জীবন-যাপনে মুসলমানের জন্য যা আবশ্যক

কুরআন-সুন্নাহর বিধান পুরোপুরি মেনে চলা মুসলিম উম্মাহর নারী-পুরুষ সবার জন্য আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা মানুষকে এ বিধান বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিয়েই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। মানুষের অর্পিত এ দায়িত্ব হলো প্রথমে নিজেই কুরআন সুন্নাহর আনুগত্য মেনে নেয়া এবং পরবর্তীতে কুরআন-সুন্নাহর বিধান বাস্তবায়নে অন্যকে দাওয়াত দেয়া। এ বিষয় দুটি সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো-

প্রথমত : কুরআন সুন্নাহর নির্দেশের আনুগত্য
কোনো শরিক ছাড়া একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগি করা এবং আল্লাহ ও রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্য করা। এ ছাড়া আল্লাহর নির্দেশিত বিধানগুলো বাস্তবায়ন করা এবং নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ পরিহার করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য কর এবং (এ বিধান) শোনার পর কখনো তা থেকে বিমখু হয়ো না।’ (সুরা আনফাল : আয়াত ২০)

দ্বিতীয় : কুরআন সুন্নাহর নির্দেশ মেনে চলার দাওয়াত প্রদান
আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহ্বান করা, সৎ কাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার দাওয়াত দেয়া। সমাজে প্রচলিত অন্যায় ও গর্হিত কাজ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখার দায়িত্ব পালন করা প্রত্যেক মুসলিম নারী ও পুরুষের জন্য আবশ্যক।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা (মানুষকে) কল্যাণের দিকে ডাকবে, সত্য ও ন্যায়ের আদেশ দিবে আর অসত্য ও অন্যায় কাজ থেকে (মানুষকে) বিরত রাখবে; অতঃপর যারা এ দলে শামিল হবে, সত্যিকারার্থে তারাই সাফলতা লাভ করবে।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১০৪)

কুরআন এবং সুন্নাহর আনুগত্যের পাশাপাশি এ নির্দেশ পালনের দাওয়াত প্রসঙ্গে বিশ্বনবির ঘোষণা-

হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘তোমাদের মধ্যে যে কেউ যদি কোনো ঘৃণ্য/নিন্দনীয়/অন্যায় কাজ সংঘটিত হতে দেখ;
তবে ওই ব্যক্তির কর্তব্য হলো- সম্ভব হলে (ওই মন্দ কাজ) হাত দ্বারা প্রতিহত বা মোকাবেলা করা;
আর যদি তা (হাত দ্বারা মোকাবেলা করা) অসম্ভব হয়, তবে মখু দ্বারা প্রতিবাদ করা;
আর যদি তাও (মুখে প্রতিবাদ করাও) অসম্ভব হয়, তবে মনে মনে ঘৃণা (নিরবে প্রতিবাদ) করা। আর এটাই ঈমানের দুর্বলতম অংশ। (মুসলিম)

নিরব প্রতিবাদ
সমাজে অন্যায় কাজ সংঘটিত হতে দেখলে হাত এবং মুখ দ্বারা প্রতিবাদ করার সাহস ও সামর্থ্য না থাকলে মনে মনে ঘৃণা করলে অন্যায় ও অত্যাচার বন্ধ হবে না। কিন্তু এ অন্যায় এবং অত্যাচার বন্ধ করার দায়িত্ব রয়েছে প্রত্যেক মুসলিম নারী ও পুরুষের ওপর।

এ দায়িত্ব পালনে প্রত্যেকেকেই নিরবে কাজ করে যেতে হবে। আর তা হলো- অন্যায় ও অত্যাচার বন্ধে যেভাবে কাজ করলে জীবন ও সম্পদের ক্ষয়-ক্ষতি হবে না; সেভাবে কৌশল ব্যবহার করে অন্যায় ও অত্যাচার বন্ধ করার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখাই হলো নিরব প্রতিবাদ।

অন্যায় ও অত্যাচারকে মনে মনে ঘৃণা মানে শুধু ঘৃণা নয়, বরং নিরবে নিরবে এ ঘৃণ্য কাজ সমাজ থেকে স্বমূলে উৎপাটন করতে কাজ করে যাওয়াই ঈমানের দুর্বলতম অংশ।

পরিশেষে…
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব নারী ও পুরুষকে উল্লেখিত ওয়াজিব কাজ সম্পাদনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টার তাওফিক দান করুন।

কুরআন-সুন্নাহর অনুসরণ ও অনুকরণের পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরে কুরআন-সুন্নাহর বিধান বাস্তবায়নে কাজ করার তাওফিক দান করুন।

সর্বোপরি কুরআন-সুন্নাহর বিধান সমাজের সর্বস্তরে বাস্তবায়নের জন্য নিরবে নিরবে ধীরে ধীরে দাওয়াতে দ্বীনের কাজ করে যাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।



মন্তব্য চালু নেই