বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষামন্ত্রী :

জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের পার্থক্য বুঝতে হবে

ইয়াজমি ইসলাম পলাশ, রাবি প্রতিনিধি: ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হলো নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করা। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে এ কাজ হয় না তাতে পাবলিকের টাকা খরচের কোনো মানেই নেই। জ্ঞান চর্চা না হলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় না বলে কলেজই বলতে হবে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরকে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে।’

মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহীতে অবস্থিত বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বছরপূর্তিতে নগরীর খড়খড়ি বাইপাস সংলগ্ন স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য নির্ধারিত স্থানে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর আগে বেলা ১১টায় জাতীয় সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে জাতীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন, পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী।

বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল আলম বেগ, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি করর্পোরেশনের সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন, নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল খালেক, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য ড. এম শাহ নওয়াজ আলী এবং বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপদেষ্টা ড. এম সাইদুর রহমান খান।

এসময় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে তরুণদের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে হবে। আর এজন্য তরুণদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন এনে নতুন শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে হবে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সরকারি-বেসরকারি বলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নয়। কারণ শিক্ষাক্ষেত্রে যে অর্থ ব্যয় হয় তার সমস্তটাই পাবলিকের অর্থ। তাই শিক্ষার্থীদের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বলে আলাদা করার কোনো সুযোগ নেই। আজকের তরুণ প্রজন্মকে ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দিতে হবে। তাদের হাত ধরেই এগিয়ে যাবে দেশ। তাই মানসম্মত উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তরুণ প্রজন্মকে সমাজকে বদলানোর পরিকল্পনা করতে হবে। কারণ তারাই ভবিষ্যত অগ্রযাত্রার পথ প্রদর্শক হিসেবে থাকবে।

উচ্চ শিক্ষার মান নিয়ে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চ শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সেদিকে নজর দেয়া দরকার। আমরা উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য বিশ্ব ব্যাংকের কাছে ঋণ নিয়েছি। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তা শিক্ষাখাতে ব্যয় করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করতে হবে। শিক্ষকদের গবেষণা কর্ম বাড়াতে হবে। কারণ মানসম্মত শিক্ষার অন্যতম গ্যারান্টি হলো মান সম্মত শিক্ষক। তবেই শিক্ষার্থীদের মানসম্মত উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা সম্ভব।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ৬টি, বর্তমানে ৩৮টি। ২০০৯ সালে দেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ৫৬টি, বর্তমানে তার সংখ্যা ৯১। একটা সময় দেশে লাগামহীনভাবে যত্রতত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল। কিন্তু ২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ফলে তা এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এখন আর চাইলেই যে কেউ যত্রতত্র রাতারাতি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নতুন আইন মেনে চলার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। কেউ সে আইন অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স্বাধীনতার মাসে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ এ দুটি মাস গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতার বিরোধী মুক্তিযুদ্ধে তাদের পরাজয় মেনে নিতে না পেরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেছে। দল হিসেবে যারা বাংলাদেশের অস্তিত্বকে মেনে নিতে পারেনি সেই জামায়াত দেশের জাতীয় পতাকা পুড়িয়েছে। বিভিন্ন সময় এদেশের স্বাধীনতাকে ভুলুণ্ঠিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। কিন্তু তারা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। ৭১’এ যারা মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছে তাদের বিচার হচ্ছে। তাদের কোনো ক্ষমা নেই।

দেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আমরা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে পৌঁছাতে চাই। বর্তমানে শেখ হাসিনা সরকারের হাত ধরে বাংলাদেশ সে পথেই এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি এবং আমাদের লক্ষ্যমাত্রার বিভিন্ন দিকেই সফল হয়েছি। যা বাংলাদেশের এগিয়ে চলার দৃষ্টান্ত। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দী এবং জেমস।

এসময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মিজানউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে হলে শিক্ষাক্ষেত্রেই এগুতে হবে। আর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় চার বছরে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে চরম মেধাকে গুরুত্ব দেয়া হয়। এটা খুবই প্রশংসার দাবি রাখে।

আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে আয়োজন করা হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। এতে গান পরিবেশন করেন জেমস ও সুরীর নন্দিসহ বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং রাজশাহীর ব্যান্ডদল আরশী। এই অনুষ্ঠান চলে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত।



মন্তব্য চালু নেই