জাতীয় বিপ্লব ও সংহতির ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর। অনেকে বলেন দিনটি ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি’র দিন, অনেকে বলেন ‘সেনা হত্যার’ দিন, আবার অনেকে বলেন ‘সিপাহী-জনতার গণঅভ্যুত্থান দিবস’। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এসব ‘অনেকেই’ তাদের দৃষ্টিকোণ বিশেষত শ্রেণিদৃষ্টিকোণ থেকে বলেন।

এ সম্পর্কে উইকিপিডিয়ায় প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশে ৭ নভেম্বর এই দিনে সংঘটিত সিপাহী ও জনতার বিপ্লব দিবস হিসেবে পালিত হয়। কর্নেল (অব.) আবু তাহেরের নেতৃত্বে সংঘটিত এই বিপ্লব জেনারেল খালেদ মোশাররফের ৩ দিনের সরকারের পতন ঘটায়। এই বিপ্লবের ফলশ্রুতিতে জেনারেল জিয়াউর রহমান বন্দিদশা থেকে মুক্তি পান, এবং পরবর্তীতে ক্ষমতায় আসেন। কোন কোন সময়ে ৭ নভেম্বর বাংলাদেশে সরকারি ছুটি হিসেবে পালিত হয়েছে।

কিছু সেনা কর্মকর্তাদের দ্বারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত হবার পর খন্দকার মোশতাক আহমেদ নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। কিন্তু খন্দকার মোশতাকের ক্ষমতার নেপথ্যে ছিলেন ১৫ আগস্টের ঘটনার মূল নায়কেরা। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশাররফ (বীর উত্তম) এই ব্যাপারটি মেনে নিতে পারেননি। তিনি তার অনুগত সৈন্য বাহিনী নিয়ে ৩রা নভেম্বর মোশতাক সরকারের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান ঘটান। কিন্তু তার স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ৩ দিন। মনে করা হয়, খালেদ মোশাররফ রক্তপাত এড়াতে চেষ্টা করেছিলেন, যা পরবর্তীতে তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।

বর্তমানে দিনটিকে মূলত জাতীয়তাবাদী আদর্শের জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দল বিএনপি ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করে। এই দিন উপলক্ষে ব্যাপক রাজনৈতিক কর্মসূচি পালিত হয়।

৭ নভেম্বর মহান জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার প্রদত্ত বাণীতে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘৭ নভেম্বর জাতীয় জীবনের এক ঐতিহাসিক দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সৈনিক-জনতা রাজপথে নেমে এসেছিল জাতীয় স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষার দৃঢ় প্রত্যয় বুকে নিয়ে। তাই ৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক বিপ্লব অত্যন্ত তাৎপর্যমণ্ডিত।

স্বাধীনতাত্তোর রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, তৎকালীন ক্ষমতাসীন মহলের নিজেদের স্বার্থের অনুকূলে দেশের স্বাধীনতা বিকিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা এবং ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য মানুষের বাক-ব্যক্তি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে গলাটিপে হত্যা করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করা হয়। ফলে দেশে চরম অশান্তি ও হতাশা নেমে আসে। বাকশালী সরকার চরম অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী পন্থায় মানুষের ন্যায়সংগত প্রতিবাদকে দমন করে। দেশমাতৃকার এই চরম সংকটকালের ৭৫ এর ৩ নভেম্বর আধিপত্যবাদের এদেশীয় এজেন্টদের কূটকৌশলে মহান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে সপরিবারে ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করা হয়। এই অরাজক পরিস্থিতিতে স্বজাতির স্বাধীনতা রক্ষায় অকুতোভয় দেশপ্রেমিক সৈনিক এবং জনতার ঢল রাজপথে এক অনন্য সংহতির স্ফুরণে ৭ নভেম্বর জিয়া মুক্ত হন। এই পটপরিবর্তনে রাষ্ট্রপতি জিয়ার নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা সুরক্ষিত হয় ও গণতন্ত্র অগ্রগতির পথে এগিয়ে যায়, বহুদলীয় গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। মানুষের মনে স্বস্তি ফিরে আসে। আধিপত্যবাদী শক্তি ও তাদের এ দেশীয় অনুচররা উদ্দেশ্য সাধনের পথে কাঁটা মনে করে ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াকে হত্যা করে।’

মহান জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস সম্পর্কে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘৭৫-এর ৭ নভেম্বর সৈনিক-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবে জাতিসত্তার স্বাধীন অস্তিত্ব ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথ চলা নিশ্চিত হয়। স্বদেশবাসীর জাগরিত দৈশিক চেতনায় পরাজিত হয় আধিপত্যকামী বিদেশি শক্তির অশুভ ইচ্ছা। ১৯৭৫ সালের এ দিনে আধিপত্যবাদী শক্তির নীল নকশা প্রতিহত করে এ দেশের বীর সৈনিক ও জনতা। সম্মিলিত প্রয়াসে জনগণ নতুন প্রত্যয়ে জেগে উঠে।’

কর্মসূচি : ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ১০ দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিএনপি। এর মধ্যে রয়েছে- ৭ নভেম্বর সকাল ৬টায় নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ও সারা দেশে দলীয় কার্যালয়গুলোতে দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং সকাল ১০টায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দলের জাতীয় নেতৃবৃন্দ শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে পুস্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ।



মন্তব্য চালু নেই