জয়শ্রীর সঙ্গে সম্পর্কের কথা জেনে ফেলাতেই আকাঙ্ক্ষাকে খুন!

কলকাতার উদয়ন-কাণ্ডে জল যত গড়াচ্ছে, তত রঙিন হয়ে খুলছে তার রহস্যের জট৷ বাঁকুড়ার সেফ হাউসে টানা ছ ঘণ্টা পুলিশি জেরার মুখে উদয়ন লিখেছে জয়শ্রীর নাম! কে এই জয়শ্রী?

পুলিশ মনে করছে, তার ছেলেবেলার বন্ধু এই জয়শ্রীর সঙ্গে উদয়নের সম্পর্ক জেনে ফেলার কারণেই খুন হতে হয়েছে আকাঙক্ষা৷ তাঁর বিরুদ্ধে ত্রিকোণ প্রেমের তত্ত্ব প্রমাণের চেষ্টায় ছক কষে তাকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিল উদয়ন৷ জয়শ্রীর বাড়ি ভোপালে৷ উদয়নের মায়ের অধীনে কাজ করতেন জয়শ্রীর মা৷ উদয়ন ও জয়শ্রী, দু’জনেই তখন অনেক ছোট৷ দু’জনের আলাপ সেই তবে থেকে৷ পুলিশের অনুমান, এই জয়শ্রীর সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল উদয়নের৷ যাকে আড়াল করতেই আকাঙক্ষার বিরুদ্ধে ত্রিকোণ প্রেমের তত্ত্ব খাড়া করেছিল উদয়ন৷ সেই রহস্যের জট খুলতেই আরও একবার ভোপাল যাচ্ছে বাঁকুড়া পুলিশ৷ সেখানে জয়শ্রীর খোঁজ করার পাশাপাশি উদয়ন সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে ভোপালে বসবাসকারী তার তিন মামা ও মাসির সঙ্গেও কথা বলবে পুলিশ৷ পুলিশ মনে করছে, জয়শ্রীর খোঁজ পেলে এই তদন্ত অনেকটাই গতি পাবে৷

জানা গেছে, রাজস্থান ও মুম্বইয়ের যে দুই যুবকের সঙ্গে আকাঙক্ষার প্রেমের সম্পর্কের তত্ত্ব খাড়া করেছে উদয়ন, তা সর্বৈব মিথ্যা৷ কারণ আকাঙক্ষা খুনের আগে ওই দুই যুবকের কারও সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না তাঁর৷ আকাঙ্ক্ষার কললিস্ট ঘেঁটে সেই তথ্যই সামনে এসেছে৷ জানা গিয়েছে, আকাঙক্ষার মৃত্যুর পর তাঁর নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপ করে যোগাযোগ করা হয় দুই যুবকের সঙ্গে৷ এখান থেকেই পরিষ্কার যে, উদয়ন ঘটনার মোড় ঘোরাতে চাইছিল৷ আকাঙক্ষার বিরুদ্ধে ত্রিকোণ প্রেমের মিথ্যা তত্ত্ব প্রমাণ করতে চাইছিল৷

গত কয়েকদিনে টানা জেরা শুধু নয়, উদয়নের খুনের ধরন, তার বাড়ির ভিতরের পরিবেশ, তার মানসিক পরিস্থিতি সব কিছু খতিয়ে দেখে পুলিশ জানিয়েছিল, উদয়নের মানসিক পরিস্থিতি ঠিক নেই৷ আরও ভাল করে বললে বলতে হয়, নিজের সঙ্গে নিজে সে একটি ভারচুয়াল দুনিয়া তৈরি করে নিয়েছিল৷ সেখানেই নিজের সঙ্গে নিজেই সে বন্ধুত্ব পাতায়৷ এই পরিস্থিতিতে সোজা পথের জেরায় সঠিক তথ্য না-ও মিলতে পারে৷ তাই উদয়নকে জেরার অন্য পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়৷ তার ভারচুয়াল দুনিয়ার সামনে বসানো হয় তাকে৷

আশেপাশে স্থির একটি পরিস্থিতি তৈরি করে তাকে প্রথমে বলা হয় নিজের আত্মীয়দের নাম লিখে জানাতে৷ টানা ছ ঘণ্টার জেরায় এর পরই তাকে তার বান্ধবীদের নাম লিখতে বলা হয়৷ সেই পরিস্থিতিতেই সুতো আলগা হয় উদয়নের মানসিক অবস্থার৷ খাতায় উঠে আসে জয়শ্রীর নাম৷ জয়শ্রীর পদবি জানাতে না পারলেও তার সঙ্গে যে উদয়নের ছোটবেলা থেকেই পরিচয়, সে কথা জানায় উদয়ন৷ উদয়নের মা রাশিবিজ্ঞানের গবেষক ও শিক্ষিকা ছিলেন৷ তাঁর অধীনে কর্মরত ছিলেন জয়শ্রীর মা৷ সেখান থেকে জয়শ্রীর সঙ্গে উদয়নের আলাপের শুরু হলেও দ্বাদশ শ্রেণির পর উদয়ন পড়াশোনা ছেড়ে দিলে, জয়শ্রীর সঙ্গে আর কোনও সম্পর্ক ছিল না বলে জেরায় পুলিশকে জানিয়েছে সে৷ যদিও তার সত্যতা যাচাই হয়নি৷ সেই সূত্রেই ভোপালে গিয়ে জয়শ্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের তোড়জোড় শুরু হয়েছে৷

শুধু জয়শ্রীই নয়, ভোপালে কী পরিস্থিতিতে উদয়ন বেড়ে উঠেছে, তা জানতে চায় পুলিশ৷ তবেই তার মানসিক গঠন সম্পর্কে অনেকটা স্থির ধারণা করা সম্ভব হবে৷ পুলিশ সূত্রে খবর, ইংরেজি থ্রিলার বা ভয়ের ছবি দেখা খুব পছন্দ ছিল উদয়নের৷ শুধু ইংরাজি নয়, সেগুলি হতে হবে আমেরিকান ছবি৷ অর্থাৎ আরও একবার আমেরিকার সূত্র৷ প্রথম থেকেই খুনের ঘটনা সামনে আসতেই যেভাবে উদয়ন বারবার আমেরিকার কথা সামনে আনছিল৷ কেন উদয়নের সঙ্গে বারবার আমেরিকার সূত্র জড়াচ্ছে, তা জানতেই ভোপালে তার মামা ও মাসির সঙ্গে কথা বলবে পুলিশ৷ একইসঙ্গে তার দুই কাকার সঙ্গেও কথা বলবে বাঁকুড়া পুলিশ বলে জানা গেছে৷ তাঁদের বাড়ি সল্টলেক ও হাওড়ায়৷ ভোপালে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি তদন্তে তাই হাওড়া ও সল্টলেকেও উদয়নের কাকাদের বাড়ি পুলিশ যাবে বলে জানিয়েছে৷



মন্তব্য চালু নেই