ট্যারা চোখের চিকিৎসা কী?

ট্যারা চোখের সমস্যা অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায়। তবে দেশে বর্তমানে এর অনেক আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে।

প্রশ্ন : ট্যারা চোখের ক্ষেত্রে করণীয় কী?

উত্তর : যদি কোনো বাঁকা চোখ আমরা দেখি, সাথে সাথে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। এবার চিকিৎসক কী করবেন?

চিকিৎসক কয়েকটি কাজ করবেন। প্রথমেই দেখবেন ওর চোখের দৃষ্টিটা সঠিক আছে কি না। বাড়িতেও বিষয়টি দেখার উপায় আছে। শিশু তো আর বোঝে না যে সে ভালো দেখছে, না কি খারাপ দেখছে। সে যখন টিভি দেখে দূরত্ব রাখলেন, ২০ মিটার দূরে। ওখানকার যে লেখাগুলো থাকে টিভি স্ক্রলে সে দেখতে পায় কি না। সমানভাবে দুই চোখে দেখতে পায় কি না। যদি এক চোখে ভালো দেখে, এক চোখে খারাপ দেখে তাহলে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে, চশমা ব্যবহার  করতে হবে। তাহলে আর বাঁকা হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।

দ্বিতীয় হলো আমরা চক্ষু বিশেষজ্ঞরা কী করি? আমরা চোখকে পরীক্ষা করে দেখি যদি দৃষ্টি শক্তি ঠিক থাকল, একটার চেয়ে আরেকটি বেশি, তখন আমরা যে চোখ ভালো সেই চোখকে দুই ঘণ্টা করে বন্ধ রেখে যেটা খারাপ, সেটা দিয়ে দেখার একটি ব্যবস্থা করি। একে আমরা বলি অকলুশন। প্রথমটা হলো অপটিক্যাল, এরপরেরটা অকলুশন। এরপর আমরা আরেকটি করি অর্থোপেডিক্স। বাংলায় বললে চোখের ব্যায়াম করতে বলি,  ‘তুমি ডানে ঘুরাবে, বামে ঘুরাবে, উপরে ঘুরাবে, নিচে ঘুরাবে।’ এটি পেশি ও স্নায়ু সতেজ রাখার জন্য। এরপরও যদি দেখি কাজ হচ্ছে না, ট্যারা চোখের অস্ত্রোপচার করা যায়। এটি সবচেয়ে সহজ অস্ত্রোপচার।

সহজ কেন বলছি, এই পেশি যখন দুর্বল হয়ে যায় একে যদি স্ট্রেংন্দেনিং করে দেওয়া হয়, কেটে সেলাই দিয়ে ঠিক করে দেওয়া হয়, আবার আরেক পাশে বেঁকে গেছে এর জায়গাটা বদল করে দিয়ে ইনসারশনটা করে দেই আমরা, তাহলে দুটো সমান হয়ে গেল। এর চেয়ে সহজ কোনো অস্ত্রোপচার নেই। এটি যেকোনো সময় করা যায়। পাঁচ বছরের মধ্যে করলে ভালো, যদি বাচ্চাদের হয়। তবে বড়দেরও করা যায়। এটা যেকোনো বয়সে করা যেতে পারে।

বিয়ের আগে যদি ট্যারা চোখ থাকে তাহলে অনেক সময় সামাজিক সমস্যা হয়। সে নিজেও মানসিকভাবে দুর্বল থাকে। তাই চোখ যদি ঠিক হয়ে যায় তাহলে আর কোনো বাধা নেই। এমনকি অনেকে চশমা পরলে সেনাবাহিনী বা অনেক জায়গায় নেয় না। আজকাল কিন্তু আরো একটি সুবিধা আছে। চশমা নেবে না। তাহলে কী করা যায়? যারা চশমা পরতে চায় না, বিয়েতে যাবে সে কনট্রাক্ট ল্যান্স ব্যবহার করতে পারে। এটিও যে ব্যবহার করতে চায় না তারা লেসিক করতে পারে। লেজারের মাধ্যমে।

বাংলাদেশে চক্ষুবিষয়ক চিকিৎসা এখন আন্তর্জাতিক মানের। বিদেশেও যা পাবেন, আমাদের দেশেও তাই পাবেন। আমাদের কোনো লোককে চোখের বিষয়ে বিদেশে যেতে হয় না। আমাদের দেশেই এ ধরনের বিশেষজ্ঞ আছেন যাঁরা চোখের চিকিৎসা করতে সক্ষম।

ট্যারা চোখের বিষয়ে আমি একটি কথা বলব, আর লক্ষ্মী ট্যারা ভেবে নয়, একে রোগ হিসেবে চিহ্নিত করে, চলে আসবেন। সাত থেকে ১৫ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ফিরে যাবেন।

প্রশ্ন : পরবর্তীকালে কী আর কোনো ফলোআপের বিষয় আছে?

উত্তর : এ ক্ষেত্রে আমরা অনেককে সাতদিন পরে একবার, এক মাস পরে একবার দেখি। অস্ত্রোপচারটি সফলভাবে যদি একজন সার্জন করেন সারাজীবন সে ভালো থাকতে পারে। সুতরাং ট্যারা চোখের বিষয়ে বলব,  কুসংস্কার দূর করে আপনারাও চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী চারটি পদ্ধতি, চশমা ব্যবহার, ব্যায়াম অথবা চোখ ঢেকে ঠিক করা অথবা অস্ত্রোপচার করে ভালো করতে পারেন।

প্রশ্ন : চিকিৎসা করার পর কোনোভাবেই কী এটি আবার হওয়ার আশঙ্কা থাকে?

উত্তর : একটি জিনিস তো জানেন, যেকোনো অস্ত্রোপচারের একটি ছোটখাটো জটিলতা থাকতেই পারে। দেখা গেল অস্ত্রোপচারের পরে আমরা যেসব পরামর্শ দেই, সে সঠিকভাবে করল না, সার্জনেরও কোনো ত্রুটি থাকতে পারে। যে পেশিতে আমরা সেলাই করি সেটি কোনো কারণে সরে যেতে পারে। তাহলে তার আবার হওয়ার একটি আশঙ্কা থাকে। আবার যেই পেশিকে ছোট করে দিয়েছিলাম, সেটি কোনো কারণে ছুটে গেল। এটা আসলে খুব দুর্লভ। এটা হয়তো ১০ লাখে একটি হতে পারে। সেটি হলে পরে আবার আমরা চিকিৎসা করতে পারি। এতে কোনো সমস্যা হয় না। এনটিভি



মন্তব্য চালু নেই