‘ট্যাকা কবে দিবি, শালার পো শালা’

কারস্টেন হ্যাকেনব্রোচ বাংলাদেশকে তার সেকেন্ড হোম বলে মনে করেন। তিনি বাংলা বলতে পারেন বাঙালির মতোই। মানুষের সঙ্গে মিশে যান একেবারে আত্মীয়ের মতো। কারস্টেন বাঙালির মত বকাও জানেন। একদিন তার সঙ্গে ছিলেন সরফরাজ খান।

অ্যাই রিকশা, যাবে নাকি?

কই যাইবেন আফা?

ধানমণ্ডি ২ নম্বর। যাবে?

উঠেন না। ভাড়া কইলাম না, আপনের ইচ্ছামতো দিয়েন আফা।

কারস্টেনের কথা শুনলে কেউ কি বলতে পারবে উনি ভিনদেশি? ঠিক একজন বাঙালির মতোই বাংলায় পারদর্শী হয়ে উঠেছেন জার্মান এই মেয়েটি।

তিনি বাঙালি মেয়ের মত সালোয়ার-কামিজ পরেন। মুখে তার হাসি লেগেই থাকে। চোখ দুটি সারাক্ষণ যেন কি খুঁজে বেড়ায়।

কারস্টেনের নামের শেষ অংশ হ্যাকেনব্রোচ। তিনি বাংলাদেশে প্রথম এসেছিলেন ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে। পেশায় শিক্ষক তিনি।

বয়স তার ৩০-৩২ হবে। বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে পারেন স্কুলে থাকতেই। নতুন নতুন দেশ সম্পর্কে জানার আগ্রহ তার সেই স্কুলবেলা থেকেই।

প্রথমবার এসে ১০ দিন মাত্র থেকেছিলেন। এরপর কয়েকবার আসেন। ২০০৭ সালের আগস্টে আসেন পিএইচডির শেষ অংশ সম্পূর্ণ করতে।

তার পিএইচডির বিষয় ছিল তৃতীয় বিশ্বের মানুষ। বাংলাদেশে আসার আগে তিনি আফ্রিকার কিছু দেশেও কাজ করেছেন। মানুষের আচার-আচরণ, সংস্কৃতি, জীবনযাপন জানতে চাচ্ছিলেন তিনি।

বাংলাদেশকে কাজের ক্ষেত্র কেন করেছিলেন? জবাবে তার সোজা উত্তর। এই দেশটা বৈচিত্র্যময়। মানুষ যেমন কাঁদতে পারে, হাসতেও পারে। দুঃখের মধ্যেও গান গায় মানুষ। এটাই আমাকে বেশি আকৃষ্ট করেছে।

বাংলাদেশে আসার পর পরই তিনি ভাষা শিখতে লেগে যান। খুব মন দিয়ে রিকশাওয়ালা, চা-বিক্রেতা বা মাছওয়ালাদের কথা শুনতেন।

তিনি বাংলাদেশের বেশির ভাগ জেলার নাম জানেন, বলতে পারেন অনেক গ্রামের নামও। থেকেছেন নিম্নবিত্ত পরিবারে পেয়িং গেস্ট হিসেবে।

রাজধানীর ধানমণ্ডির একটি চায়ের দোকানে কারস্টেন বললেন, দুটি চা দেবেন। একটা রং চা। আশপাশের লোকজন ফিরে তাকাল— সব জায়গায় যেমন হয়। একজন জিজ্ঞেসও করলেন, কীভাবে এমন বাংলা শিখলেন তিনি?

কারস্টেন বললেন, আমি অনেক সময় টঙ্গীর এক বস্তিতে থেকেছি। সেখানে লোকজনের কাছে শিখেছি। আমি কিছু বকাও জানি।

আশপাশের লোকজনও এগিয়ে এলো এবার। উত্সুক লোকজন সমস্বরে বললেন, বলেন তো শুনি।

‘বেশি গ্যাঞ্জাম কইরো না, ট্যাকা কবে দিবা, শালার পো শালা,’- এমন গালি দিয়ে কারস্টেন নিজে নিজেই কুটি কুটি করে হাসেন। লোকজন জানতে চাইলেন, আপনি এগুলোর অর্থ জানেন?

কারস্টেন বলেন, হ্যাঁ, জানি। শালা মানে ব্রাদার ইন ল। এটি খুবই সুন্দর বকা।

বাংলাদেশে তিনি শহরেই কাটিয়েছেন বেশি। পুরান ঢাকা তার খুব পছন্দ। তিনি একপর্যায়ে এমন একটি প্রকল্পে যুক্ত হতে চাইলেন, যার মাধ্যমে জায়গাগুলোর নামের ইতিহাস জানা যায়।

প্রকল্পের কাজটি তিনি ব্যক্তিগত অর্থায়নে চালিয়ে যাচ্ছেন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ কাজ শুরু করেছেন তিনি। আরবান স্টাডি গ্রুপের (ইউএসজি) কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক তার সঙ্গে কাজ করছেন।

কারস্টেনের কাছে বাংলাদেশ এখন আপন জায়গা। কাউকে বা কোনো কিছুকে ভয় লাগে না তার। স্বচ্ছন্দে চলাফেরায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন তিনি।

তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, বাংলাদেশ আমার সেকেন্ড হোম। এ দেশের মানুষ অতিথিপরায়ণ। আমাকে দেখলে সবাই আনন্দিত হয়, এমন অবস্থায় আমি আবেগ ধরে রাখতে পারি না।



মন্তব্য চালু নেই