জামায়াতের বইয়ে ঠাসা চবির দুই বিভাগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের লাইব্রেরি থেকে স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীর আদর্শ ও দর্শন প্রচারে ব্যবহার করা বিপুল পরিমাণ বই উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে নানা ধরনের লিফলেট এবং জামায়াতের পক্ষে প্রচার চালাতে তৈরি বিভিন্ন সিডিও।

এসব প্রচারপত্র ও বই কীভাবে দুটি বিভাগের লাইব্রেরিতে গেলো তার কোনো যৌক্তির ব্যাখ্যা দিতে পারেননি ওই বিভাগের কর্মকর্তার।

আশির দশকের মাঝামাঝিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের আধিপত্য শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে জামায়াতপন্থিদের সংখ্যাও এরপর থেকেই বাড়তে থাকে। শিবিরের শীর্ষ নেতাদের একটি বড় অংশই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা ছিলেন। সরকার নানা সময় চেষ্টা করেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াত-শিবিরের প্রভাব কমাতে পারেনি।

গুলশান হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত মারজান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ছাত্র ছিলেন-এমন তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর সকাল নয়টায় আরবি বিভাগে যান প্রক্টর আজগর হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল।

অভিযানে পাওয়া যাওয়া বইয়ের একটি বড় অংশ ছিল জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা পাকিস্তানের বিতর্কিত ধর্মীয় নেতা মাওলানা আবুল আলা মওদুদীর লেখা। পাশাপাশি একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর লেখা বেশ কিছু বই পাওয়া যায়। মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি হওয়া আরেক জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লাকে নিয়ে প্রকাশিত একটি বইও পাওয়া যায় অভিযানে। জিহাদের পক্ষেও ছিল বেশ কিছু বই। আরও পাওয়া যায় জঙ্গিবাদে উস্কানিমূলক বেশ কিছু সিডি ও জামায়াতের পক্ষে বক্তব্য সম্বলিত লিফলেট পাওয়া যায়। এরপর বই ও প্রচারপত্রগুলো গুলো জব্দের নির্দেশ দেয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আজগর হোসেন জানান, গত মাসের ২৮ শে জুলাই প্রশাসন বিভাগের বইয়ের যে তালিকা পেয়েছিল তাতে এ জব্দকৃত বই বা প্রচারপত্রগুলো ছিল না। কারা, কীভাবে এবং কেন এই বইগুলো লাইব্রেরিতে এনেছিল তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি। প্রক্টর বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করে এ ধরনের বই জব্দ করার উদ্যোগ নিয়েছে।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াত-শিবিরের চাষাবাদ হয়েছে বছরের পর বছর জুড়ে। এই জঞ্জাল অল্প সময়ে দূর করা যাবে না।’ উপাচার্য বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে জামায়াত-শিবিরের প্রভাব কমানোর চেষ্টা করছি। গত এক বছরে অনেক উন্নতি হয়েছে। গত সপ্তাহেও একটি মসজিদ থেকে জামায়াত-শিবিরের পক্ষের দুই বস্তা বই জব্দ করা হয়েছে।’

জামায়াত এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কীভাবে তার আদর্শ প্রচারের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে তারও একটি ব্যাখ্যা দেন উপাচার্য। তিনি বলেন, নানা সময় জামায়াতপন্থি শিক্ষকরা দলের নেতাদের লেখা বা দর্শনের পক্ষের বইয়ের তালিকা দিয়েছেন। কেউ কেউ নিজেরাও অনেক আপত্তিকর বই নিয়ে এসেছেন। এগুলোর বিরুদ্ধে এখন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন বিভাগের সেমিনার লাইব্রেরির পাশাপাশি হল লাইব্রেরিতেও তল্লাশি চালানো হচ্ছে এবং জামায়াতপন্থি ও উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করে এমন সব বই জব্দের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় মূল হোতাদের একজন নুরুল ইসলাম ওরফে মারজান বলে জানিয়েছে পুলিশ। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আরবি বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। তবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনুপস্থিত ছয় শিক্ষার্থীর যে তালিকা দিয়েছে তাতে মারজানের নাম ছিল না।



মন্তব্য চালু নেই