ট্রানজিটে সার্বভৌমত্বের ক্ষতি হয় না : প্রধানমন্ত্রী

654বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যে পণ্য পরিবহনের (ট্রানজিট) প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এই ধরনের সিস্টেম সারা পৃথিবীতেই চালু রয়েছে। ইউরোপজুড়ে এক দেশের সীমান্ত অতিক্রম করে অন্য দেশে পণ্য সরবরাহ করা হয়, তাই বলে কারোর সার্বভৌমত্বই কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না।’

বাংলাদেশ সফররত ভারতীয় লোকসভার সদস্য এবং দেশটির রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির ছেলে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় আজ শনিবার সকালে সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল (বিবিআইএন) মোটরযান চলাচল চুক্তির প্রসঙ্গেও কথা বলেন। তিনি বলেন, এই চুক্তির ফলে চুক্তির অন্তর্গত এই অঞ্চলের পারস্পরিকভাবে নির্ভরশীল চারটি দেশই বিভিন্নভাবে লাভবান হবে।

পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বৈঠকের বিষয়ে অবহিত করেন। বার্তা সংস্থা বাসসের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ বন্দর দিয়ে নৌ প্রটোকল চুক্তির আওতায় ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশের ওপর দিয়ে পরিবহনের প্রথম চালানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। এমভি নিউটেক-৬ নামে একটি জাহাজ এক হাজার টন লোহাজাতীয় পণ্য নিয়ে কলকাতা থেকে আশুগঞ্জ বন্দরে ভিড়ে। পরে এসব মালামাল স্থলপথে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পাঠানো হয়। প্রথম ট্রানজিটের পণ্যবাহী এ জাহাজ থেকে বাংলাদেশ পায় দুই লাখ ৯৫ হাজার ৩৬৫ টাকা।

এর আগে পরীক্ষামূলকভাবে দুই দফায় ফি ছাড়াই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল এবং খাদ্যশস্য ট্রানজিট করেছিল ভারত।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর উন্নয়ন প্রক্রিয়া জোরদার করার জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং যোগাযোগ উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো তাদের মধ্যকার বিদ্যমান সুসম্পর্কের উত্তরণ ঘটিয়ে পারস্পরিক উন্নয়ন সাধন করতে পারে। একই সঙ্গে কানেকটিভিটির উন্নয়ন তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রকে আরো সম্প্রসারিত করবে।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্তির জন্য এই অঞ্চলের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ‘সীমান্ত হাট’ স্থাপনের বিষয়ে তিনি বলেন, এই সীমান্ত হাট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের ফলে দুই দেশের চোরাচালান অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে আরো অধিক সংখ্যক ‘সীমান্ত হাট’ স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এতে করে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমাণ বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে।

সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির পুনরুল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী তৎপরতার জন্য কাউকেই বাংলাদেশের ভূখণ্ডকে ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হবে না।’

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের বিয়োগান্তক অধ্যায়ের স্মৃতিচারণা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই কালরাত্রিতে বঙ্গবন্ধুকে তাঁর পরিবার-পরিজন এমনকি পরিবারের নারী ও শিশুসহ নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।

নিজেকে একজন ভুক্তভোগী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের কেউ কেউ এখনো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পলাতক রয়েছেন। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ বিষয়ে কথা বলে না । পক্ষান্তরে, তাদের খুনিদের পক্ষ নিতেও দেখা যায়।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার এবং জনগণের মহান সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ কখনো তাদের এই সহযোগিতার কথা ভুলে যাবে না।

ভারতের জনতা বাংলাদেশের জনগণ বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভালোবাসে উল্লেখ করে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, বাংলাদেশের জনগণের অবস্থান ভারতীয়দের হৃদয়ে। তিনি বাংলাদেশের সমৃদ্ধির জন্য শুভকামনাও জানান। তিনি বাংলাদেশ সফরকালীন তাঁর প্রতি প্রদর্শিত আন্তরিকতায় মুগ্ধতা প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এবং সংসদ সদস্য মেহজাবিন খালেদ উপস্থিত ছিলেন।



মন্তব্য চালু নেই