জাতীয় নির্বাচনই শেষ ভরসা বিএনপির

সাংগঠনিক দুর্বলতা ও নেতাকর্মীর গ্রেফতারভীতির কারণে রাজপথের বদলে বক্তৃতা ও বিবৃতিকেই বেছে নিয়েছে বিএনপি। চলতিবছর দলটি এ কৌশলেই চলবে বলে একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমার সংবাদকে জানিয়েছেন।
তারা বলেছেন, রাজপথে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের মুখোমুখি লড়াই করার মতো শক্তি ও সাহস কোনোটাই এ মুহূর্তে নেই বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের। তাই সাহস থাকলে রাজপথে নামুন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের চ্যালেঞ্জটির জবাবেও তেমন নড়াচড়া দেখা যাচ্ছে না বিএনপির।

এমনকী দলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকীতেও নেই বড় কর্মসূচি। দুয়েকটি আলোচনাসভা ও মাজার জিয়ারত করেই কর্তব্য শেষ হচ্ছে। জিয়ার জন্মদিনে দলীয় চিকিৎসক সংগঠন ড্যাবের উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পই একটু উল্লেখ করার মতো। সাংগঠনিক এ অবস্থায় বিএনপির শেষ ভরসা আগামী জাতীয় নির্বাচন। আন্দোলনমুখী না হয়ে দলটি তার শরিকদের নিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবে।
এ লক্ষ্যে ২০১৭ সালের পুরোটাই প্রস্তুতিতে কাজে লাগাবে দলীয়-নেতাকর্মীদের। ওই নেতাদের ধারণা, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার আগাম নির্বাচন দেবে না। তাই ৫ বছর মেয়াদ শেষে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর অথবা ২০১৯ সালের জানুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন হবে।

এজন্য চলতি বছরটি আন্দোলনের দিকে ব্যয় না করে জাতীয় নির্বাচনের জন্য কাজে লাগানোই উত্তম হবে। নেতাদের মতে, জনগণ এখন বিএনপিকে আওয়ামী লীগের বিকল্প ভেবে আন্দোলনে সমর্থন না দিলেও জাতীয় নির্বাচনের দিন ধানের শীষে ভোট দিয়ে ব্যালটবাক্স ভরিয়ে দেবে এবং আওয়ামী লীগের থেকে অন্তত ৫০টি আসন বেশি পেয়ে ক্ষমতায় যাবে।
কারণ, সারাদেশের আনাচে-কানাচে বিএনপির সমর্থক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। তাই এখন থেকে শক্তিশালী ইসি গঠন ও একটি সহায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে বড় আন্দোলনের পরিবর্তে মিডিয়াকেই ব্যবহার করে যাবে দলটি।

তবে দাবিগুলো থেকে পিছপা হবে না। শেষ পর্যন্ত সহায়ক সরকার না পেলেও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচনে যাওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, সহায়ক সরকার এবং শক্তিশালী ইসি গঠন ছাড়া বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে এটা আশা করাও যায় না।

এ অবস্থায় বিএনপি আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে যাওয়ার কথা ভাবছে না। সময়, পরিবেশ ও পরিস্থিতিই বলে দেবে বিএনপির করণীয় কী। তবে যতক্ষণ সহায়ক সরকার ও নিরপেক্ষ ইসি না হবে ততক্ষণ বিএনপি রাজপথের আন্দোলন ছাড়বে না। বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। গণতন্ত্র উদ্ধারে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়ে যাবে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের যেভাবে গ্রেফতার করে ও মামলা দিয়ে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে তাতে সাময়িকভাবে হয়তো আন্দোলন করতে নেতাকর্মীরা মাঠে নামতে অস্বস্তিতে আছে, কিন্তু এই অবস্থা বেশিদিন আর চলবে না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে শুধু বিএনপি নেতাকর্মীই নয়, জনগণও দলটির সমর্থনে রাজপথে নামবে বলেই বিশ্বাস।

বিএনপি নেতারা এ আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করলেও দুই দফায় আওয়ামী লীগ সরকারের আট বছরে বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি প্রায় প্রতিটি কর্মসূচিতে শেষ পর্যন্ত পিছু হটছে। আর জয় হচ্ছে পুলিশের, না হয় আওয়ামী লীগের।
মজার ব্যাপার হলো কর্মসূচি দিয়ে বিএনপি ঘরে বসে থাকছে। বড়জোর কর্মসূচি পরে প্রতিবাদে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করছে এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সরকার ও পুলিশ বাহিনীকে বিষোদগার করে মনের ক্ষোভ ঝাড়ছে। কিন্তু বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীকে কর্মসূচি পালন করতে মাঠে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের নিষ্ক্রিয়তা ভাবাচ্ছে খোদ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকেও।

সম্প্রতি রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মাঠে না থাকার জন্য ছাত্রদলকে ভালো করেই ধোলাই করেছেন তিনি। এমনকী ‘খালেদার জিয়ার ভয় নেই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ স্লোগান দিতে পর্যন্ত বারণ করেছেন। শুধু ছাত্রদল কেন, বিএনপির অন্যতম অনুষঙ্গ যুবদল কোথায়। বিএনপির শাসনামলে যুবদলের দাপটও কম ছিল না। এর পাশাপাশি কৃষক দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, জাসাস, দলীয় চিকিৎসক সংগঠন ড্যাবসহ প্রায় সব সংগঠনই তো নীরব।
আন্দোলনে তাদের একসময়কার সরব উপস্থিতি এখন হঠাৎ নীরব হয়ে গেছে। বিএনপির যে নেতারা রাজপথ কাঁপাত, তারাও গেল কোথায়। আর এসব নেতাকর্মীর নিষ্ক্রিয়তার জন্যই ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস কর্মসূচি উপলক্ষে বিএনপি আহূত টানা তিনমাস অবরোধে কয়েকটি নিরীহ প্রাণহানি ছাড়া তেমন ফল পায়নি দলটি। পুরো অবরোধ কর্মসূচিই ফ্লপ হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই