উদ্ধারের কয়েক ঘণ্টা আগে মৃত্যু

জিহাদের জীবনের বিনিময়ে বন্ধ হলো মৃত্যুকূপ

ছোট শিশু জিহাদের মৃত্যুর বিনিময়ে বন্ধ করে দেয়া হলো রাজধানীর শাহজাহানপুরের রেল কলোনিতে পরিত্যক্ত গভীর নলকূপের পাইপের মুখটি।
শনিবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় শিশুটিকে গভীর ওই পাইপের ভেতর থেকে তুলে আনেন স্থানীয় কয়েকজন যুবক। তারপরই ঝালাই করে পাইপের মুখটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। রেলের কর্মীরা সেটি বন্ধ করে দেয় বলে জানা গেছে।
এদিকে রেল মহাপরিচালক তফাজ্জল হোসেন শুক্রবার রাতে বলেছিলেন, ‘একই স্থানে একটি নতুন ডিপ টিউবওয়েল বসানো হচ্ছিল। নতুন টিউবওয়েল বসানোর আগে পুরনোটির মুখ ঝালাই করে বন্ধ করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু সেটি বন্ধ না করায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’
পরে এ ঘটনায় রেলওয়ের জ্যেষ্ঠ উপসহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমকে বরখাস্ত করা হয়। তিনি ওই প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন। এছাড়া প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এস আর হাউসকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়।
উল্লেখ্য, রাজধানীর শাহজাহানপুরে রেলওয়ে কলোনিতে শুক্রবার দুপুরে কয়েকশ ফুট গভীরে ১৭ ইঞ্চি ব্যাসের পানির পাইপে জিহাদ নামের শিশুটি পড়ে যায়। তবে সেই পাইপের ৬৭২ ফুট নিচে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বোরহোল ক্যামেরা নামিয়ে ঘণ্টাখানেক তল্লাশি চালানোর পর শুক্রবার রাত পৌনে ৩টার দিকে সেটিকে গুজব বলে জানান দায়িত্বরতরা।জিয়াদ
তারা জানান, ক্যামেরা নামানোর পর একেবারে শেষ প্রান্তে তেলাপোকা, টিকিটিকিও দেখা গেছে কিন্তু শিশুর কোনো শরীর দেখা যায়নি বা শরীরের মতো কিছু দেখা যায়নি। এটা সম্পূর্ণ গুজব।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল তখন বলেন, ‘উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ক্যামেরা নিচে নামানো হয়েছিল, সেখানে মানুষের কোনো অস্তিত্ব দেখা যায়নি। কিছু কীটপতঙ্গের ছবি দেখা গেছে। ক্যামরায় দেখে মনে হচ্ছে সেখানে কেউ নেই।’
পাইপের মুখ খোলা থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রতিমন্ত্রী তা এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘আমরা এসেছি ছেলেটিকে উদ্ধার করতে। পাইপের মুখ খোলা থাকার বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে রেল মন্ত্রণালয়। তবে পাইপে কোনো মানুষ নেই, সেটা ক্যামেরায় দেখা গেছে। এটা আসলে গুজব হতে পারে।’
এর আগে স্থানীয়রা জানান, শিশুটি খেলতে খেলতে হঠাৎ করে উন্মুক্ত পাইপটির ভেতরে পড়ে যায়। পরে বাচ্চাটিকে জীবিত উদ্ধারের চেষ্টা চলায় ফায়র সার্ভিস।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, পানির পাম্পটি অনেকদিন পরিত্যক্ত ছিল।
উদ্ধারের কয়েক ঘণ্টা আগে মৃত্যু
জিয়াদ2প্রায় ২৪ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযান, কয়েক দফা নাটকীয়তার পর অবশেষে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় শিশু জিহাদকে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. এ কে এম নিয়াজ মোর্শেদ বলছেন, কয়েক ঘণ্টা আগেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।
তবে কী কারণে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে সে বিষয়ে তিনি বলছেন, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের জন্য।
শনিবার বিকেলে ঢামেক হাসপাতালে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান নিয়াজ মোর্শেদ।
তিনি জানান, বিকেল সাড়ে ৩টার শিশুটিকে ঢামেক হাসপাতালে নেয়া হলে বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি বোর্ড গঠন করে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা যায় শিশুটি মৃত।
তিনি বলেন, ‘শিশুটিকে মৃত অবস্থায়ই হাসপাতালে আনা হয়।’
এদিকে শিশু জিহাদকে জীবিত উদ্ধার করতে না পারার প্রতিবাদে ঢামেক হাসপাতালে মিছিল করেছেন স্থানীয়রা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে অতিরিক্ত র‌্যাব-পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই