটা যদি সত্যি হয়, তাহলে ওবামার বিদেশ সচিব হিসেবে হিলারির নিয়োগও তার পাশে নেহাত বিবর্ণ, ম্যাড়মেড়ে হয়ে যেতে বাধ্য।

কিন্তু কেন এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা ভাবছেন ট্রাম্প? নিছক চমক, নাকি অন্য কিছু? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কৌশলে দলের মধ্যে তাঁর বিরোধীদের শান্ত করার একটা চেষ্টা চালাচ্ছেন ট্রাম্প৷ রোমনি হলেন এমন এক ব্যক্তিত্ব, যিনি মার্কিন রাজনীতির পরিভাষায় ‘ইনসাইডার’৷ অর্থাৎ, দীর্ঘদিন ধরে যাঁর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা রয়েছে৷ ট্রাম্পের মতো আনকোরা নন মোটেই৷

তাঁকে বিদেশ সচিবের দায়িত্ব দিলে রিপাবলিকানদের যে অংশটা ট্রাম্পের নেতৃত্ব নিয়ে সন্দিহান, তাঁদের কিছুটা আশ্বস্ত করা যাবে৷ আবার এই ক্ষেত্রে চরমপন্থী অবস্থান থেকে সরে এলেও নিজের সমর্থকদের কাছে অপ্রিয় হওয়ার ঝুঁকি থাকছে না৷ কারণ, ট্রাম্পের যাঁরা মূল সমর্থক, কূটনীতি নিয়ে তাঁদের বড় একটা মাথাব্যথা নেই৷

জাতীয় নিরাপত্তার দায়িত্বে তিন কট্টরপন্থীকে বসিয়ে সমর্থকদের এমনিতেই খুশি রাখবেন ট্রাম্প৷ আর রোমনিকে নিয়োগ করলে বড় কোনও রাজনৈতিক ক্ষতি ছাড়াই একই সঙ্গে দলের মধ্যপন্থী ও রক্ষণশীল শিবিরের কাছে ইতিবাচক বার্তা যাবে।-এই সময়



মন্তব্য চালু নেই