জেনে নিন দেহের জন্য জরুরী ফাইবারের কার্যকারিতা

আমাদের প্রাত্যহিক খাবারের সবচেয়ে গুরুত্ব পূর্ণ উপাদান হচ্ছে ফাইবার বা আঁশ। ফাইবারে ক্যালোরি কম থাকে এবং হজম সহায়ক। তাই ওজন হ্রাসের জন্য ফাইবার আদর্শ খাদ্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনের শুরুতে উচ্চমাত্রার ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন-ওটস,গমের তৈরি রুটি, ফল, সবুজ শাকসবজ, প্রোটিন সালাদ ইত্যাদি গ্রহণ করা প্রয়োজন। ফাইবার পেট ভরা রাখে ফলে ক্ষুধা কম লাগে এবং শরীরে এনার্জি প্রদান করে।একজন মানুষের দৈনিক ৩০গ্রাম ফাইবার গ্রহণ করা উচিত। কিন্তু অনেকেই এটার অর্ধেকও গ্রহণ করেন না।

ফাইবার দুই প্রকারের হয়- দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয়। শসা, শিম জাতীয় সবজি, জাম জাতীয় ফল ও বাদামে দ্রবণীয় ফাইবার থাকে। এরা অন্ত্রে জেল-এ পরিণত হয়। ফলে হজম ক্রিয়া ধীরে ধীরে হয় যা পেট ভরা রাখে। এই জন্যই বলা হয় ফাইবার ওজন নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করে।

গাঢ় সবুজ শাকসবজি,সবুজ মটরশুঁটি,এবং গাজর এ অদ্রবণীয় ফাইবার থাকে। এই ফাইবার দ্রবীভূত হয় না। এটা মলের পরিমান বাড়ায় এবং অন্ত্রের মধ্য দিয়ে বর্জ্য পদার্থ সহজে বের হয়ে যেতে সাহায্য করে। এমন অনেক ফল ও সবজি আছে যাদের মধ্যে উভয় প্রকারের ফাইবারই থাকে।

ফাইবারের আরো কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা জেনে নেই আসুন-

১। ক্যান্সার নিরাময় করে

ইউএস ক্যান্সার ইন্সটিটিউট এর একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, উচ্চমাত্রার ফাইবার গ্রহনকারীদের কলোরেক্টাল ক্যান্সার এর ঝুঁকি কম থাকে। এর জন্য শস্য ও ফলের ফাইবার বেশি গ্রহণ করতে হবে।

২। রক্তচাপ কমায়

ফাইবার শরীরের ব্লাড প্রেশার লেভেল নিয়ন্ত্রণ করে। ফাইবার সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক উভয় প্রকারের রক্তচাপের মাত্রা কমায়।

৩। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে

ফাইবার রক্তের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখে। দ্রবণীয় ফাইবার ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত দের শরীরে চিনির শোষণ কমাতে সাহায্য করে।এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, ফাইবার টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমায়।

৪। হৃদপিণ্ডের জন্য ভালো

একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে যে,যারা উচ্চ মাত্রার ফাইবার গ্রহণ করেন তাদের হার্ট ডিজিজ হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ৪০ ভাগ কমে যায়। বিশেষ করে জই ফলের(Oat)ফাইবার হৃদপিণ্ডের জন্য ভালো, কারণ এই ফাইবার ভালো কোলেস্টেরল এইচ ডি এল এর মাত্রা ঠিক রেখেই খারাপ কোলেস্টেরল এল ডি এল এর মাত্রা কমায়।

৫। হেমোরয়েড বা পাইলস এর ঝুঁকি কমায়

নিয়মিত উচ্চমাত্রার ফাইবার গ্রহণ করলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয় না। তাই হেমোরয়েড বা পাইলস এর ঝুঁকি কমে।

৬। ওজন কমায়

ফাইবারে কোলেস্টেরল কম থাকে।অনেকক্ষণ যাবত পেট ভরা রাখে বলে ক্ষুধা কমায় ফলে বেশি খাওয়ার প্রবণতা কমে।এভাবেই ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।এক গবেষণায় দেখা গেছে যে,যে সকল মহিলা বেশি পরিমাণে ফাইবার গ্রহণ করেন তাদের ওজন ধারাবাহিক ভাবে কমে।

এছাড়াও ফাইবার ত্বকের জন্য ভালো,শরীর থেকে ইস্ট ও ছত্রাক বের করে দেয় ফলে ব্রণ ও র‍্যাস হয়না,কিডনি ও পিত্ত থলির পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমায় এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।

সতর্কতা:

ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের সাথে প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে নাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য এর সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।যদি আপনার ফাইবার গ্রহনের পরিমাণ বাড়াতে হয়,তাহলে আস্তে আস্তে বাড়াতে হবে।কারণ হঠাত করে বেশি ফাইবার গ্রহণ করলে পেটে গ্যাস উৎপন্ন করতে পারে ফলে পেট ফাঁপার সমস্যা হতে পারে।

লিখেছেন-

সাবেরা খাতুন



মন্তব্য চালু নেই