জ্বিন তাড়ানোর নামে বর্বরতা

রাজশাহীর গৃহবধূ ফিরোজা বেগমের গায়ে জ্বিনের আছর থাকায় তার ননদ কমেলার অসুখ ভালো হচ্ছে না। এমনই দাবি ফেরোজাকে চিকিৎসা করতে আসা কবিরাজের।

অনেক কবিরাজ দিয়ে ঝাড়-ফুঁক করেও কমেলার অসুখ ভালো হয়নি। তাই কমেলার চিকিৎসা বাদ দিয়ে এবার শুরু হয় ফিরোজা বেগমের চিকিৎসা। ফিরোজা জানায়, ১৫ জুলাই আমার শ্বশুর বাড়িতে জ্বিনের আসন তৈরি করে স্থানীয় এক কবিরাজ (ওঝা) ডেকে আমাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে জোরপূর্বক জ্বিনের আসনে বসিয়ে ঝাড়-ফুঁক করতে থাকে। ঝাড়-ফুঁক করা অবস্থায় জ্বিন তাড়ানোর জন্য আমাকে লাঠি দিয়ে অমানুষিকভাবে পিটানো হয়। ফিরোজা বেগম যতবার চিৎকার করে বলে শরীরে কোনো জ্বিনের আছর নেই, সে সুস্থ-স্বাভাবিক আছে। ততোবার তাকে আরো বেশি পিটায়।

ওঝা জোরপূর্বক ফিরোজা বেগমের মুখ দিয়ে বলিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে যে ফিরোজার শরীরে জ্বিনের আসর আছে। এজন্য তার ওপরে একের পর এক লাঠি পড়তে থাকে। ফিরোজা এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। ঝাড়-ফুঁক বন্ধ করা হয়।

রাজশাহী তানোর উপজেলার হাসনাপাড়া (চোরখৈর) গ্রামে। এঘটনায় ফিরোজা বেগম নিজেই বাদি হয়ে তার স্বামীসহ তিনজনকে অভিযুক্ত করে রোববার থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।

ঘটনার পরেও অসুস্থ ফিরোজাকে কোনো প্রকার চিকিৎসা দেয়া হয়নি। ফিরোজা শ্বশুর বাড়ির লোকজনদের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বিষয়টি তার বাবা-মাকে জানান।

গত ১৭ জুলাই ফিরোজার বাবা সাহাবান আলী তার শ্বশুর বাড়িতে এলে তাদের ও মারপিট করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। শ্বশুর বাড়ির লোকজনদের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ফিরোজা অবশেষে চিমনা গ্রামে বাবার বাড়ি পালিয়ে চলে আসে। শনিবার সকালে ফিরোজাকে তার বাবা তানোর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করে দেন।

তানোর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের (আরএমও) ডা. রেজাউল ইসলাম বলেন, ফিরোজার শরীরের আঘাতের চিহ্ণ আছে। আঘাতের কারণে শরীরের অনেক স্থানে রক্ত জমে আছে। চিকিৎসা চলছে।

তানোর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, এবিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে।



মন্তব্য চালু নেই