ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ বিশ্বখ্যাতরা

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাধর দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাই দেশটির অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্র সম্পর্কিত সকল সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়ে পুরো বিশ্বে। ক্ষমতাধর হওয়ার কারণে ইচ্ছে করলেই যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না দেশটি। অবাধ গণতন্ত্র ও উন্নত নৈতিকতার সূতিকাগাড় বলা হয় যুক্তরাষ্ট্রকে। ট্রাম্প যুগে প্রবেশের পরে এখন সবচেয়ে বড় হোঁচট খেতে যাচ্ছে সেই ঐতিহ্য। শরণার্থী ইস্যুতে মার্কিন মুল্লুক পেড়িয়ে প্রতিবাদে সামিল হচ্ছেন বিদেশিরাও। ট্রম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমেছেন বিখ্যাতরা। কেউ সরাসরি, কেউ অনলাইনে। স্ব-স্ব ক্ষেত্রে বিশ্বখ্যাতি সম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম যুক্ত হয়ে তালিকার সংখ্যা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে ।

তাদের মধ্যে কয়েকজন হচ্ছেন:

মার্ক জুকারবার্গ: বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। শুধু প্রতিবাদ নয় ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছেন তিনি। বিবৃতিতে ট্রাম্পের নতুন নির্বাহী আদেশ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন। জাকারবার্গ জানান, তার প্রো-পিতামহরা জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও পোল্যান্ড থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন এবং তার স্ত্রীর বাবা-মা চীন ও ভিয়েতনামের অভিবাসী।

বিবৃতিতে জাকারবার্গ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসীদের দেশ, এবং আমাদের তা নিয়ে গর্বিত হওয়া উচিত। আমাদের উচিত শরণার্থী এবং যাদের সহায়তা দরকার তাদের জন্যও আমাদের দুয়ার খোলা রাখা। সেটাই আমাদের বৈশিষ্ট্য। কয়েক দশক আগে যদি আমরা শরণার্থীদের তাড়িয়ে দিতাম তবে প্রিসসিলার (জাকারবার্গের স্ত্রী) পরিবার আজ এখানে থাকতো না।

যেসব অনিবন্ধিত অভিবাসী শৈশবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে তাদেরকে কাজের সুযোগ দিতে বারাক ওবামা যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন তা ট্রাম্প পাল্টে দেবেন না বলে আশা প্রকাশ করেছেন জাকারবার্গ।

মালালা: সর্বকনিষ্ঠ নোবেল বিজয়ী ও পাকিস্তানের মানবাধিকার কর্মী মালালা ইউসুফ জাই। ২০১৪ সালে তিনি শান্তিতে নোবেল পান। বর্তমানে ব্রিটেনে বসবাস করছেন পাকিস্তানে তালেবান হামলায় বেঁচে যাওয়া মালালা।

এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে আদেশ দিয়েছেন তাতে তার হৃদয় ভেঙে গেছে। এটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক যুদ্ধ ও সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা শিশু, মা ও বাবাদের জন্য দরজা বন্ধ করে দিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

মালালা বলেন, আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি যে, শরণার্থী ও অভিবাসন প্রত্যাশীদেরকে স্বাগত জানানোর গর্বিত ইতিহাস থেকে আমেরিকা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ন্যায্য পাওনার বিনিময়ে নতুন জীবনের সুযোগ পেতে যারা আপনার দেশ গঠনে সহায়তা করবে এবং কঠোর পরিশ্রম করতে প্রস্তুত আছে।
শরণার্থী ও অভিবাসী যারা যুক্তরাষ্ট্রকে গড়তে সহায়তা করেছে, যারা সুন্দরভাবে জীবন কাটানোর সুযোগ পাওয়ার বিনিময়ে কঠোর পরিশ্রম করতে প্রস্তুত রয়েছে-তাদেরকে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের গৌরবের ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু এখন তা থেকে দেশটি সরে আসছে বলেও উল্লেখ করেন মালালা।

সিনেটের চাক শুমার: ডেমোক্র্যাট দলীয় নেতা ও আমেরিকার সিনেট সদস্য হচ্ছেন চাক শুমার। তিনিও এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমেরিকা প্রতিষ্ঠার পর থেকে যে ঐতিহ্যটি বিদ্যমান রয়েছে তা সরিয়ে নেওয়ায় স্ট্যাচু অব দ্য লিবার্টির চিবুক দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। অভিবাসী ও শরণার্থীদের গ্রহণ করাটা কেবল মানবিকই নয়, তারা আমাদের অর্থনীতিকে দৃঢ় করেছে এবং দশকের পর দশক ধরে চাকরি তৈরি করেছে। এটা প্রেসিডেন্টের জারি করা সবচেয়ে পশ্চাদপদ ও বাজে নির্বাহী আদেশগুলোর একটি।’

ইরাকযুদ্ধে নিহত সৈনিকের পিতা: ইরাক যুদ্ধে নিহত হন মার্কিন সেনা হুমায়ন খান। নিজের ইউনিটকে আত্মঘাতী বোমা হামলা থেকে বাঁচাতে গিয়ে নিহত হয় এই মুসলিম সেনা। নিহত এই সেনার বাবা হলেন খিজির খান। তিনিও ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন। ট্রাম্পের এই নির্বাহী আদেশের সমালোচনা করে বলেন, মুসলিম ও অভিবাসীদেরকে আক্রমণের লক্ষ্য করে ট্রাম্প সাংবিধানিক নীতি এবং মৌলিক আমেরিকান মূল্যবোধ ক্ষুন্ন করার যে দৌড়ে নেমেছেন তা খুবই উদ্বেগের। মুসলিমদের জন্য বৈষম্যমূলক করে যে পদক্ষেপ ঘোষণা করেছেন এবং তিনি ও তার প্রশাসন যে পদক্ষেপগুলো নিতে পারেন, সেগুলোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোটা প্রত্যেক আমেরিকানের জন্য অপরিহার্য।

ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির প্রেসিডেন্ট: ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী হচ্ছেন ডেভিড মিলিব্যান্ড। প্রতিষ্ঠানটি শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করে।

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে মিলিব্যান্ড বলেন, সাত মুসলিম দেশের নাগরিকদের সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে ট্রাম্প জাতীয় নিরাপত্তাকে অজুহাত হিসেবে দেখিয়েছেন। শরণার্থীরা সন্ত্রাস থেকে পালাচ্ছে-তারা সন্ত্রাসী নয়। এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যকে ধ্বংস করবে।



মন্তব্য চালু নেই