জেনে নিন, মেয়েদের চুল পড়ার কারণগুলো কী?

মেয়েদের চুল পড়ে যাওয়াকে ডাক্তারি ভাষায় অ্যানড্রোজেনেটিক অ্যালোপিসিয়া বলে।

মেয়েদের মাথার উপরিভাগের চুল ও দুপাশের চুল পাতলা হয়ে যায়। এক-তৃতীয়াংশ নারীর এ সমস্যা হয়। প্রতিদিন ১০০ থেকে ১২৫টি চুল পড়ে স্বাভাবিকভাবেই। চুল পড়ে যাওয়া তখনই সমস্যা, যখন দিনে ১২৫টির বেশি চুল পড়ে এবং সেই চুল গজায় না। পরিবারে চুল পড়ার সমস্যা থাকলে চুল পড়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

চুল পড়ে যাওয়াকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়—অ্যানাজেন ইফফ্লুডিয়াম ও টেলোজেন ইফফ্লুভিয়াম। নানা রকম ওষুধ ও কেমোথেরাপির জন্য যখন চুল পড়ে, তখন তাকে অ্যানাজেন ইফফ্লুডিয়াম বলে। আর চুলের ফলিকল যখন রেস্টিং স্টেজে যায়, তখন তাকে টেলোজেন ইফফ্লুভিয়াম বলে। চুলের ফলিকল রেস্টিং স্টেজে যাওয়া মানে চুল আর বড় না হওয়া এবং একসময় চুল ঝরে যাওয়া। এর কারণ :

* শারীরিক অসুস্থতা। যেকোনো অস্ত্রোপচারের পর, রক্তস্বল্পতা, ওজন কমে যাওয়া, হজমের সমস্যা।

* মানসিক চাপ, অতিরিক্ত কর্মব্যস্ততা, পরিবারের কারো মৃত্যু।

* থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা।

* ডায়াবেটিস পলিসিসটিক ওভারি।

* মূত্রনালির প্রদাহ।

* গর্ভাবস্থা, পরিবার পরিকল্পনার জন্য পিল খাওয়া।

* ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া।

* অতি মাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ গ্রহণ, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ গ্রহণ।

ডায়েট ও চুল পড়া

ওজন কমানোর জন্য অতিরিক্ত ডায়েট করা অনেক সময় চুল পড়ার কারণ। অবশ্যই ডায়েটিশিয়ান, নিউট্রিশনিস্ট কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার তালিকা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। নির্দিষ্ট ডায়েটের সঙ্গে ভিটামিন ও মিনারেল সাপ্লিমেন্ট খাওয়া প্রয়োজন। আবার অতিরিক্ত ভিটামিন ‘এ’ গ্রহণে চুল পড়ে। সুতরাং ওজন কমাতে চাইলে নিজের মনমতো না করে ডায়েটিশিয়ান, নিউট্রিশনিস্ট, চিকিৎসক ও ত্বক বিশেষজ্ঞের মতামত নেবেন।

শারীরিক অসুস্থতা, মানসিক চাপ ও চুল পড়া

শারীরিক অসুস্থতা, অপারেশন হওয়া ও মানসিক চাপ চুল পড়ার অন্যতম কারণ। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায়, চুল ঝরে গেলেও আর নতুন চুল গজায় না এবং চুল বাড়ে না। শরীর সারাতে ব্যস্ত থাকে সব শক্তি এবং অনাদরে পড়ে যায় চুল। এসব ক্ষেত্রে চুল পড়তে থাকে তিন মাস, আবার চুল গজাতে সময় লাগে তিন মাস। অর্থাৎ ছয় মাস সময় লাগে চুল স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে। তবে শারীরিক ও মানসিক চাপ খুব বেশি এবং দীর্ঘস্থায়ী হলে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে চুল পড়তে পারে। রক্তস্বল্পতা ও থাইরয়েডের সমস্যায়ও চুল পড়ে। সুতরাং খুব বেশি চুল পড়লে রক্ত পরীক্ষা ও রোগ নির্ণয় করা প্রয়োজন।

হরমোনের পরিবর্তন ও চুল পড়া

হরমোনের পরিবর্তনের সঙ্গে নারীদের চুল পড়ার সম্পর্ক আছে। গর্ভাবস্থায় কিংবা জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়া বন্ধ করলে চুল পড়তে পারে। হরমোনের পরিবর্তনের তিন মাসের মধ্যে এই পরিবর্তন লক্ষ করা সম্ভব। আবার সঠিক যত্নে তিন মাসের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। রজঃনিবৃত্তি বা মাসিক বন্ধ হওয়ার পরও নারীদের চুল পড়ে।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপিকা, ফার্মাকোলজি অ্যান্ড থেরাপিউটিক্স, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ।



মন্তব্য চালু নেই