জেনে নিন, মানুষ কেন চুমু খায়?

গভীর ভালোবাসায় প্রিয়জনকে সিক্ত করতে মানুষের মধ্যে চুমুর প্রচলন অনেক দিনের। এই চুমুরও রয়েছে বিভিন্ন ধরন। বাবা-মা ও সন্তানের মধ্যে যে চুমু বিনিময় হয়, এটা একরকম। স্বামী-স্ত্রী ও প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে চুমু অন্যরকম। এই চুমু অনেক সময় দীর্ঘও হয়ে থাকে। কিন্তু সব সময় তা কি নিরাপদ?

এই দীর্ঘ চুমুর ক্ষেত্রে কারও মুখে আরেকজনের লালার মাধ্যমে প্রবেশ করতে পারে আট কোটি ব্যাকটেরিয়া। এসব অণুজীব অনেক সময় ঘটাতে পারে বড় ধরনে বিপদ। এরপরও মানুষ কিন্তু থেমে নেই। বিশেষ করে ভালোবাসার প্রথম চুমুর কথা কেউ কখনো ভুলতে পারে না, তা যে স্মৃতি যেমনই হোক না কেন। প্রেম-ভালোবাসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ চুমু। এর ইতিবাচক প্রভাব ব্যাপক। কিছু সমাজে সম্পর্ক গড়া ও টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে চুমু বড় ধরনের ভূমিকা রাখে বলে মনে করা হয়। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর সমাজে। তারা মনে করে থাকে, গভীর আবেগে চুমু দেওয়া মানুষের সর্বজনীন আচরণ।

সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে অন্যান্য সমাজের সংস্কৃতিতে অর্ধেকেরও কম মানুষের মধ্যে চুমুর প্রচলন রয়েছে। বিশাল প্রাণী জগতের অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে চুমু খাওয়ার ঘটনা বিরল। অবশ্য শিম্পাঞ্জির মতো বুদ্ধিমান প্রাণীও চুমু খেয়ে থাকে। বিশ্বের অনেক দেশের অনেক সমাজে চুমু খাওয়ার বিষয়টিকে অশালীন ও উদ্ভট আচরণ হিসেবে দেখা হয়। তাহলে এই উদ্ভট আচরণের পেছনে কারণটা কী? চুমুতে যদি উপকারই হয়, তাহলে প্রাণী জগতের বেশির ভাগ প্রাণী চুমু খায় না কেন?

চুমু পছন্দ করা নিয়ে নতুন এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, রোমান্টিক অনুভূতি নিয়ে চুমু খাওয়ার যে সংস্কৃতি, তা খুব বেশি নয়। ১৬৮টি সংস্কৃতির মধ্যে এই সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, মাত্র ৪৬ শতাংশ ভালোবাসার অনুভূতি নিয়ে চুমু খেয়ে থাকে। এই সমীক্ষার ফলাফল আগের ধারণা পাল্টে দিয়েছে। আগে মনে করা হতো, চুমু খাওয়ার বিষয়টি মানুষের সর্বজনীন আচরণ এবং বিশ্বে ৯০ শতাংশ মানুষ এ আচরণে অভ্যস্ত। সমীক্ষায় সন্তানকে বাবা-মায়ের আদর-সোহাগের চুমুর বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। কেবল প্রেমিক-প্রেমিকা ও স্বামী-স্ত্রীর অধরাবদ্ধ চুমুর বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়েছে।

সমীক্ষায় বেশ কিছু শিকারি নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে চুমুর প্রচলন নেই এবং এ ধরনের কোনো আকাঙ্ক্ষাও কারও মধ্যে দেখা যায় না। বরং অনেক নৃগোষ্ঠীর মানুষ চুমু খাওয়াকে বিদ্রোহের মনোভাব হিসেবে দেখে। ব্রাজিলের মেহিনাকু নৃগোষ্ঠীর মানুষ চুমু খাওয়াকে ‘অশ্লীল’ মনে করে।

এই সমীক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত লাস ভেগাসের নেভাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক উইলিয়াম জাঙ্কোউইয়াক বলেছেন, ভালোবাসার আবেগে চুমু খাওয়ার বিষয়টিকে আগে যেমন মানুষের প্রায় সর্বজনীন আচরণ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়েছিল, নতুন এই সমীক্ষা সে ধারণা পাল্টে দিয়েছে। এখন ধারণা করা হচ্ছে, চুমু খাওয়ার প্রচলন এসেছে পশ্চিমা সমাজ থেকে, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে।

আবেগ-ভালোবাসার চুমুর বিষয়ে আবার অন্যরকম ব্যাখ্যা দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাফায়েল ডব্লিউলোডারস্কি। বিভিন্ন সংস্কৃতি থেকে চুমু কীভাবে পরিবর্তিত হয়ে অন্য সংস্কৃতিতে জায়গা করে নিয়েছে এ ব্যাপারে তিনি কিছু তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করেছেন।

পুরোনো তথ্যপ্রমাণ বলে, সাড়ে তিন হাজার বছরের বেশি সময়ের আগে হিন্দু বৈদিক সংস্কৃতিতে চুমুর প্রচলন ছিল। ওই সময় অবশ্য এটা আবেগ-অনুভূতির কোনো বিষয় ছিল না। এতে বরং আত্মশুদ্ধির একটা বিষয় ছিল। প্রাচীন মিসরীয় হাইয়ারওগ্লিফিকস চিত্রে চুমু খাওয়ার ছবি রয়েছে।

মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণীর মধ্যে মুখ বা ঠোঁট ব্যবহার করে চুমু খাওয়ার প্রচলন নেই বললেই চলে। ব্যতিক্রম শুধু শিম্পাঞ্জি ও তাদের নিকট আত্মীয় বোনোবোর বেলায়। শিম্পাঞ্জির মধ্যে স্ত্রীর চেয়ে পুরুষের মধ্যে চুমু খাওয়ার প্রচলন বেশি। দুই পুরুষের মধ্যে মল্লযুদ্ধ হওয়ার পর মিলমিশ হলে তখন পরস্পর চুমু খেয়ে সন্ধি স্থাপন করে তারা।



মন্তব্য চালু নেই