জেগে উঠছে আধুনিক ডাইনিরা!

ইংরেজিতে শব্দটি আসলে ‘উইচ’। প্রাচীন ইংরেজি শব্দ ‘উইক্কা’ থেকে উইচ শব্দটির আর্বিভাব হয়েছে। সাবেক ইংরেজি ভাষায় উইক্কা শব্দের অর্থ ছিল ‘বুদ্ধিমান নারী’। যদিও এই বুদ্ধিমান নারীদেরই যুগে যুগে এই বিদ্যার জন্য হত্যা করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে বিভিন্ন পর্যায়ে ডাইনিদের বিভিন্ন উপকথা জানা যায়। একটা সময় ছিল যখন যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ডাইনিদের বেশ রমরমা অবস্থা ছিল।

সাধারণ মানুষদের মাঝেও ডাইনিদের প্রতি এক ধরনের বিশ্বাস কাজ করতো। বিশেষত রোগমুক্তি ও জাদু-টোনার কাজে তৎকালীন মানুষেরা ডাইনিদের শরণাপন্ন হতো। কিন্তু মধ্যযুগ পরবর্তী সময়ে গোটা যুক্তরাজ্য থেকেই ধীরে ধীরে ডাইনিদের নিষিদ্ধ করা শুরু হয়। আর এই নিষিদ্ধের খেসারত দিতে হয়েছে কয়েক হাজার ডাইনিকে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। ফাঁসি, আগুনে পুড়িয়ে কিংবা অন্যান্য মধ্যযুগীয় বর্বর কায়দায় অনেক নারীকেই হত্যা করা হয়েছে ডাইনী বিদ্যার জন্য। এমনও হয়েছে, অনেক সাধারণ নারীকেও সেসময় আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে কোনো কিছু যাচাই না করেই। তাই বলে যুক্তরাজ্যে কিন্তু ডাইনী বিদ্যার চর্চা থেমে থাকেনি।

প্রাচীন ডাইনী বিদ্যার ধারাবাহিকতায় এখনও যুক্তরাজ্যে কিছু নারীকে পাওয়া যাবে যারা ডাইনী বিদ্যায় পারদর্শী। তাদের মধ্যে একজন হলেন লুইস ফেল্ট। টাকার টানাটানি সবারই যায় কমবেশি। লুইসেরও মাঝেমধ্যে টাকার টানাটানি যায়, তবে তখন যে তিনি অন্যান্য ব্যয় কমিয়ে টাকা বাঁচাতে চেষ্টা করেন মোটেও তা নয়। উল্টো একটি সবুজ মোমবাতি ও কিছু গাছগাছরা ও এক গ্লাস ওয়াইন নিয়ে তিনি চলে যান তার বাগানে।

খুব সাবধানে একটি গাছের তলায় ওয়াইনটি রাখেন তিনি। এরপর চাঁদের দেবীকে সেই মদ উপহার হিসেবে নিবেদন করেন তিনি। উপহার দেয়ার পর মোমবাতি জ্বালিয়ে সেই আগুনে গাছগাছরা প্রজ্বল্লিত করেন এবং মন্ত্র উচ্চারণ করতে থাকেন। মন্ত্র উচ্চারণের এক পর্যায়ে তিনি বলতে থাকেন, ‘প্রত্যেকদিন, যেকোনো ভাবে, আমার উপর সমৃদ্ধি বর্ষিত হোক।’

৩৭ বছর বয়সী লুইস ফেল্ট এখনও সেই প্রাচীন কায়দায় ডাইনী বিদ্যা চর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাগান থেকে ফেরার পথে তিনি সেই প্রাচীণ নিয়মানুযায়ী দেবীর উদ্দেশ্যে ‘তবে তাই হোক’ বলে ঘরে প্রবেশ করেন। তার দাবি, এই কাজটি করার পর তার স্বামীর কল্যাণে আবারও আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে এবং তার স্বামী জোনাথন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ পান। এর কদিন পরেই জোনাথন ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত টাকার চেয়েও বেশি এক হাজার ডলার পান, যা তাদের প্রত্যাশাতেই ছিল না।

এগুলো সবই কি ডাইনী বিদ্যার ফল নাকি স্রেফ কাকতালীয় ঘটনা তা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে লুইসের মতো একজন শিক্ষিত নারী এই বিদ্যা অন্যকে আকৃষ্ট করার প্রয়োগ করেন না, শুধুমাত্র ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কোনো দরকার হলেই তিনি এই বিদ্যার আশ্রয় নেন। ২০১১ সালের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে বর্তমানে প্যাগান বিশ্বাসে বিশ্বাসীর সংখ্যা ৫৩,১৭২জন। ধারণা করা হয়, এদের মধ্যে এখনও ডাকিনীবিদ্যা বা ডাইনী বিদ্যার প্রচলন রয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই