টিভি দেখতে দেখতে খাওয়া কেন ক্ষতিকর

কিছু পরিবার আছে যারা টিভি দেখতে দেখতেই দিনের বা রাতের খাওয়া সারে। এই খাওয়া স্বাস্থের জন্যে কতটা উপকারী হয় সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তারা খাওয়া কতটা উপভোগ করেন তারও ঠিক নেই। অপরপক্ষে যারা টিভি না চালিয়ে খাওয়া সারেন তারা বরং খাওয়ার আনন্দ বেশি উপভোগ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের জার্নাল অ্যাপেটাইটের এক গবেষণায় বলা হচ্ছে, অনেকে খাওয়ার সময় টিভি চালান ঠিকই, কিন্তু সেদিকে খুব একটা মন দেন না। তারা টিভির আওয়াজটাকে পটভূমিকার আওয়াজ হিসেবে রেখে দেন। কিন্তু খাদ্যের পুষ্টিগুণ ঠিকঠাক গ্রহণ করতে পারেন না। আমান্দা ট্রফহলজ হচ্ছেন একজন গবেষক ও লেখক। তিনি জানিয়েছেন, পরিবারের সকলে মিলে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করলে পরিবারের শিশুদের ওপরও একটা সুপ্রভাব পড়ে। এতে শিশুদের স্বাস্থ্যও ঠিক থাকে। পরিবারের সকলে একসাথে বসে খেলে ছোটরা কতটা খাবে অর্থাৎ ওদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্যে ওদের কতটা খাওয়াদাওয়া করা উচিত সেই ব্যাপারে ও বড়রা ওদের অনেকটা শিখিয়ে পড়িয়ে নিতে পারে।

মিনিয়াপোলিসের ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটার সঙ্গে যুক্ত গবেষক ট্রফহলজ জানিয়েছেন, খাওয়ার সময় টিভি চালিয়ে রাখলে পরিবারের একজনের সঙ্গে অপরজনের মানসিক সংযোগ কমে আসে এবং খাদ্যের পুষ্টিগুণও ঠিকঠাক গ্রহণ করতে পারে না। খাওয়ার সময় টিভি দেখা এবং বাচ্চাদের মোটা হয়ে যাওয়ার পেছনে একটা সংযোগ আছে। সেটা বোঝার জন্যই সমীক্ষার সঙ্গে যুক্ত গবেষকরা ১২০টা পরিবারের ভিডিও রের্কডিং দেখেছেন। সেখানে ছোট্ট শিশুরাও ছিল। তাদের বয়স ৬ থেকে ১২ বছর বয়সের মধ্যে। ২০১২ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে এই সমীক্ষার কাজ চালানো হয়েছিল। সমীক্ষার কাজে সাহায্য করার জন্যে ১২০টা পরিবারকে বেছে নিতে সাহায্য করেছে মিনিয়াপোলিসের প্রাইমারী কেয়ার ক্লিনিকস। পরিবারগুলোর বেশিরভাগই কম রোজগেরে এবং সংখ্যালগু দলভুক্ত। এই পরিবারগুলো তাদের দিনে দু’বার খাদ্য গ্রহণ করার দৃশ্য ভিডিও রের্কডিং করে রেখেছে। এই কাজে তারা আইপ্যাড ব্যবহার করেছেন।

গবেষকদের জানিয়েছেন তারা কি খেয়েছেন, পরিমাণে কতটা খেয়েছেন ও খাওয়া কতটা উপভোগ করেছেন। গবেষকরা বিচার করে দেখেছেন সেই খাদ্য থেকে কতটা পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। খাদ্য গ্রহণ করার সময় তারা কি কি টিভি চ্যানেল দেখেছেন। তখন তাদের মনের আবেগ অনুভূতির অবস্থা অথবা ইমোশন্যাল অ্যাটমোস্ফিয়ার কেমন ছিল সেটাও বিচার করে দেখা হয়েছে।

সমীক্ষার আওতায় থাকা পরিবারগুলোর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ দু’বার খাওয়ার সময় টিভি বন্ধ রেখেছিল। এক-চতুর্থাংশ একবার খাওয়ার সময় টিভি খুলে রেখেছিল। ৪৩ শতাংশ দু’বার খাওয়ার সময়ই টিভি খুলে রেখেছিলেন। যারা টিভি খুলে রেখে খাওয়া দাওয়া করেছিলেন, তাদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ টিভির দিকে মনোযোগ দিয়েছিলেন, অন্য অংশের জন্য টিভি শুধুমাত্র ব্যাকগ্রাউন্ডে চলছিল। যারা একবার খাওয়ার সময় টিভি চালিয়ে খেয়েছিলেন অথবা যারা একবারও টিভি না চালিয়ে খেয়েছিলেন তারা খাওয়ার আনন্দ অনেক বেশি অনুভব করেছিলেন তাদের তুলনায়, যারা দু’বার খাওয়ার সময়ই টিভি দেখেছিলেন। এটা সবসময় একই ছিল। তখন সেই পরিবারের সদস্যরা প্রত্যেকে কতটা সময় টিভিতে মনোযোগ দিয়েছিলেন সেই ব্যাপারটা এতটা গুরুত্ব পায়নি। অন্যদের তুলনায় যে পরিবারের লোকেরা খাওয়ার টিভি দেখেননি তারা খাদ্য থেকে অনেক বেশি পুষ্টিগুণ গ্রহণ করেছেন।

যারা টিভি চালিয়ে খাদ্য গ্রহণ করেন তাদের মধ্যে দিনের প্রধান আহার গ্রহণ করার সময় ফাস্টফুড গ্রহণ করার প্রবণতা অনেক বেশি। সেই তুলনায় যারা টিভি না চালিয়ে খাওয়াদাওয়া করেন তারা ফাস্টফুড কম খান।

নিউ ইয়র্কের ট্রয়ের দ্য সেইজ কলেজের সহকারি অধ্যাপক ইলেন ফিটজ প্যাটরিক জানিয়েছেন, খাওয়ার সময় মনোযোগ যখন একটুও নষ্ট হচ্ছে না, কোথাও টিভি চলছে না, তখন বাচ্চারা খাওয়ার আনন্দ খুব উপভোগ করতে পারে। বাচ্চাদের তখন খুব পুষ্টিগুণে ভরপুর স্বাস্থ্যকর খাবার দিতে হবে এবং তাদের পক্ষে কতটা খাদ্য গ্রহণ করা উচিত সেই ব্যাপারেও তাদের মনে সচেতনতা তৈরি করে দিতে হবে। ইলেন ফিটজ প্যাটরিক অবশ্য এই সমীক্ষার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নয়। তিনি জানিয়েছেন, খাওয়ার সময় টিভি দেখলে মন খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন না থেকে অন্যদিকে চলে যায়। তখন চিন্তা ভাবনা না করেই মানুষ কেবল খেতে থাকে এবং ব্যাপারটা কি ঘটছে অর্থাৎ তারা কতটা একসাথে খেয়ে নিচ্ছে সেটা তারা বুঝতেই পারে না।

ফিটজ প্যাটরিক আরও জানিয়েছেন, টিভির বিজ্ঞাপন শিশুদের অস্বাস্থ্যকর খাদ্য খেতে প্ররোচিত করে। তারা দিনের প্রধান খাদ্য খাওয়ার সময় কী খাবে সেটা তারা টিভির বিজ্ঞাপন দেখেই ঠিক করে নেয়। তিনি জানিয়েছেন, প্রত্যেকটা পরিবারেই এই একসাথে খাওয়ার ব্যাপারটাকে একটা আনন্দপূর্ণ সময়ের সূত্র হিসেবে দেখা উচিত। তখন মনে রাখতে হবে খাওয়াটা শুধু স্বাস্থ্যের প্রয়োজনেই নয়। যেসব পরিবারে খাওয়ার সময়ে সকলে গল্পগুজব করে, একে অন্যের সঙ্গে মনের কথা শেয়ার করে নেন, তারা টিভির সুইচ বন্ধ করেই খাওয়াদাওয়া করেন। তাদের খাওয়া খুব ভাল হয়। দেহের পুষ্টি বৃদ্ধি হয় এবং তারা সকলে একসঙ্গে খাওয়াটাকে খুব উপভোগও করেন। যুগশঙ্খ



মন্তব্য চালু নেই