মেডিকেল টিমের পরিদর্শন

জ্বীনের আছরে আছে স্কুলটি !

পাবনার চাটমোহর উপজেলার বরদানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অজ্ঞাত রোগে এক শিশুর মৃত্যু ও ১৫ জন অসুস্থ হওয়ার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। বরদানগর গ্রামে এখনও ‘ভূত’ বা ‘জ্বিন’ আতংক বিরাজ করছে।

জানা গেছে, বরদানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী রুমির মৃত্যু ও অন্যান্যরা অসুস্থ হওয়ার পর এই আতংক ছড়িয়ে পড়ে গ্রামজুড়ে। বিষয়টি প্রচার হওয়ার পর প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তি, জন প্রতিনিধি আর সংবাদকর্মীরা ছুটে যান বরদানগর গ্রামে। এই আতংক থেকে বাঁচতে বা পরিত্রাণ পেতে গ্রামবাসী শরণাপন্ন হন কবিরাজের কাছে। শনিবার কবিরাজ মোকছেদুর রহমান ওই গ্রামে গিয়ে জ্বিন হাজির করেন। এরপর ওই দিন রাতেই জোড়া খাসি জবাই করে মিলাদ মাহফিল করে তবারক বিতরণ করা হয়।

সোমবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা ডাঃ মঞ্জুরা রহমানের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম বরদানগর গ্রামে যান। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান তোঁতা ও সহকারী শিক্ষা অফিসার উপস্থিত ছিলেন। মেডিকেল টিমে ডাঃ মো আঃ বাতেন মোল্লা জুনিয়র কন্সাল্টেস্ট ( ইএনটি), মেডিকেল অফিসার ডাঃ রতন কুমার রায়, সহকারী সার্জন ডাঃ হাসানুজ্জামান টুটুল, ডাঃ আকতারুজ্জামান, মেডিকেল টেকনিশিয়ান নজরুল ইসলামসহ অন্যরা ছিলেন।

মেডিকেল টিমের সদস্যরা টয়লেট পরিদর্শন করেন, রক্ত পরিক্ষার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করাসহ অসুস্থ স্কুল ছাত্রী আঁখিকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। শিক্ষার্থীরা জানান, স্কুলের সাবেক শিক্ষিকা ইতিয়ারা বদলী হয়ে যাওয়ার পর শিক্ষার্থীরা ভেঙ্গে পড়েন। কারণ ওই শিক্ষিকা তাদের মায়ের মতো ভালবাসতেন।

গ্রামবাসী ও স্কুলের শিক্ষকরা জানান, গত ফেব্রুয়ারি মাসে ঘটনার সূত্রপাত। এক ছাত্রী ‘ভূত’ দেখেছে বলে সহপাঠিদের জানায়। এরপর কথিত ‘পুতুলের’ আবির্ভাব হয়। একে এক ছাত্রীরা নাকি পুতুল দেখতে থাকে। ছড়িয়ে পড়ে আতংক। গত ১২ মে স্কুলের কয়েকজন ছাত্রী হঠাৎ অস্বাভাবিক আচরণ করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরমধ্যে শুক্রবার রুমি নামের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মারা যায়। আতংক আরো বিস্তার লাভ করে। অভিভাবকরা মেয়েদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দেন।

শনিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার শফিকুল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান তোতা বরদানগরে গিয়ে অসুস্থ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলেন। তিনি জানান, যে শিশুটি মারা গেছে, সে আসলে খাদ্যে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল বলে জানা গেছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, ‘ভূত বলতে কিছু নেই, এটা সাইকোজনিক ইলনেস বা সামাজিক মনস্তাত্বিক ব্যাপার।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডাঃ মঞ্জুরা রহমান জানান, অসুস্থ শিক্ষার্থীদের রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। এটা আসলে মানসিক ব্যাপার। এদিকে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবুল বাশার শামসুজ্জামান ঘটনার ৩ দিন পর ঘটনাস্থলে যান। তিনি নাকি চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে চাটমোহরে আসেন রবিবার দুপুর নাগাদ আর বৃহস্পতিবার সকালেই রওনা হয়ে চলে যান।

Chatmohar Medical Tim Photo (01)

তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, কুসংস্কার থেকেই ভূত আতংক ছড়িয়েছে। এতো কিছুর পরও গ্রামবাসী ভূতে বিশ্বাস করে নানা রকম কবিরাজী দাওয়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। স্কুল এখন গ্রীষ্মকালীন ছুটি। স্কুল শুরু হলে অভিভাবকরা তাদের মেয়েদের আদৌও স্কুলে পাঠাবেন কিনা, সে শংকা প্রকাশ করেছেন প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম। গ্রামবাসীর মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর উপর জোর দিয়েছেন ইউএনও শফিকুল ইসলাম। তিনি মনে করেন সচেতনতাই পারে এ থেকে উত্তোরণ ঘটাতে।



মন্তব্য চালু নেই