জেনে নিন শিশুর মাথার উকুন দূর করার উপায়

বেশিরভাগ শিশুর মাথাতেই উকুনের আক্রমণ হয় যা মাথার তালুতে চুলকানির সৃষ্টি করে। এই ছোট্ট পরজীবীগুলো মাথার তালুতে হামাগুড়ি দিয়ে হাঁটে এবং রক্ত শোষণ করে। যদিও এরা তেমন কোন মারাত্মক অসুস্থতার সৃষ্টি করেনা তবুও স্বাস্থ্যগত পরিচ্ছন্নতার জন্য এদের প্রতিরোধ করা প্রয়োজন। উকুনের উপদ্রবের লক্ষণ হচ্ছে মাথার তালুর চুলকানি এবং ঘাড়ের পেছনে ছোট ছোট লাল দাগ ও ফোলা অংশ দেখা যায়। মাথার উকুনের আকার তিল বীজের সমান হয় এবং দেখতে ধূসর-বাদামী বা মিছরি রঙের হয়। আপনার শিশুর মাথাকে উকুন মুক্ত করার জন্য কিছু উপায় জেনে নেই আসুন।

১। শিশুর চুল নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করলেই উকুনের উপদ্রব আছে কিনা তা বুঝতে পারা যায়। কারণ উকুন খুব দ্রুত বংশবিস্তার করে। উকুনের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে মাত্র ৭-১০ দিন লাগে এবং এই উকুনের প্রাপ্ত বয়স্ক হতে সময় লাগে মাত্র ৬-১০দিন। তখন তারা নিজেরাই ডিম পাড়ার উপযুক্ত হয়ে যায়। বর্তমান একটি জরিপে দেখা গেছে যে, ১০ জনের মধ্যে ৯ জন ফার্মাসিস্টই মনে করেন- অভিভাবকরা তাদের সন্তানের চুল প্রায়ই যথেষ্ট পরীক্ষণ করেন না।

২। উকুন খুঁজে বের করা খুব সহজ কাজ নয়। নবজাতক উকুন খুবই ছোট থাকে আর উকুনের ডিম স্বচ্ছ থাকে ও মাথার তালুর সাথে লেগে থাকে। ডিম ফোটার পরে খোলসটা চুলের মধ্যেই থেকে যায়। খালি খোলসটা সাদা বর্ণ ধারণ করে যা খুব সহজেই চিহ্নিত করা যায়। উকুন ধরার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে বিশেষ ধরণের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানো। এই চিরুনির দাঁত গুলোর দূরত্ব ০.৩ মিলিমিটারের বেশি হবেনা। যুক্তরাজ্যের মেডিক্যাল এন্টোমোলজি সেন্টারের ফর্মার নার্স কনসালটেন্ট ও হেড লাইস স্পেশিয়ালিস্ট ক্রিস্টিন ব্রাউন বলেন, “উকুনের ছয়টি পা আছে। বনের মধ্যে গিবন যেভাবে লুকিয়ে থাকে উকুন ও সেভাবে চুলের মধ্যে পালিয়ে বেড়ায়। তাই যখনই চিরুনি দিয়ে আঁচড়ানো হয় তখন তারা মাথার এক অংশ থেকে আরেক অংশে চলে যায়”। উকুন নিধনের আগে মাথায় হালকা তেল দিয়ে নিলে ভালো হয়। মাথার চুল গুলোকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নিয়ে আঁচড়ান।

৩। উকুননাশক শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে দিন, তাহলেও উকুন দূর হবে। আপনার সন্তানের চুল যদি বড় হয় তাহলে স্কুলে যাওয়ার সময় পনি টেইল বা বেণী বা ঝুঁটি করে দিন।

৪। উকুন প্রতিরোধ করার প্রথম উপায় হচ্ছে উকুন আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। আপনার সন্তানকে তাঁর যে বন্ধুটি উকুনের সমস্যায় আক্রান্ত তার থেকে দূরে থাকার জন্য বলুন, যদিও এটি মেনে চলা শিশুদের পক্ষে কঠিন।

৫। চিরুনি ও মাথায় ব্যবহৃত অন্যান্য জিনিস অন্য কারো সাথে শেয়ার না করা উচিৎ। চুলের কাঁটা, ক্লিপ, ব্যান্ড, চিরুনি ও অন্যান্য জিনিসের মধ্যে উকুন লেগে থাকতে পারে। আপনার সন্তানকে এই জিনিসগুলো অন্য শিশুদের সাথে শেয়ার করতে নিষেধ করুন বিশেষ করে যাদের মাথায় উকুন আছে তাদের সাথে।

৬। হেলমেট, স্কার্ফ, তোয়ালে, ক্যাপ ইত্যাদি জিনিস গুলোও অন্যদের সাথে ভাগাভাগি করতে নিষেধ করুন আপনার শিশুকে। উকুন ব্যক্তিগত ব্যবহার্য জিনিস যেমন- স্কার্ফ, তোয়ালে, ক্যাপ, বিছানার চাদর এবং পোশাকের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। তাই আপনার গৃহেই যদি কেউ উকুনে আক্রান্ত থাকে তাহলে এই জিনিস গুলো ভাগাভাগি করা থেকে বিরত থাকুন। “মানুষের মাথা ছাড়া উকুন দেড় ঘন্টার মত বেঁচে থাকতে পারে”। ক্রিস্টিন ব্রাউন এর ব্যাখ্যায় বলেন, “যার মাথায় উকুন আছে তার ক্যাপটি যখন আপনি পড়েন তখন উকুন খুব দ্রুত ক্যাপটি থেকে আপনার মাথায় চলে আসে অথবা তার ব্যবহৃত চিরুনি থেকেও আপনি আক্রান্ত হতে পারেন”।

৭। আপনার শিশুর জামা কাপড় ও অন্যান্য জিনিস আলাদা রাখুন। উকুন কাপড় চোপড়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে। যদি আপনার সন্তানের মাথায় উকুন হয় তাহলে তাঁর ব্যবহার্য জিনিস গুলো অন্যদের থেকে আলাদা করে রাখুন।

আপনি যদি লক্ষ্য করেন যে, হঠাৎ করেই আপনার সন্তান কয়েকবার মাথা চুলকাচ্ছে তাহলে সূক্ষ্ম দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে দিন এবং মাথাটি ভালো করে পরীক্ষা করুন। ছুটির দিনে ভালো করে আঁচড়ে দেবেন সেই অপেক্ষায় বসে থাকবেন না। দ্রুত উকুন নাশের ব্যবস্থা নিন। উকুন যদিও তেমন কোন অসুস্থতার সৃষ্টি করেনা কিন্তু এরা সামান্য পরিমাণে মাথার তালুর রক্ত শোষণ করে এবং এর ফলে চুলকানির সৃষ্টি করে। যার ফলে ইনফেকশন হতে পারে।



মন্তব্য চালু নেই