জাবি ছাত্র সাতাঁর কাটছে অলিম্পিকে, নিষেধ ক্যাম্পাসে

শাহাদত হোসাইন স্বাধীন, জাবি প্রতিনিধি : ৫ আগস্ট থেকে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে শুরু হওয়া গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় ‘লাল-সবুজ’ পতাকা হাতে দেশের হয়ে লড়ছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহফিজুর রহমান সাগর। কিন্তুু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের লেকে দেয়া হয়েছে সাতাঁর নিষেধের সাইনবোর্ড।

গত ০৯ আগস্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকে নামা নিষেধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র সুইমিং পুলটি পরিত্যক্ত হয়ে রয়েছে। লেক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে শারীরিক শিক্ষা বিভাগ কিছুই জানে না বলে জানান,শারীরিক শিক্ষা বিভাগের উপ-পরিচালক হাবিবা ইয়াসমিন।

বিশ্ববিদ্যালয়য়ের রেজিস্টার আবু বকর সিদ্দিক বলেন,”লেক সাঁতারের জায়গা নয়। কিন্তুু অনেকেই লেকে সাঁতার কাটছে। তাই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমলে নিয়ে লেকে নামা,গোসল করা বা সাতারঁ কাটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এরপরও লেকে সাতাঁর কাটতে গিয়ে কোন দূর্ঘটনার দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়েরর প্রো-ভিসি ড.মো:আবুল হোসেন বলেন,গত ২৫ মে টিসার্চ ক্লাবের পুকুরে গোসল করতে নেমে জামিল রহমান জিসান নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়,যা খুব অনাকাঙ্গিত। তাই দূর্ঘটনা এড়াতে আমরা এ পদক্ষেপ গ্রহণ করি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সুইমিং পুল ব্যবহার উপযোগী না করে লেকে নামা নিষিদ্ধ করায় শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ জানিয়েছেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র সুইমিং পুলটি পাকা ডোবার মতো পড়ে আছে। ।

শারীরিক শিক্ষা বিভাগের উপ-পরিচালক হাবিবা ইয়াসমিন বলেন,”১৯৮০-১৮৮২ সালে সুইমিং পুলটি নির্মাণ করা হলেও এটি পূর্ণাঙ্গ কখনো ছিল না। নির্মাণ কাজ পূর্ণাঙ্গ শেষ করা হয়নি। শুধুমাত্র সইমিং পুলের প্রাথমিক কাঠামো নির্মাণ করা হয়। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, শুধুমাত্র সইুমিং পুল নয়, জিমনেশিয়ামের অবস্হাও নড়বডে। ফাটল ধরা ভবনে যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে দূর্ঘটনা।

সুইমিং পুল নির্মাণ পূর্ণাঙ্গ না হলেও তা মোটামোটি ব্যবহার উপযোগী ছিল। ১৩ ফেব্রুয়ারি ১৮৮৯ সালের একটি নথিতে দেখা যায় আবেদন সাপেক্ষে এটি সাভারের ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করেছে।

২৬-০৪-২০০৬ সালে সুইমিং পুলে সর্বশেষ পানি দেয়ার একটি নথি পাওয়া যায়। ২৭-০৪-২০০৬ সালের একটি বিজ্ঞপ্তিতে সাতাঁর প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনের আহবান ও জানানো হয়। ঐ দিনে শারীরিক শিক্ষা বিভাগ পরিবহন অফিসের কাছে কিছু পুরান টায়ার চেয়ে আবেদন করে, যা দিয়ে সাতারঁ প্রতিযোগীতা চালিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা ছিলো।

কিন্তুু ০৮-০৫-২০০৬ সালের একটি নথিতে দেখা যায় তৎকালীন প্রো -ভিসি সুইমিং পুলে সাতারঁ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এ নির্দেশের পর সুইমিং পুলের আর কোন ধরনের সংস্কার বা পানি দেয়ার উল্লেখ পাওয়া যায় নি।

শারীরিক শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা যায়,বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড.ফারজানা ইসলাম সহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে সুইমিং সহ শারীরিক শিক্ষা বিভাগের মান উন্নয়নে একাধিকবার দাবী জানানো হয়।

সইমিং বেহাল দশার মান উন্নয়নের পদক্ষেপ আছে কিনা জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার আবু বকর সিদ্দিক জানান,এসব বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না,শারীরিক শিক্ষা বিভাগ ভালো জানবে।

তবে সইমিং পুলের মান উন্নয়নে কোন ধরনের আবেদন বা সমীক্ষা চালানোর কোন ডকুমেন্ট শারীরিক শিক্ষা বিভাগের ১৯৮৮-২০০৬ সালের নথি ঘেটে পাওয়া যায় নি। এমনকি সুইমিং পুল ব্যবহার উপযোগী করতে কত বাজেট দরকার যে সম্পর্কেও কোন তথ্য নেই বিভাগের কাছে। এ ব্যাপারে শারীরিক শিক্ষা বিভাগের পরিচালক সিফাত উল্লাহকে একাধিকবার ফোন দিলে ও তিনি ফোন কেটে দেন।

সুইমিং পুলের সংস্কার কার্যক্রম সম্পর্কে প্রো-ভিসি ড.মোঃ আবুল হোসেন বলেন,” সইমিং পুল সংস্কার ও লাইব্রেরীর সম্প্রসারণ সহ বেশ কিছু উন্নয়ন কর্মকান্ডের ৩১৫ কোটি টাকার একটি প্রজেক্ট সরকারের কাছে আমরা জমা দিয়েছি। কিন্তুু বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্লান চূড়ান্ত না হলে সরকার নতুন কোন প্রজেক্টের অনুমোদন দিবে না। তাই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যান করার কাজটা শেষ করার উদ্যেগ নিয়েছে। ইতিমধ্যে জরিপ কাজ সমপন্ন। 3D করার কাজ বাকি। সরকারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের 3D মাস্টারপ্ল্যান জমা দেয়ার পর আশা করি আমাদের প্রজেক্ট পাশ হয়ে যাবে। তখন আমরা সইমিং পুল সংস্কারে হাত দিবো। তবে খুব তাড়াতাড়ি কোন সুসংবাদ নেই”।

তবে নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক শারীরিক শিক্ষা বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রশাসন আশার বাণী শুনাচ্ছে এক যুগ ধরে। দিল্লী বহু দূর,এতোদিন শিক্ষার্থী গোসল বা সাতাঁর কাটবে কোথায়? লেকে সাতাঁর কাটতে গিয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু দুঃখজনক। তবে লেক ব্যবহার নিষেধ কোন সমাধান নয়। লেকে বা পুকুরে বেশ কিছু টিউব বা আড়াআড়ি বাশঁ দিয়ে চাইলে সাতাঁরের ব্যবস্হা করা যায়। কিন্তুু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবরই ক্রীড়া চর্চা নিয়ে উদাসীন।



মন্তব্য চালু নেই