জঙ্গি বানানোর অন্যতম হাতিয়ার অনলাইন

সদস্য সংগ্রহে গত ছয় বছর ধরে অনলাইনকেই অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে জঙ্গি সংগঠনগুলো। আর এক্ষেত্রে তাদের প্রধান টার্গেট হচ্ছে কিশোর-কিশোরীরা। পরিকল্পনা অনুযায়ী, নানা ফোরামে কিশোর বয়সীদের আকৃষ্ট করে বিভিন্ন উছিলায় তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। এরপর সুযোগ বুঝে তাদের বাছাই করে জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। জঙ্গিবাদের উত্থান ও বিকাশ নিয়ে নিয়মিত পর্যালোচনা করেন এমন পর্যবেক্ষকদের ভাষ্য, অনলাইনেই জঙ্গি সদস্য নিয়োগের প্রবণতা এখন বেশি। কারা সরকারের বা রাষ্ট্রের সমালোচনা করে, অন্য ধর্মের প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য করতে দ্বিধা বোধ করে না কিংবা কাদের পরিবারের সঙ্গে সখ্যতা নেই এসব তথ্য নিবিড়ভাবে অনুসরণ করে ধীরে ধরে তাদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা চালায় জঙ্গিরা। এরপর তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে নিয়োগের কাজটি কয়েক ধাপে করা হয়। জঙ্গিবাদ নিয়ে গবেষণাকারীদের মন্তব্য, যারা এসব করছে তারা প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেক বেশি এগিয়ে আছে। তাই, কেবল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে নজর দিলে হবে না। জঙ্গি সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করায় প্রকাশ্যে এদের কাজ এখন আর খুব একটা দেখা যায় না। কিন্তু আড়ালে তাদের কাজ এখনও চলে অনলাইনে। এখনও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোসহ বিভিন্ন অনলাইনের গ্রুপ চ্যাটগুলোতে এসব কর্মকাণ্ড বেশ ক্রিয়াশীল। তারা বলছেন, যারা ধর্মের নামে ঘৃণা ছড়ানোর ফেসবুক পেজগুলো চালায় তারাও ‘সম্ভাব্য জঙ্গি’। এদের ধরে ধরে বিচারের মুখোমুখি করতে না পারলে এটা কমবে না।খবর বাংলা ট্রিবিউনের।

সম্প্রতি ধর্মীয় উগ্র মতবাদ প্রচারের অভিযোগে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের ৩০টি পেজ ও আইডিকে চিহ্নিত করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট। এসব পেজ বন্ধের জন্য সম্প্রতি বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনকে (বিটিআরসি) ডিএমপির পক্ষ থেকে একটি চিঠিও দেওয়া হয়েছে।

জঙ্গিবাদ বিষয়ক গবেষক ও পর্যালোচক নির্ঝর মজুমদার বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে আইএস এর রিক্রুটমেন্ট এর প্রধান সোর্স হচ্ছে অনলাইন প্রচারণা এবং অনলাইন কনটেন্ট দিয়ে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধকরণ। তারা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক রিক্রুটমেন্ট খুব সামান্যই করতে পারে।’ সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বে ঘটে যাওয়া বড় বড় সন্ত্রাসী হামলাগুলোতে দেখা গেছে অধিকাংশ জঙ্গিই নিজ সংগঠনের কোনও নেতা-কর্মীর সরাসরি সংস্পর্শে আসেনি কিন্তু তারা র‌্যাডিকালাইজড হয়েছে অনলাইনেই উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এতে প্রতীয়মান হয়, প্রতিষ্ঠানভিত্তিক নজরদারির থেকে অনলাইনে জঙ্গিবাদসংক্রান্ত কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ অনেক বেশি প্রয়োজনীয় ও জরুরি। আর বাংলাদেশকে বিবেচনায় নিলে, আমরা এতে বেশ খানিকটা পিছিয়ে আছি বলেই মনে হয়।’

এ ধরনের প্রচারণা বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের সব পেজ, প্রোফাইল এবং সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটগুলো সুনির্দিষ্ট পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ার আওতায় আনা দরকার। এগুলো নিয়মিতভাবে বন্ধ করা হলেও আবার চালু করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে জঙ্গিদের সুনির্দিষ্ট কিছু কি-ওয়ার্ড আছে, সেগুলো নজরদারিতে নিলেই বিষয়টি অনেকাংশে সহজ হয়ে যাবে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ বলেন, ‘রিক্রুটমেন্ট করার সময় জঙ্গিরা কয়েকটি বিষয়ে খেয়াল করে। জঙ্গিবাদ বিরোধিতায় প্রাতিষ্ঠানিক যে আন্দোলনটা গড়ে উঠতে যাচ্ছে সেটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে, অনলাইন এখন তাদের সবচেয়ে ঊর্বর মাধ্যম। যারা ব্রেনওয়াশ করতে চায় তারা কয়েকটি বিষয়ে নজর দিয়ে থাকে। ভুলে গেলে চলবে না যারা হাইস্কুল শেষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুর পর্যায়ে থাকে তাদের মগজ ধোলাই করা তুলনামূলকভাবে সহজ। আর অনলাইন মাধ্যম না-বুঝে ব্যবহার করার প্রবণতা এই বয়সীদের মধ্যেই বেশি।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনলাইন বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রত্যেকটা জায়গার জন্যই তাদের টার্গেট রয়েছে। তবে অনলাইনের মাধ্যমে তারা এদের কাছে সহজে পৌঁছাতে পারছে। ফলে শক্ত মনিটরিং এর মাধ্যমে এই গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে।’

এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম সম্প্রতি বলেন, ‘জঙ্গিরা এখন অনলাইন বা ইন্টারনেটকে তাদের যোগাযোগ ও সাংগঠনিক কার্যক্রম বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। পারস্পরিক যোগাযোগ থেকে শুরু করে ধর্মীয় মতবাদও তারা প্রচার করছে অনলাইনে।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা নিয়মিত অনলাইন মনিটরিং করছি। এ ধরনের বেশ কিছু পেজ বন্ধ করতে চিঠিও দিয়েছি।’



মন্তব্য চালু নেই