জবি’র মেডিকেল সেন্টারের দূরাবস্থা

মাত্র একজন ডাক্তার দিয়ে চলছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়(জবি) একটি মেডিকেল সেন্টার। প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষার্থী, শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারি রয়েছে আরও প্রায় ১ হাজার সব মিলিয়ে ১৭ হাজার মানুষের জন্য রয়েছে মাত্র একজন ডাক্তার। গত কয়েকবছর ধরেই মাত্র একজন ডা. দিয়ে চলছে এমন চিকিৎসা সেবা। দিন যত যাচ্ছে সমস্যা তত বাড়ছে। দেশের সকল মেডিকেল ব্যবস্থা যখন উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছে সরকার ঠিক এই সময়েই দেশের ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয় জবির মেডিকেলের অবস্থা নাজেহাল।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের পরিধি ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে। হ্রাস পাচ্ছে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত জবি’র মেডিকেল। প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষার্থী, পৌনে ছয়শ শিক্ষক, ৩০০ কর্মকর্তা কর্মচারীর জন্য রয়েছে মাত্র একজন ডাক্তার। নেই কোন এ্যাম্বুলেন্স, নেই কোন বেডের ব্যবস্থা, নেই পর্যাপ্ত ওষুধ। এভাবে একটা মেডিকেল সেন্টার চলতে পারে না বলে মনে করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

অসুস্থ হয়ে মেডিকেলে গেলে প্যারাসিটামল, হিস্টাসিন, মেট্রোনিটাজল, স্যালাইন ইত্যাদি জাতীয় প্রাথামিক ঔষুধ ছাড়া কিছুই মিলে না জবি মেডিকেলে। এমনি অভিযোগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের। জবি’র একমাত্র মেডিকেল সেন্টারে ডাক্তারের অনিয়মে ভোগান্তি পোহাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। জবাবদিহিতা নেই কোথাও।

জবি মেডিকেলের একমাত্র ডা. মিতা শবনম ঘটনানর সত্যতা স্বিকার করে বলেন, ‘আমাদের জনবল সমস্যা দীর্ঘদিনের। এসমস্যা সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনেকদিন যাবত চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ হচ্ছে যখনই বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় তখন আবেদন পড়ে না যার দরুন এসমস্যার সমাধান হচ্ছে না। তার সাথে রয়েছেন মাত্র ২ জন মেডিকেল এ্যাসিস্টেন্ট।’ তিনি আরও বলেন, ‘তা ছাড়া ভার্সিটির পরিসর ছোট হওয়াতে মেডিকেলের পরিধি দিনে দিনে ছোট হচ্ছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা অনেকবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি কিন্তু এখানে ডাক্তাররা আবেদন করেন না। যার দরুন এসমস্যার সমাধান হচ্ছে না।’ তিনি সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে আরও বলেন, ‘আমরা ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেলে টাকার মাধ্যমে চুক্তি করছি। সেখানে আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা একটি সার্ভিস সেন্টার থাকবে। আমরা তাদেরকে প্রতি মাসে কিছু টাকা দিয়ে দেব। এটা হয়ে গেলে চিকিৎসা সেবার আর কোন সমস্যা হবে না।’

এদিকে সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেডিকেলে কার্যক্রম ছোট হয়ে তিন রুম থেকে ১ রুমে চলে এসেছে। জানতে চাইলে ডা. মিতা শবনম জানান, ‘ভার্সির্টিতে নতুন কয়েকটি বিভাগ চালু হওয়াতে জায়গা দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ ফলে আমাকে ২ রুম ছেড়ে তাদেরকে জায়গা দিতে হয়েছে।

দেখা যায়, একজন ডা. এবং মেডিকেল এসিস্টেন্ট রয়েছে ছোট্ট একটি রুমে। যারা কিছুতেই শিক্ষার্থীদের সঠিক সেবা দিতে পারছে না। আবাসন, চিকিৎসা, পরিবহণ, গবেষণাগার, লেখাপড়ার সুষ্ঠ পরিবেশ প্রায় সব ক্ষেত্রেই সুবিধা বঞ্চিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। তারপরও এধরনের অনিয়ম চললে কোথায় যাবে শিক্ষার্থীরা? যে বিশ্ববিদ্যালযের চিকিৎসাকেন্দ্রের এ হাল, সেখানকার শিক্ষার্থীদের বাবা-মারা তাদের আদরের সন্তানকে কোন আশায় উচ্চশিক্ষার জন্য পাঠাবে? অন্যদিকে দীর্ঘদিন যাবত ন্যাশনাল মেডিকেলে জবি শিক্ষার্থীদের জন্য চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও তা আদৌও কোন সমাধান হবে কিনা এনিয়ে সন্ধিহান শিক্ষার্থীরা।

এব্যাপারে নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আমিনুর রহমান জানান, ‘আমরা দীর্ঘদিন যাবত চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। অনেকদিন পূর্বে জেনেছিলাম ন্যাশনাল মেডিকেলের সঙ্গে জবি প্রশাসন চুক্তি করবে কিন্তু আজও এর কোন সুফল দেখছি না।’

প্রশাসনিক জটিলতায় আটকে আছে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ চিকিৎসা ব্যবস্থা চালুর প্রক্রিয়া। আলাপ আলোচনায় ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও আজও কোন সিদ্ধান্ত হয় নি। ফলে প্রশাসনিক অনুমোদনের অভাবে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

তবে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিলে আমরা শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাসেবা দিতে পারব।’ বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা চিকিৎসা বুথ স্থাপন করা হবে বলে ৬মাস পূর্বে আশ্বাস দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে হাসপাতালের পরিচালনা পরিষদের সভায় তিনি বিষয়টি উত্থাপনও করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৌখিকভাবে এ ব্যাপারে সম্মতি জানায়। কিন্তু অনেক সময় পেরিয়ে গেলেও এ ব্যাপারে কোনো পক্ষই আর পদক্ষেপ নেননি।

জানা যায়, ন্যাশনাল মেডিকেলের সাথে কথা বলা এবং সকল ব্যাপার সিদ্ধান্ত নেবার দায়িত্ব রয়েছে ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড.এ.জেট.এম রুহুল মোমেনের কাছে। তিনি বলেন, ‘ন্যাশনাল মেডিকেলের সাথে এখনও কথা চলছে। তবে কবে নাগাদ এর সমাধান হতে পারে এব্যপারে এই মূহুর্তে সঠিক করে বলতে পারছিনা।’

অন্যদিকে এখন থেকে ৫ বছর পূর্বে ঢাকা ৭ আসনের তৎকালীন এমপি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন জবি মেডিকেলে একটি এ্যাম্বুলেন্স দেয়ার আশ্বাস দিলেও পরবর্তী সময়ে আর মেলেনি এ্যাম্বুলেন্সের দেখা। একাধিক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘ দিন যাবত আমরা এরকম আশ্বাস শুনে আসছি আমরা আর আশার বাণি শুনতে চাই না। আমরা চাই এটা আমাদের মৌলিক অধিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত এসমস্যার সমাধান করবে। অতিদ্রুত আমাদের মেডিকেলে সব সমস্যা সমসাধান করতে হবে দাবি রাখছি প্রশানসের কাছে।

প্রসঙ্গত, মানুষের ৫টি মৌলিক চাহিদার তালিকায় চিকিৎসা সেবার উল্লেখ থাকলেও বাস্তবতা ভিন্ন। প্রতিনিয়ত ব্যহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। মাথা ব্যাথা, জ্বর, ডায়রিয়ার ওষুধ ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না মেডিকেল সেন্টারে।



মন্তব্য চালু নেই