জেনে নিন, ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় অত্যন্ত শক্তিশালী ও কার্যকরী ১৬টি ভেষজ উপাদান

ডায়াবেটিস শুধু উন্নত দেশগুলোতেই নয়,এটা ক্রমবর্ধমান ভাবে উন্নয়নশীল দেশ গুলোতেও মহামারী আকার ধারণ করছে। তবে গুরুত্বর ও দীর্ঘস্থায়ী অবস্থার এই রোগটির জন্য জীবন যাপনের একটি ভালো মান বজায় রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম ছাড়াও বেশ কিছু ধরনের ভেষজ উপাদানের ব্যবহার ভালো সাহায্য করতে পারে। উপাদানগুলো আমাদের সবার বেশ পরিচিত এবং সহজলভ্য। তাই এই উপাদানগুলো সম্পর্কে ধারনা সবারই থাকা উচিত।

মেথি- এই বীজটিতে অনেক বেশি পরিমানে আঁশ থাকে যা হজমের সময় শর্করার ভাঙ্গনের গতিকে ধীর করে ফলে রক্তের শর্করার মাত্রা স্থির থাকে।

করল্লা- এই সবজিতে থাকা বেশ কিছু রাসায়নিক পদার্থ রক্তের শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং এটি ক্ষুধা উদ্দীপক হিসেবে কাজে করে বলে ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভালো উপকারি।

জামরুল- এই ফলটিতে jamboline নামক একটি রাসায়নিক পদার্থ আছে যা শর্করাকে চিনিতে রূপান্তরিত হতে বাধা দিয়ে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

বেল পাতা- এই পাতার ডায়াবেটিক বিরোধী গুনাগুন আছে। তাই বেল পাতার রস খেলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।

রশুন- এতে থাকা Allicin নামক যৌগ ডায়াবেটিকের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য প্রমাণিত।

অ্যালোভেরা- লিভারের ঔষধ হিসেবে কাজ করে অ্যালোভেরা। তাই এটা লিভারকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে রক্তের সুগারের শর্করার নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে।

বাধাকপি- Cruciferous গোত্রীয় অন্যান্য সবজির মতো বাধাকপিও রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়মিত করতে এবং নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

হলুদ- আমলকীর সাথে হলুদ মিশিয়ে খেলে তা ডায়াবেটিস এর চিকিৎসায় বেশ কার্যকরী।

দারুচিনি- চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় প্রমানিত যে দারুচিনি রক্তের শর্করার এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা উন্নত করে।

কারি পাতা- সকালে তাজা কারি পাতা খেলে তা ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমায়।

আমলকী- করলার সাথে আমলকীর রস মিশিয়ে খেলে তা ইন্সুলিনের প্রাকৃতিক উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে।

ইসবগুল- এটি ক্ষুদ্রান্তে চিনি শোষণে বাধা দিয়ে রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করে।

শিম- এটি জটিল শর্করা এবং খাদ্য আঁশের একটি সমৃদ্ধ উৎস। এছাড়া এটি ইন্সুলিনের উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে।

মুলা এবং শসা- শসা ও মুলার শাকে আছে উচ্চ মাত্রার আঁশ এবং খুব কম পরিমান শর্করা, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বেশ ভালো ভূমিকা রাখে।

পেঁয়াজ- রশুনের মতো পেঁয়াজও Allium গোত্রীয়। এই গোত্রের সক্রিয় উপাদান allicin ও allyl propyl disulphide দুটিই হাইপোগ্লাইসেমিক পদার্থ হিসেবে পরিচিত। হাইপোগ্লাইসেমিক পদার্থ রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

আদা- তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ যুক্ত এই মূলটিতে থাকা Gingerol নামক যৌগ দেহের পেশী কোষে গ্লুকোজ গ্রহণ করতে সাহায্য করে। যার ফলে সামগ্রিক রক্তের শর্করার মাত্রা কমায়।

ডায়াবেটিস একটি গুরুতর অবস্থা এবং দিন দিন এর ব্যাপক প্রকোপ সাধারণ জনগনের স্বাস্থ্যের উপর একটি বড় হুমকি হয়ে উঠছে। এই রোগ মানুষকে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির কারনে সৃষ্ট অন্ধত্বের ঝুঁকিতে নিয়ে যায় এবং এর ফলে যে পরিমান অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কেটে বাদ দিতে হয় তা অনেক সময় কোন দুর্ঘটনা বা ট্রমার কারনেও করতে হয় না।

দীর্ঘমেয়াদে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এবং আরো গুরুত্বর ক্ষতি এড়ানোর জন্য দিনের পর দিন একটি স্বাস্থ্যকর মাত্রার মাঝে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা হচ্ছে একটি অন্যতম শর্ত। তাই উল্লেখিত ভেষজ উপাদান গুলো প্রয়োগের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর খাদ্য ব্যবস্থাপনা এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

লেখিকা
শওকত আরা সাঈদা (লোপা)
জনস্বাস্থ্য পুষ্টিবিদ
এক্স ডায়েটিশিয়ান,পারসোনা হেল্‌থ
খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান(স্নাতকোত্তর)(এমপিএইচ)

তথ্য সূত্রঃ লিভিং ট্র্যাডিশনালী



মন্তব্য চালু নেই