জয়ের বেতন ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা হিসেবে তার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয় প্রতিমাসে দুই লাখ ডলার করে বেতন নেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

শনিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর বালুর মাঠে আয়োজিত ২০ দলীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

খালেদা জিয়া বলেন, ‘হাসিনার ছেলে দুই লক্ষ ডলার করে উপদেষ্টা হিসেবে বেতন নেয়। বাংলাদেশি টাকায় ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা। অথচ দেশের তরুণদের টাকা নাই, খাওয়া নাই। কোন উপদেষ্টার এতো বেতন। সেই টাকা কোথায়, দেশে না বিদেশে? কত টাকা ট্যাক্স দেয় সে?’

তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্ব শিক্ষাব্যবস্থায় উন্নতি করছে, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হচ্ছে। তারা (ছাত্রলীগ) আধুনিক অস্ত্র কোথায় পায়? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিদিন মারামারি হচ্ছে। প্রশ্নপ্রত্র ফাঁস করে দেয়া হচ্ছে। জিপিএ ফাইভের নামে বেশি নম্বর দেয়া হচ্ছে। শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি হলে তারা কেনো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায় না?’

বেগম জিয়া বলেন, ‘মাদকের ব্যবসার সঙ্গে আওয়ামী লীগের লোকজন জাড়িত। মাদকপাচারের জন্য সাংসদ বদিকে ধরে কয়েকদিন পরই ছেড়ে দেয়া হলো। মাদক ব্যাবসায়ী, দুর্নীতিবাজরা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। অথচ নাসিরউদ্দিন পিন্টু দিনের পর দিন জেল খাটছে। তার চোখ নষ্ট হয়ে গেছে।’

সরকারকে উদ্দেশ্য করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সামনে আপনাদের জন্য দুর্যোগ অপেক্ষা করছে। মন্ত্রীরা, বড় বড় নেতারা এখন পাসপোর্ট, ভিসায় সিল লাগিয়ে বিদেশ পাড়ি দিতে প্রস্তুত হচ্ছেন।’

তিনি সমবেত জনতাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘এদের পিছু নেবেন না। কারণ আপনারা পড়ে থাকবেন, ওরা বিদেশ চলে যাবে। ওরা নিজেদের টাকা-পয়সা বানিয়ে ফেলেছে। বিদেশি বাড়ি করছে। এখন আর আপনাদের চিনবে না।’

শেখ হাসিনাকে বিচারের সম্মুখিন হতে হবে
Khaleda-4 জয়ের বেতন ১ কোটি ৬০ লাখ টাকাপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘গত কয়েক বছরে ৩১০ মানুষ হত্যা, ৫৬ গুম এবং বিডিয়ার হত্যার জন্য শেখ হাসিনাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তাকে জবাবদিহীতা করতে হবে। এই দায় শেখ হাসিনা এড়াতে পারে না। এই দায় তাকেই নিতে হবে।’

সাবেক সেনাপ্রধান মঈন উ আহমেদকেও এর জন্য দায়ী করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এই মঈনকেও দায় নিতে হবে। এরা দুজন এই বিডিয়ার হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আগে থেকে জানতো। বিডিয়ার থেকে ওইদিন অফিসাররা মঈনকে ফোন করেছিল। কিন্তু সে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ওয়ান ইলাভেনের সময় কারাগার থেকে মেহেদি পরে হাসতে হাসতে বের হলেন, মঈন-ফখরুদ্দীনের সঙ্গে আপনার কিসের সম্পর্ক?’

তিনি বলেন, ‘আলেম সমাজকে কথায় কথায় জঙ্গি বানানো হয়। আসল জঙ্গি তো হলো আওয়ামী লীগ। সকল জঙ্গিকে আমরা ধরেছি।’ শেখ হাসিনাকে মারার জন্য মহিলা জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিচ্ছে এ বিষয়টিকে সাজানো ঘটনা বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বড়ালেই আন্দোলন
খালেদা জিয়া বলেন, ‘এখন শীতকাল বলে লোডশেডিং কম। কিন্তু গরমকালে মানুষ বিদ্যুৎ পায় না কেন? ক্ষমতাসীনরা ১৭ হাজার কোটি টাকা কুইকরেন্টাল থেকে লুটপাট করেছে। সাড়ে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

তিনি বলেন, ‘এখন মানুষ গ্যাস পাচ্ছে না। নারায়ণগঞ্জ ও চিটাগাঙের মানুষ গ্যাস পায় না। গ্যাসের অভাবে শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।’

বিএনপি নেত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমছে। তাই তেল-গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো যাবে না, বরং কমাতে হবে। বাড়ানো হলে আমরা আর ঘরে বসে থাকবো না।’

নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সকলে প্রস্তুত থাকবেন, আন্দোলনের ডাক দেবো। নিজেরা মরবেন, আর স্বজনহারানো বেদনায় কতো কাঁদবেন? মা-বোন, ভাইসহ আন্দোলনে সকলে নামতে হবে।’
Khaleda-3 জয়ের বেতন ১ কোটি ৬০ লাখ টাকাক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে বেগম জিয়া বলেন, ‘সাহস থাকে তো পুলিশ আর বালুর ট্রাক দিয়ে বাসা ঘিরে না রেখে রাজপথে মোকাবেলা করুন। রাজপথে আসুন। আমরা রাজপথে থাকবো, রাজপথে দেখা হবে, দেখি পুলিশ কি করে গুলি চালায়।’

পরিকল্পিতভাবে সুন্দরবন ধ্বংস
খালেদা জিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকার পরিবেশ ধ্বংস করে দিচ্ছে। সুন্দরবনে কয়েকদিন আগে যে ঘটনা ঘটলো তার বিচার হবে না, তদন্ত হবে না, তাদেরকে ধরাও হবে না। আসলে এটা পরিকল্পিত ঘটনা। যেটাতে তেল নেয়া হয়েছে সেটা তেল নেয়ার ট্যাংকার নয়, সেটা বালুর ট্যাংকার।’

তিনি বলেন, ‘তেল দূষণের ফলে পশুপাখি কিছু মরে যাবে, কিছু পাশের দেশে পালিয়ে যাবে। নদীর মাছ মরে যাবে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র ধ্বংস হয়ে যাবে।’

আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ খেকো
আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশ খেকো আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘এরা (আওয়ামী লীগ) শুধু মানুষ খেকো নয় বাংলাদেশ খেকো। এরা বাংলাদেশ খেয়ে ফেলতে চায়। এরা বাংলাদেশের নাম নিশানা মুছে ফেলতে চায়।’

তিনি বলেন, ‘বিজয়ের মাস হলেও মানুষের মুখে হাসি নেই। কারণ প্রতি পদে পদে মানুষ লাঞ্ছিত হচ্ছে, আওয়ামী লীগ এখন জনগণের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকে এই বোঝা সরাতে হবে।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘আজকে কোনো প্রতিষ্ঠান ঠিক নেই, সকল প্রতিষ্ঠান দলীয়করণের মাধ্যমে ধ্বংস করে দিয়েছে। গণতন্ত্র নাই বলে সমানে দুর্নীতি চলছে। সিভিল প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হয়েছে। ভালো ভালো অফিসারকে চাকরিচ্যুত করেছে। কয়েকদিন আগে একজনকে চাকরিচ্যুত করেছে। অভিযোগ সাজিয়েছে যাতে ভালো অফিসারকে চাকরিচ্যুত করতে পারে।

সাগর-রুনি হত্যার বিচার হবে না
Khaleda-1 জয়ের বেতন ১ কোটি ৬০ লাখ টাকাখালেদা জিয়া বলেন, ‘এই সরকার যতোদিন ক্ষমতায় থাকবে ততোদিন সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যার বিচার হবে না। সরকার ২৪ ঘণ্টার বদলে চার বছরেও সাগর-রুনির হত্যাকারীদের ধরতে পারেনি। তারা সরকারের দুর্নীতির খবর জানতো তাই তাদের হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে এর বিচার হবে না।’

তিনি বলেন, ‘সাগর-রুনির বাসা থেকে কিছু না নিলেও শুধু ল্যাপটপ চুরি হয়েছে। কারণ ল্যাপটপে সব দুর্নীতির তথ্য ছিল। এই সরকারের আমলে ঘরে-বাইরে কোথাও মানুষের নিরাপত্তা নাই। সরকার জোর করে ক্ষমতায় বসে জনগণের বোঝা হয়েছে। একে একে নতুন আইন করছে। কিন্তু যে সরকার অবৈধ তার করা কোনো আইন বৈধ হতে পারে না।’

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশকে পেছনের দিকে নিয়ে যায় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

পুলিশের সবাই খারাপ নয়
বিশেষ জেলার পুলিশের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীকে দিয়ে মানুষ ধরে নিয়ে গিয়ে গুম করা হচ্ছে। পুলিশ বাহিনীর সবাই খারাপ নয়। অনেক ভালো আছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে রাজারবাগ অ্যাটাক হয়েছিল তাদের অবদান আছে। বিশেষ জেলা ও ছাত্রলীগ দিয়ে পুলিশের সুনাম নষ্ট করা হচ্ছে। তাই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির উপর কথায় কথায় গুলি চালাবেন না। জনগণের সাহায্যকারী হিসেব থাকবেন।’

গুম-খুনের জন্য ভবিষ্যতে বিচারের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান তিনি।



মন্তব্য চালু নেই