জোর করে যৌনাচার ধর্ষণ নয়!

মেনোপজ অবস্থায় কোনো নারীর সঙ্গে জোর করে যৌনমিলন করলে ধর্ষণের আওতায় পড়বে না। একটি মামলায় শুনানিতে এমনটাই রায় দিয়েছেন দিল্লি হাইকোর্ট! সাম্প্রতিক এ রায়ে হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছেন সবাই।

ভারতের নিম্ন আদালতে এক ধর্ষণের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল আচেয় লাল নামের এক ব্যক্তি। তাকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন নিম্ন আদালত। হাইকোর্ট সেই আচেয় লালকেই বেকসুর খালাস দিয়েছেন।

হাইকোর্টের বিচারপতি প্রদীপ নন্দরাজোগ ও মুক্তা গুপ্তার মতে, যেহেতু নির্যাতিতা ঘটনার সময় মেনোপজ পেরিয়ে গিয়েছিলেন, তাই এ ক্ষেত্রে ‘সঙ্গমের ক্ষেত্রে বলপ্রয়োগ করা হলেও এই ঘটনাকে জবরদস্তি বলা যায় না।’

৪০-৫৫ এই বয়ঃসীমার এর কাছাকাছি যেকোনো সময়ে যদি কোনো অস্বাভাবিক কারণ ছাড়া টানা ১২ মাস নারীর মেনসট্রুুয়েশন বন্ধ থাকে, তবে তাকে মেনোপজ বলে।

নিগৃহীতা নারীর ঘটনার সময় বয়স ৬৫ থেকে ৭০-এর মধ্যে ছিল।

দিল্লি হাইকোর্টের দুই বিচারপতির মতে, যদি মেনোপজ উত্তর কোনো নারীর সঙ্গে জোর করে সঙ্গম ধর্ষণের আওতায় পড়ে না। এই রায়ে তারা পরিষ্কারভাবে কোন বয়স পর্যন্ত যৌন নির্যাতনের শিকার নারীদের ধর্ষিতা বলা হবে, তার সীমারেখা টেনেছেন।

আইনজীবী ও সমাজকর্মী বৃন্দা গ্রোভার সরাসরি দিল্লি হাইকোর্টের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে প্রশ্ন তুলেছেন ‘কিসের ওপর ভিত্তি করে আদালত সিদ্ধান্ত নিলেন এটি ধর্ষণের ঘটনা নয়? মেনোপজের সঙ্গের ধর্ষণের সম্পর্কটাই বা কী?’

গ্রোভারের মতে, মেনোপজ একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। এর ওপর ভিত্তি করে ধর্ষণ হয়েছে না হয়নি- তার বিচারের বিন্দুমাত্র কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না।

দিল্লি হাইকোর্ট এই ঘটনাকে ধর্ষণ হিসেবে খারিজ করার আগে আরো একটি অদ্ভুত যুক্তি দিয়েছেন। বিচারক জানিয়েছেন, যৌনাঙ্গ ছাড়া নিগৃহীতার শরীরে আর কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না।

মথুরায় নৃশংস ধর্ষণের ঘটনার পর ভারতীয় আইনে দুটি পরিবর্তন আনা হয়। প্রথমত, ধর্ষণের ঘটনায় আঘাত সম্পর্কিত কোনো জবাবদিহি করতে বাধ্য নন ধর্ষিতা। শেষটি সম্মতি ছাড়া সঙ্গম সব সময়ই ধর্ষণের আওতায় পড়বে। গ্রোভারের মতে, এই রায় সুপ্রিম কোর্টবিরোধী।

বিভিন্ন নারী সংগঠন তীব্র ভাষায় এই রায়ের সমালোচনা করেছে। একটি নারী সংগঠন বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে ‘৮০ বছরের এক বৃদ্ধাও ধর্ষণের শিকার হতে পারেন। কিন্তু এর বিচার পাওয়া অধিকার তার রয়েছে।

২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে উত্তর দিল্লিতে নিজের বাড়িতে উদ্ধার হয় নিগৃহীতার মৃতদেহ। সেই বাড়ি থেকেই মাতাল অবস্থায় গ্রেফতার হয় আচেয় লাল।

তথ্যসূত্র : জিনিউজ।



মন্তব্য চালু নেই