‘টাকার জন্য লিঙ্কন এমন কাজ করতে পারে’

ভাল পরিবারে বোনের বিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন দাদা৷ ছোটবেলা থেকেই আদরে মানুষ যে ছোট বোন৷ মোটামুটি দেখেশুনে বিয়ে দেওয়ার পরে যে এমনটা ঘটতে পারে তা এখনও যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না তপন বর্মনের৷ “খোঁজ নিয়েছিলাম যেটুকু পেরেছিলাম৷ তখন বুঝতে পারিনি টাকার জন্য লিঙ্কন এমন কাজ করতে পারে৷” চোখের জল গড়িয়ে পড়ল দাদার৷

নিথর হয়ে থাকা বোন কাজলের কপালে আলতো হাত বুলিয়ে বলে চলেছেন তপন, “বড় আদরে মানুষ হয়েছিল বোনটা৷ নরম স্বভাবের ছিল৷ মনে হয়েছিল বিয়ের পর বোধহয় স্বামী-স্ত্রীর অ্যাডজাস্টমেন্টের সমস্যা হচ্ছে৷ ভেবেছিলাম এমনটা তো হয়ই৷ কিন্তু তার পরিণতি যে…৷” নির্বাক হয়ে কাজলের মুখের দিকে তাকিয়ে নিষ্পলক তপন৷

বিয়ের মাত্র ৭দিনের মধ্যে হত্যা করা হয় নববধু কাজলকে। বরের বাড়ীর লোকজন বলে আত্মহত্যা করছে কাজল। আর কাজলের দাদা জানিয়েছেন পণের জন্য আমার বোনকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয় কাজলের দেহ৷ সেখান থেকে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ নিয়ে কিছু মন্তব্য করতে রাজি নয় পুলিশ৷

কাজলের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে চালাতে চেষ্টা করেছিল লিঙ্কন ও তার পরিবার৷ তবে কাজলের দাদা জানিয়েছেন, গলায় দড়ি দেওয়ার কোনও চিহ্ন বোনের গলায় ছিল না৷ উল্টে থুতনি ও গালে আঘাতের চিহ্ন ছিল৷ পণের জন্য বোনকে খুন করা হয়েছে বলে বাগুইআটি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন কাজলের দাদা তপন বর্মন৷

তিনি জানিয়েছেন, বিয়ের সময় সোনার গয়না ইত্যাদির সঙ্গে এক লাখ নগদ দিয়েছিলেন তাঁরা৷ তার পরও অনেক খরচ হয়ে গিয়েছে বলে আরও দশ লাখের দাবি জানায় লিঙ্কন ও তার বাবা নারায়ণ দাস৷ সে টাকাও তাঁরা আস্তে আস্তে দিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন৷ ১৭ ডিসেম্বর লিঙ্কনদের বাড়িতে এসে এই অনুরোধ জানিয়ে যান তাঁরা৷

কাজলের পরিবারের বাকি লোকজন জানিয়েছেন, বউভাতের পর স্বামী লিঙ্কনের পর মহিলার সাথে শরীরিক সম্পর্কের কথা টের পায় কাজল৷ টাকার বিনিময়ে একাধিক মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক রাখত সে বলে জানতে পেরেছিল কাজল৷ শুধু তাই নয়, বিয়ের দু’দিন পর এক পুরুষ তার সঙ্গীকে নিয়ে কাজলের বেডরুমে চলে আসে সে৷ সঙ্গী হতে কাজলকে বাধ্য করার চেষ্টা করে৷ কিন্তু প্রতিবাদ করে বেডরুম বাইরে থেকে আটকে পালিয়ে অন্য ঘরে আশ্রয় নেন ২৮ বছরের মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা সহজ সরল মানসিকতার এই গৃহবধূ৷

বাগুইআটির অশ্বিনীনগরে লিঙ্কনের এক প্রতিবেশী জানালেন, কিশোর বয়সের পর শারীরিক সম্পর্কের শিকার হয় লিঙ্কন৷ লোকলজ্জার ভয়ে তার চিকিৎসা করায়নি তার পরিবার৷ তবে এই কথা চাপা থাকেনি৷ এই কারণে বিয়ে হচ্ছিল না লিঙ্কনের৷ তিনি জানিয়েছেন, প্রায় ৭০ হাজার টাকা মাইনের বেশিরভাগটাই পুরুষ ও মহিলা শারীরিক সম্পর্কের জন্য খরচ করত বিকৃতকাম লিঙ্কন৷-সংবাদ প্রতিদিন



মন্তব্য চালু নেই