সামাজিক কোন্দল আর দলাদলির জের

ঝিনাইদহের ৬৭ ইউপি চেয়ারম্যানের মধ্যে ৩০ জন শহরে থাকেন

দলীয় কোন্দল ও সামাজিক দলাদলির কারণে ঝিনাইদহের ৬৭টি ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের মধ্যে ত্রিশ জন শহরে থাকেন। তাই নাগরিকদের সেবার জন্য এলাকাবাসিকে প্রায় শহরে আসতে হয়। এ জন্য তাদের সময় ও আর্থিক ক্ষতি, হয়রানী এবং ভোগান্তি পেতে হয়। তবে শহরে থাকা ইউনিয়ন চেয়ারম্যানারা বলেছেন, শহরে থেকেই ইউনিয়নবাসিকে উত্তম সেবা প্রদান করা সম্ভব। তাদের ভাষ্যমতে থানা পুলিশ ও হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারী অফিসে ইউনিয়নবাসির জন্য একাধিকবার আসতে হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিস ও ইউনিয়নবাসি সুত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের ১১ জন চেয়ারম্যান ঝিনাইদহ শহরে সপরিবারে বসবাস করেন। তাদের অনেকেরই স্থায়ী বাড়িঘর রয়েছে।এ ছাড়া কালীগঞ্জ উপজেলায় ১১ জন ইউপি চেয়ারম্যানের মধ্যে ৭ জন, মহেশপুরে ১২ জনের মধ্যে ২ জন, শৈলকুপায় ১৪ জনের মধ্যে ৬ জন ও হরিণাকুন্ডু উপজেলার ৮ জন চেয়ারম্যানের মধ্যে ৪ জন শহরের বাসিন্দা।

কোটচাঁদপুর উপজেলার ৫ চেয়ারম্যান সবাই গ্রামে বসবাস করেন। মহারাজপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুর রশিদ অভিযোগ করেন, তাদের চেয়ারম্যান আবু বকর ঝিনাইদহের পাগলাকানাই এলাকায় বসবাস করেন। এ কারণে প্রয়োজনের সময় তাকে পাওয়া যায় না। চেয়ারম্যান দপ্তর থেকে পাওয়া সেবাগুলো নাগরিকরা পেলেও তাতে আগে থেকেই সাক্ষর করে রেখে যান চেয়ারম্যান।

এ বিষয়ে মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু বকর বলেন, তিনি সব সময় এলাকায় থাকেন। নাগরিকদের সেবা মিটিয়ে শহরে আসতে তার গভীর রাত হয়ে যায়। শহরে থাকা আরেক চেয়ারম্যান কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নের হায়দার আলী জানান, ইউনিয়নবাসির প্রয়োজনেই তাকে শহরে থাকতে হয়। জনসম্পৃক্ত কাজগুলোর বেশির ভাগ শহর কেন্দ্রীক। তাই শহরে থেকে নাগরিক সেবা বেশি দেওয়া সম্ভব। এদিকে অভিযোগ রয়েছে, ইউপি নির্বাচনের সময় সামাজিক ও দলীয় কোন্দলে জড়িয়ে পড়েন চেয়ারম্যানরা প্রার্থীরা।

ফলে নিরাপত্তার কারণে নির্বাচিত হওয়ার পর শহরের বাসিন্দা হয়ে যান। চেয়ারম্যানরা নাগরিক সদন, জন্ম ও মৃত্যু সনদসহ জরুরী সাদা ফরমে আগে থেকেই সাক্ষর করে রাখেন। নাগরিকরা সেবা নিতে গেলে ইউপি সচিবরা কাউন্সিলরদের সাক্ষর নিয়ে সনদ দিয়ে দেন। প্রায় ক্ষেত্রেই নানা অসঙ্গতি ধরা পরে। বিশেষ করে ওয়ারেশ কায়েম, জন্ম ও মৃত্যু নিব্ধন এবং নাগরিক সনদে ভুল তথ্য সন্নিবেশিত হয়। কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন দলীয় ও সামাজিক কোন্দলের কারণে এলাকাই যেতে পারেন না। দলীয় কোন্দলের কারণে তার ইউনিয়নে একাধিক খুনের ঘটনা ঘটেছে। তাকে কয়েকটি মামলার আসামী করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।

সরকারী দল করলেও গ্র“প পলিটিক্সের কারণে বারবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন এলাকায় যান না বলে সেখানকার নাগরিকরা জানান। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবি এলাকায় থাকেন না। তার প্রতিপক্ষ ও নলডাঙ্গার নির্বাচিত চেয়ারম্যান রুহুল বিশ্বাস ঝিনাইদহ শহরে খুন হয়েছিলেন। উপ-নির্বাচনে যুবলীগ নেতা রবিউল ইসলাম রবি চেয়ারম্যান নির্বাচত হন। অনুসারীদের সন্দেহ রুহুল বিশ্বাস হত্যার পেছনে বর্তমান চেয়ারম্যান রবিউল ইসলামের ইন্ধন ছিল।

একই ভাবে নিরাপত্তার কারণে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান লিটন শহরে বাস করেন। চরমপন্থি অধ্যুষিত সদরের গান্না ইউনিয়নে আন্ডার ওয়ার্ডের শীর্ষ চরমপন্থি নেতা আব্দুর রশিদ ওরফে দাদা তপনের বাড়ি হওয়ায় সেখানে এখনো চরমপন্থিদের আনাগোনা রয়েছে। দাদা তপনের মৃত্যুর পর তার অনুসারীরা এলাকায় চাঁদাবাজী, মুক্তিপন ও নানা সমাজ বিরোধী কাজে লিপ্ত রয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে সবচে বেশি দাঙ্গাহাঙ্গামা হয়ে থাকে জেলার শৈলকুপায়।

এ পর্যন্ত আধিপত্য বিস্তার ও ইউপি নির্বাচন নিয়ে এক দশকে ৫০ জনেরও বেশি মানুষ খুন হয়েছেন। শৈলকুপার ১৪ জন ইউপি চেয়ারম্যানের মধ্যে ৬ জন শহরে থাকেন। শৈলকুপার বগুড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম দলাদলির কারণে শৈলকুপায় থাকেন। মনোহরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তফা আরিফ রেজা মন্নু, মির্জাপুরের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ, দিগনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হক ও হাকিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শিকদার কামরুজ্জামান জিকু শহরে বসবাস করেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ ফোরামের ঝিনাইদহ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সদরের হরিশংকরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফরিদ জানান, জনগনের প্রকৃত উপকার করতে হলে চেয়ারম্যানদের শহরেই থাকতে হবে। তিনি জানান, প্রতিদিন থানা পুলিশ, কোট ও হাসপাতালসহ বিভিন্ন অফিসে ইউনিয়নবাসির সেবার জন্য যেতে হয়। গ্রামে থাকলে দ্রুত এ সব কাজ করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, সন্ত্রাসী বা চরমপন্থিদের কারণে এখন চেয়ারম্যানরা শহরে থাকেন না। সেবার প্রয়োজনেই চেয়ারম্যানদের শহরে থাকতে হয়।



মন্তব্য চালু নেই