জামায়াতের ব্যাপক শোডাউন

জামায়াতগুরু গোলাম আযমের মৃত্যুতে বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকা নেতা-কর্মীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। ঢাকার পাশাপাশি সারা দেশ থেকে নেতা-কর্মীরা দল বেঁধে এসেছেন। একদিকে জানাজায় অংশ নেওয়া অন্যদিকে চলে অনেক দিন পর শোডাউনের প্রস্তুতি।

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, জামায়াতের প্রাক্তন আমিরের মৃত্যুতে সারা দেশ থেকে দলের নেতা-কর্মীরা ঢাকায় এসেছেন। তারা জানাজার পাশাপাশি ঢাকা শহরের মতো জায়গায় একটি মিলনমেলা করেন, যা গত তিন-চার বছরে এরকম একটি সমাবেশ করতে পারেনি জামায়াত। এমনকি অনেক দিন ধরেই কেউ কারো সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারেননি। সবাই সবার সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন। একে অন্যের সঙ্গে প্রাণ খুলে কথা বলেন। সামনের দিনে আন্দোলন কীভাবে করবেন, তার একটা সলাপরামর্শও করেন তারা। সবমিলে গুরুর মৃত্যুতে সবাইকে খোশমেজাজে থাকতে দেখা গেছে।

 

বরিশাল মহানগরের আমির মোজাম্মেল হোসেন হেলাল, পাবনা জেলা আমির অধ্যাপক আবদুর রহিম, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা আরিফুল ইসলামসহ হাজার হাজার জামায়াত নেতা-কর্মী সারা দেশ থেকে রাজধানীতে সমবেত হন শোডাউনের জন্য।

 

গতকাল শুক্রবার লাশ নেওয়ার পর থেকেই পুরো মগবাজার এলাকা জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী দিয়ে ভরা ছিল। নেতা-কর্মীদের আশপাশে তো দূরের কথা মগবাজারের পুরো এলাকার মধ্যে কোনো পুলিশ ছিল না। রমনা এলাকার ইস্কাটন, মগবাজার মোড় ও মালিবাগ এলাকায় কিছু পুলিশকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। যা অন্য দিনেও থাকে। যাহোক নেতা-কর্মীদের কেউ উসকানি দেননি। পুলিশও নীরবে দায়িত্ব পালন করে চলে গেছে। খোশমেজাজের গল্প, আনন্দ আড্ডা আর সামনের দিনের করণীয় নিয়ে নেতারা সারা রাত বেশ ভালোই পার করেছেন।

 

গোলাম আযমের ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আযমী শুক্রবারই ঘোষণা দেন, শনিবার বাদ জোহর বায়তুল মোকাররমে তার বাবার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এ খবর সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে অনেককে বিভিন্ন মন্তব্য করতে শোনা গেছে। তারা বলছিলেন, বায়তুল মোকাররমের মতো জায়গায় রাজাকার গোলাম আযমের জানাজা হবে! এটা কি করে সম্ভব! আবার অনেকেই বলেছেন, সরকার মনে হয় শেষ পর্যন্ত বাধা দেবে।

 

বায়তুল মোকাররম এলাকায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে শনিবার দুপুর ১২টা থেকেই জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘পুলিশের কাজ পুলিশ করবে। আমরা আমাদের কাজ করব।’ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ঢাকা মহানগরী জামায়াত-শিবিরের সকল নেতা-কর্মীকে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের এক নেতা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘কতটা পুলিশ আছে যে আমাদের রুখে দাঁড়াতে পারবে। আমরা ঢাকার বাইরের কাউকে আসতে বলিনি। এতেই অনেক নেতা-কর্মী চলে এসেছেন প্রাক্তন আমিরকে শেষবারের মতো দেখার জন্য। জানাজায় অংশ নিতে। আর যদি আসতে বলা হতো, তবে ঢাকা শহরের অবস্থা কি হতো।’

 

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আজকে উপস্থিত হয়েছি, গোলাম আযমের জানাজা পড়ার জন্য। কোনো সমাবেশ বা মিছিল মিটিং করার জন্য নয়। সুতরাং সরকার কেন বাধা দেবে। গণতন্ত্রের ভাষায়, মৃত্যুর সময় প্রত্যেক মানুষই তার স্বাধীনতা ভোগ করবে, এটাই স্বাভাবিক।’

 

এক প্রশ্নের উত্তরে জামায়াতের ওই নেতা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি।’

 

এদিকে শনিবার সকাল থেকেই বায়তুল মোকাররমের পার্শ্ববর্তী এলাকায় পুলিশ সতর্ক অবস্থান নেয়। কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে বিপুল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। প্রস্তুত রাখা হয় এপিসি কার, রায়ট কার ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মিলেমিশে ছিলেন গোয়েন্দা ও এনএসআইয়ের একাধিক সদস্য।

 

এ ব্যাপারে মতিঝিল জোনের ডিসি আশরাফুজ্জামান  বলেন, ‘জামায়াত নেতাদের বলা হয়েছে, জানাজা শেষে দ্রুত এই এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য। এ ছাড়া জানাজার সময় রাস্তায় যাতে কেউ কোনো প্রকার গণ্ডগোল না করে, সে ব্যাপারেও বলা হয়েছে।’



মন্তব্য চালু নেই