জয়মালা কার গলায়, চলছে নানা বিশ্লেষণ

মঙ্গলবার তিন সিটিতে ভোট। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে দেশবাসী। কার গলায় উঠবে জয়মালা, সে নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা কল্পনা। প্রতি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের আগে বড় ধরনের জরিপ হলেও এবার হয়নি তেমন। তবে কার দিকে ঝুঁকছে মানুষ সে হিসাব-নিকাশ চলছে মুখে মুখে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি শিবিরে চলছে এনিয়ে চুলছেড়া বিশ্লেষণ।

সাধারণ ভোটাররা বলছেন, সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানা হিসাব থাকলেও মূল লড়াইটা হবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি শিবিরে। কারণে এই দুই শিবিরেই বিভক্ত জাতিকূল।

তবে এবারের নির্বাচনে প্রার্থীদের নিজ দলের বড় নেতাদের মনোভাব আর সমর্থনের ওপরও নির্ভর করছে অনেক কিছু। এছাড়া আঞ্চলিকতা তো আছেই। সিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারই বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় ‘অভিবাসী’। এ জন্য ঢাকাস্থ বিভিন্ন জেলা সমিতির কাছেও ভোটের জন্য ধরনা দিচ্ছেন প্রার্থীরা।

২০০২ সালের পর ১৩ বছরে ঢাকায় সিটি করপোরেশন নির্বাচন হচ্ছে। ভোট বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। দুই সিটির মোট ভোটার সংখ্যা ৪২ লাখ ১৬ হাজার ১২৭ জন। প্রায় ৪০ শতাংশ ভোটার প্রথমবারের মতো সিটি নির্বাচনে ভোট দেবেন। এ বিপুলসংখ্যক তরুণ ভোটার যাকে বেছে নেবেন তিনিই হাসবেন জয়ের হাসি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে মেয়র পদে প্রার্থীর সংখ্যা ১৬ জন। এই সিটিতে ভোটার সংখ্যা ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৭৫৩ জন। মূল লড়াই হতে পারে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাঈদ খোকন ও বিএনপি সমর্থিত মির্জা আব্বাসের মধ্যে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরান ঢাকার সন্তান সাঈদ খোকন পুরান ঢাকার ভোট একচেটিয়া পাবেন। একরাম উদ্দিন নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী জানান, ‘মোহাম্মদ হানিফ ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র। সাঈদ খোকন তার সন্তান হওয়ায় পুরান ঢাকার ভোট সবাই পাবেন তিনি।

এ ছাড়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে মির্জা আব্বাসের দ্বন্দ্ব পুরনো। এ কারণে খোকার সমর্থকদের একটি বড় অংশ সাঈদ খোকনকে ভোট দেবে বলে জানান একরাম।

তবে একই চ্যালেঞ্জে পড়তে পারেন সাঈদ খোকন নিজেও। পুরান ঢাকার এমপি হাজী সেলিম বিরোধিতা না করলেও সাঈদ খোকনের পক্ষে তার সমর্থকরা কতটা সক্রিয় থাকবে সেটা প্রশ্নবিদ্ধ।

আইনি বাধায় নির্বাচনের প্রচারে এক দিনের জন্যও নামতে পারেননি মির্জা আব্বাস। মামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে মাঠে নামতে পারেননি তার সব কর্মী-সমর্থক। ভোটের দিনে তাদের নামাতে পারবেন কি-না সেটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ আব্বাসের। এই প্রতিবন্ধকতা নেই সাঈদ খোকনের।

উত্তর সিটিতেও মূল লড়াই হবে আওয়ামী লীগের আনিসুল হক ও বিএনপির তাবিথ আউয়ালের মধ্যে। বিকল্পধারার মাহী বি চৌধুরী, গণসংহতির জুনায়েদ সাকিও ভোটের মাঠে ফ্যাক্টর। জাতীয় পার্টির প্রার্থী বাহাউদ্দিন বাবুলও এলাকার সন্তান হিসেবে ভোট টানতে পারেন।

উত্তরে ভোটার সংখ্যা ২৩ লাখ ৪৫ হাজার ৩৭৪। এই সিটিতে যেমন অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা পড়েছে, উল্টোদিকে এখানেই আছে কড়াইল বস্তি, আগারগাঁওয়ের বিএনপি বস্তি, মিরপুরের মোল্লা বস্তি, কালশী বস্তি, রামপুরা বস্তি, উত্তরার সেলিম বস্তি, ব্যাংক কলোনি। তিন লাখ ভোটারের বাস বস্তিতে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রার্থীরা ধনী হলেও জিততে হলে গরিবের ভোটই লাগবে।

বস্তি ছাড়াও মিরপুর, মোহাম্মদপুরের ৫১টি ক্যাম্পে বিহারি ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৭ হাজার। ২০০৭ সালে তারা ভোটাধিকার পেয়েছেন। এরপর এবারই প্রথম ভোট।

উত্তরেও আঞ্চলিকতা প্রভাব ফেলতে পারে। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ও মগবাজারে বৃহত্তর নোয়াখালীর বিপুলসংখ্যক মানুষের বসবাস। দুই প্রধান প্রার্থীও একই অঞ্চলের। আনিসুল হকের আদি নিবাস নোয়াখালী ও তাবিথ আউয়াল ফেনীর। এই আঞ্চলিকতাতেও ভোট ভাগ হয়ে যেতে পারে দুই প্রার্থীর মধ্যে।

দলের নেতাদের সমর্থন পাওয়ার ক্ষেত্রে আনিসুল হক ভালো অবস্থানে। উত্তরের আওয়ামী লীগের এমপিরা নেমেছেন প্রচারে। ঘটনাচক্রে বাবা আবদুল আউয়াল মিন্টুর বদলে বিএনপির সমর্থন পাওয়া তাবিথ আউয়াল এ দিক থেকে কিছুটা পিছিয়ে। তার রাজনীতিতে ‘হঠাৎ উত্থান’কে মেনে নিতে পারছেন না দলের অনেক নেতা। তবে তাবিথের মূল চ্যালেঞ্জ বিএনপির সমর্থকদের ভয় ভাঙিয়ে কেন্দ্রে নেওয়া।



মন্তব্য চালু নেই