টাকার মান কমানোর প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রীর না

তৈরি পোশাক খাতের তিন সংগঠন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান কমানোর (টাকার অবমূল্যায়নের) প্রস্তাব দিলেও তা নাকচ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

এছাড়া সংগঠনগুলো রফতানি আয়ের ওপর নগদ সহায়তা পেতে অডিট আপত্তিতে শিথিলসহ একগুচ্ছ সুবিধার দাবি করছে। তবে অন্যান্য দাবি বিবেচনায় রাখলেও টাকার অবমূল্যায়নের বিষয়টি তাৎক্ষণিক নাকচ করেছেন অর্থমন্ত্রী।

বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে সচিবালয়ে বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক করে এ সুবিধার কথা তুলে ধরেন। বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদসহ তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন (বিজিএমইএ), বিকেএমইএ ও বিটিএমইএ’র প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, ডলারের সঙ্গে টাকার অবমূল্যায়ন করা হলে রফতানি আয় অনেক বেড়ে যাবে। এ যুক্তি দেখিয়ে বিজিএমইএ নেতারা টাকার অবমূল্যায়নের দাবি জানান। এ সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, কোনো অবস্থায় এখন টাকার অবমূল্যায়ন করা সম্ভব নয়।

বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, নগদ অর্থ সংক্রান্ত নীতিমালায় কিছু ভুল শব্দ থাকায় অডিট ফার্মগুলো ছাড়পত্র দিচ্ছে না। তাই এ শব্দগুলো পরিবর্তনের দাবি নিয়ে তারা অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। অর্থমন্ত্রী এ বিষয়গুলো সমাধানের আশ্বাসও দিয়েছেন। এছাড়া নগদ অর্থায়নের ১০ কোটি টাকার একটি তহবিল ছাড় হওয়ার কথা থাকলেও তা বিলম্বিত হচ্ছে। সেটি দ্রুত ছাড়ের অনুরোধ করা হয়েছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে রফতানি বস্ত্রের মূল্যের ওপর নগদ সহায়তা প্রদান করা হয়। কিন্তু পোশাক খাতের তিনটি সংগঠন দাবি করেছে রফতানি মূল্যের (এফওবি) ওপর নগদ সহায়তা দেয়া হোক। এতে তাদের নগদ সহায়তা প্রাপ্তি বাড়বে শূন্য দশমিক ৮০ শতাংশ। এছাড়া আগামীতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলেও তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম না বাড়ানো এবং টাকার অবমূল্যায়নেরও দাবি জানান তারা।

জানা গেছে, রফতানিকারকদের উৎসাহিত করতে রফতানি আয়ের ওপর ৩ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত নগদ সহায়তা দিয়ে থাকে সরকার। অর্থাৎ ১০০ টাকার রফতানি আয় দেশে এলে রফতানিকারকদের সর্বোচ্চ ৩ টাকা থেকে ২০ টাকা নগদ সহায়তা দেয়া হয়। নগদ সহায়তা পেতে রফতানিকারকদের রফতানি আয় দেশে আনা সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র উপস্থাপন করতে হয় ব্যাংকের কাছে। ব্যাংক তা যাচাই-বাছাই করে সংশ্লিষ্টের অনুকূলে অর্থ ছাড় দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সুপারিশ করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কিছু রফতানিকারকের বিরুদ্ধে রফতানি বিল দেশে আনা সংক্রান্ত কাগজপত্র ব্যাংকের কাছে দাখিলের ক্ষেত্রে জালিয়াতির আশ্রয় নেয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর সঙ্গে ব্যাংকের কতিপয় কর্মকর্তা জড়িত থাকে। ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে নগদ সহায়তার কোটি টাকা হাতিয়ে নেন অসাধু রফতানিকারকরা।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ও অডিট বিভাগের তদন্তে বিকল্প নগদ সহায়তার অর্থের একটি অংশ নিয়ে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া যায়। রফতানি না করেও রেমিট্যান্সকে রফতানি আয় হিসেবে ব্যাংকে পাঠিয়ে এর বিপরীতে তুলে নেয়া হয়েছে নগদ সহায়তার অর্থ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কিছু তদন্তে জালিয়াতির ঘটনা বেরিয়ে এসেছে। তবে বাস্তবে এ ধরনের ঘটনা আরো বেশি।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে নগদ সহায়তা হিসেবে ২২ খাতের জন্য সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে পোশাক খাতের জন্য বরাদ্দ রয়েছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা।



মন্তব্য চালু নেই