জিকা ভাইরাস থেকে সতর্ক থাকার উপায়

মশাবাহিত জিকা ভাইরাস জনমনে, বিশেষত আমেরিকার দেশগুলোয়, চরম আতঙ্ক তৈরি করেছে। এরই মধ্যে অন্তত ২৩টি দেশে এটি ছড়িয়ে পড়েছে। চরম উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ উপদ্রবকে ‘বিস্ফোরণ’ সমতুল্য হিসেবে অভিহিত করেছে। জারি করা হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতাও। তবে ভাইরাসটি যে একেবারেই অচেনা-নতুন, তা নয়; অন্তত সত্তর বছর পুরনো জিকার ইতিহাস। ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস (এডিস এজিপ্টি) মশাই এ ভাইরাসের বাহক। এখন পর্যন্ত জিকা-প্রতিরোধী কোনো টিকা আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। এসব নিয়েই এই প্রতিবেদন।

নতুন পদক্ষেপ

জিকা শণাক্তকরণ প্রক্রিয়া জটিল। এখন পর্যন্ত এর কোনো চিকিৎসা নেই, তৈরি করা সম্ভব হয়নি কোনো প্রতিষেধকও। এ কারণে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশে নারীদের কমপক্ষে আট মাস গর্ভধারণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এদিকে ব্রাজিলে গর্ভপাত আইনত নিষিদ্ধ। কিন্তু জিকার প্রকোপ এড়াতে গর্ভপাতের অনুমতি চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটির স্থানীয় আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী ও বিজ্ঞানীদের একটি সংগঠন।

প্রতিরোধে করণীয়

আক্রান্ত এলাকায় ভ্রমণ করলে দিনের বেলায় ফুলহাতা পোশাক পরা উচিত। গায়ে মশারোধী ক্রিম মাখারও পরামর্শ দেন বিজ্ঞানীরা। এডিস মশা যেহেতু দিনে কামড়ায়, তাই দিনেও মশারি টানিয়ে ঘুমানো উচিত। আক্রান্ত ব্যক্তিকে মশারির ভেতর আলাদা রাখতে হবে। এছাড়া বাড়ির আশপাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার রাখা, টব, টায়ার, ফুলদানি ইত্যাদিতে যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এক কথায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে যা যা করতে হয়, জিকা প্রতিরোধেও তা করতে হবে।

প্রত্যাশিত প্রতিষেধক

জার্নাল অব দ্য আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনে এক প্রবন্ধে বিজ্ঞানীরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে বলেছেন, ইবোলা ভাইরাসের মহামারী থেকে শিক্ষা নিতে হবে। তারা বলেন, ইবোলা ভাইরাস শুরুর দিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ায় সেটি ১১ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিতে পেরেছে।

গবেষক ডেনিয়েল লুসি এবং লরেন্স গস্টিন বলেন, ইবোলা ছড়িয়ে পড়ার আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ব্যবস্থা গ্রহণে অকৃতকার্য হয়েছে। জিকার ক্ষেত্রে এমন হলে এটিও বিস্ফোরকের মতো মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়বে। তারা আরো জানান, এর প্রতিষেধক তৈরিতে অন্তত দুই বছর লাগবে। আর বিশ্বব্যাপী সরবরাহ করতে চাইলে ১০ বছর লেগে যেতে পারে।

তথ্যসূত্র : সিডিসি (সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন), ডব্লিউএইচও (ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন), পিএএইচও (প্যান আমেরিকান হেলথ অর্গানাইজেশন)।

লেখক: আফিফা খাতুন
, শিক্ষার্থী, উদ্ভিদবিজ্ঞান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়



মন্তব্য চালু নেই