জমজমাট নতুন টাকার পুরান ব্যবসা

সেনাকল্যাণ ভবনের পাশেই বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রবেশদার। এটি পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পাওয়া যাবে একটি ছোট্ট পুলিশ বুথ। বুথের এ ভবনটি দ্বিতল। এর ঠিক সামনেই রাখা চা-সিগারেট বিক্রি করার দুটি ভ্যান। এ ভ্যন দুটিতে চা সিগারেট বিক্রি করতে খুব একটা দেখা যায় না। দেখা যায় টাকার খেলা।

কিছুটা সময় ধৈর্য্য ধরে এখানে চোখ রাখলে যে কেউ দেখতে পারবেন দোকানের পাটাতন থেকে শুধু টাকা বের হচ্ছে আর ঢুকছে। তাও আবার চকচকে নতুন টাকার নোট। এ যেন ব্যাংকের কোলে আরেক ব্যাংক। সারা বছর এ বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনের এ জায়গায় নতুন টাকার বেচাকেনা চলে। তবে নতুন টাকার বিক্রি কয়েক গুণ বেড়ে যায় ঈদ এলেই। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ইতোমধ্যেই বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে নতুন টাকার এ পুরনো ব্যবসা।

ঈদ বখশিস, যাকাত, ফিতরা দিতে সাধারণ মানুষ এসব ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা কেনে। সামনেই ব্যাংক থাকার পরও কেন এখান থেকে টাকা কেনে তা একটি বড় ব্যপার। এর প্রধান কারণ হচ্ছে অনেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা নেয়ার মত সময় নেই। কারণ শুধু লাইনে দাড়ালেই হয় না, সহ্য করতে হয় নানা ধরণের ঝামেলা। লাইনে দাড়িয়ে থাকতে থাকতেই আবার কখনও কখনও টাকা দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। এসব ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতেই মানুষ দশ বিশ টাকা লাগলেও বাইরে থেকে টাকা নিয়ে যায়।

কিন্তু যারা বাইরে টাকা নিয়ে ব্যবসা করে তাদের কখনো ব্যাংক থেকে টাকা পাওয়া নিয়ে সমস্যা পোহাতে হয় না। কারণ তারা যা চায় তাই পায়। এরা যোগসাজস করে ব্যাংকের কতিপয় কিছু কর্মকর্তার সাথে। কিভাবে তারা ব্যাংক থেকে এত টাকা তুলতে পারে তা জানতে চাইলে টাকা বিক্রেতা মালা বেগম বলেন, ‘আমাদের ভিতরে লোক আছে। তাদের একটা কমিশন দিতে হয়। তাহলেই তারা দিয়ে দেয়।’

বুথের সামনে পুলিশ থাকলেও দেখা গেছে তাদের মধ্যে এভাবে খোলা টাকা বিক্রি করা নিয়ে খুব একটা মাথা ব্যথা নেই। মাঝে মাঝে মন চাইলে দিনে দু একবার টাকা বিক্রেতাদের সরিয়ে দেয়া হয়। যা বড়জোর দু চার মিনিটের জন্য।

টাকা ব্যবসায়ী সুজন মিয়া জানান, ‘এখন প্রত্যেক বিক্রেতা ১০-১৫ হাজার টাকার নতুন নোট বিক্রি করছেন। যেখান থেকে ১হাজার থেকে ১৫শত টাকা লাভ আসে।’

এদিকে দালালদের অপতৎপরতা ঠেকাতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কঠোর নজরদারি করছে। নিয়মানুসারে এক ব্যক্তি একবারে একই মূল্যমানের একশ পিসের এক বান্ডিলের বেশি টাকা বিনিময় করতে পারবেন না। কিন্তু দালালরা যত খুশি তত টাকা নিতে পারে ব্যাংক থেকে।

নতুন টাকা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নতুন এক টাকার মুদ্রা ১০০টি বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। ৫০০ দুই টাকার নতুন নোটের দাম এক হাজার ২৫ টাকা। ২০০টি পাঁচ টাকার নোট ও ১০০টি ১০ টাকার নোট বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫০ টাকায়। আর ৫০টি ২০ টাকার নোট কিনতে হচ্ছে এক হাজার ৮০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকায়। এসব নোটেরই চাহিদা বেশি। তাছাড়া আছে ১০০, ৫০০ ও এক হাজার টাকার নতুন নোট। ২ টাকা থেকে ১০০ টাকার নোট যা-ই নিক একই হারে কমিশন দিতে হয়। নোট ছাড়াও ২ বা ৫ টাকার কয়েনও নিচ্ছেন অনেক ক্রেতা। ৫শ’ বা ১ হাজার টাকার ভাংতি হিসেবে কয়েনও নিচ্ছেন অনেকে।
নতুন টাকা কিনতে আসা এক চাকুরিজীবী আসাদুল হক বলেন, ব্যাংকে গিয়ে টাকা না পাওয়ায় বা ঝামেলা এড়াতে এখান থেকেই টাকা নিয়ে কিনছি। ব্যাংকে গেলে হয় লম্বা লাইন, যে লাইন থেকে টাকা পাওয়া যাবে কি না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। অথবা কর্মকর্তারা সরাসরি নতুন টাকা নেই বলে বিদায়ও করে দেয় মাঝে মাঝে। ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ নতুন টাকা আসে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্যান্য তফসিলি ব্যাংকে নতুন টাকা সরবরাহ করে। সাধারণ মানুষ নতুন টাকা না পেলেও টাকা ব্যবসায়ীরা যথাসময়ে তা পেয়ে যায়।

এ ব্যপারে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্ণর সচিবালয়ের জেনারেল ম্যানেজার আ ফ ম আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে। এর প্রেক্ষিতে নজরদারি চলছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক ঈদ সামনে রেখে তিন হাজার কোটি টাকা মূল্যের নতুন টাকা বাজারে ছাড়ছে। গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৮৪০ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা সমমূল্যের পাঁচ কোটি ৬৬ লাখ ৫০ হাজারটি নতুন নোট বাজারে ছাড়া হয়েছে। এর মধ্যে আছে দুই, পাঁচ, ১০, ২০, ১০০, ৫০০ ও এক হাজার টাকার নোট।



মন্তব্য চালু নেই