জঙ্গি প্রশ্রয়ে এমপি বদি, জানেন প্রধানমন্ত্রীও!

জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা হিসেবে অনেক আগেই নাম উঠে এসেছে কক্সবাজার-৪ (টেকনাফ-উখিয়া) আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদান, তাদের নাগরিকত্ব দান, ভোটার তালিকায় নাম তোলা, জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেদনও জমা দিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। সরে আসেননি নিজের কর্মকাণ্ড থেকে। খবর বাংলামেইলের।

শনিবারও (৩০ জুলাই) টেকনাফের রোহিঙ্গা জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের বাধা দেন বদি ও তার সহযোগীরা। তবে বিজিবির অনড় অবস্থানে একপর্যায়ে পালিয়ে বাঁচেন এমপি বদিসহ চার জনপ্রতিনিধি। ওই অভিযানে জঙ্গি সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারেটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) আলোচিত নেতা হাফেজ ছালাউল ইসলাম, মৌলভী ছৈয়দ করিম, মওলানা মো. ইব্রাহিম এবং একজন সৌদি নাগরিককে আটক করে বিজিবি।

এ বিষয়ে বিজিবি টেকনাফের ২নং ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ বলেন, ‘অভিযান চলাকালে ঘটনাস্থলে অবস্থান নিয়ে বাধা দেন স্থানীয় এমপি আবদুর রহমান বদিসহ টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান মৌলভী রফিক উদ্দিন এবং বাহারছড়ার চেয়ারম্যান মৌলভী আজিজ উদ্দিন। তবে একপর্যায়ে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ওই চার জনপ্রতিনিধি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।’

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শফিউল আলমও ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তবে অবৈধ রোহিঙ্গা জঙ্গি বস্তিতে বিজিবির অভিযানে কেন বাধা দেয়া হয়েছে এবং আরএসও নেতাদের সঙ্গে তার কী সম্পর্ক এ বিষয় জানতে এমপি আবদুর রহমান বদির মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়।

কোনোভাবেই রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করেননি দাবি করে এমপি আবদুর রহমান বদি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। শামলাপুর থেকে রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠন আরএসও নেতা ও সৌদি নাগরিকসহ ৪ জনকে আটক করার ঘটনায় টেকনাফ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও বিজিবি সদস্যদের সহযোগিতা করেছি।’

এদিকে পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারের মুসলিম অধ্যুষিত আরাকান রাজ্য জঙ্গি কার্যক্রমে যুক্ত থাকার অভিযোগে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনকে (আরএসও) নিষিদ্ধ করে দেশটির সরকার। পরে সরকারের তাড়া খেয়ে বিভিন্ন সময় এই নিষিদ্ধ সংগঠনটি কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে। আরএসওর এসব জঙ্গিকে মদদ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির ও আন্তর্জাতিক জঙ্গি গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে। তবে সাম্প্রতিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এসব জঙ্গিকে মদদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে সরকারদলীয় বিতর্কিত এমপি আবদুর রহমান বদি ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধেও।

এক কোরবানির ঈদে নিষিদ্ধ সংগঠন আরএসও এবং এ সংগঠনের ঘনিষ্ঠ আরো দু’টি জঙ্গি ইসলামী রোহিঙ্গা সংগঠনের পক্ষে এক হাজার ৬৭০টি কোরবানির গরু বিতরণ করা হয় ক্যাম্পে। এসব গরু বিতরণের সময় আবদুর রহমান বদির পক্ষ থেকে তার ভাই ও ঘনিষ্ঠজনরা উপস্থিতি ছিলেন।

স্থানীয়রা অবশ্য জানিয়েছেন, আবদুর রহমান বদিরাও জাতিতে ছিলেন রোহিঙ্গা। তার বাবা এজহার কম্পানি স্বাধীনতার আগেই মিয়ানমারের আরাকান থেকে কক্সবাজারে এসে বসবাস শুরু করেন। আর সে কারণেই রোহিঙ্গাদের প্রতি দুর্বল বদি। পরিকল্পনা করে তিনি তাদের ভোটার তালিকায় নাম তুলিয়ে বাংলাদেশের নাগরিক হতে সহায়তা করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

শুধু জঙ্গি মদদদাতাই নন, বদি ও তার পরিবারের অন্তত ১০ সদস্য ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত। মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী আসনের এই প্রভাবশালী সংসদ সদস্য ও তার পরিবারের হাত ধরে ইয়াবার সবচেয়ে বড় চালানগুলো কক্সবাজার থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে বলেও অভিযোগ রয়েছে। মিয়ানমার থেকে কক্সবাজারে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারাও তার হাত ধরেই ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের একটি তালিকা জমা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সে তালিকায় এমপি বদির নাম ইয়াবার গডফাদার হিসেবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। এতে তার ভাই ও নিকটাত্মীয়-স্বজনদের নামও রয়েছে। গত বছর জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় ইয়াবা সম্রাট হিসেবে খ্যাত আবদুর রহমান বদিকে কারাগারেও পাঠান আদালত। কিছুদিন জেল খাটার পর তিনি জামিনে মুক্ত পান।

গত বছর মানবপাচারে জড়িতদের নামের তালিকাও উঠে এসেছে আবদুর রহমান বদির নাম। পুলিশ মানবপাচারে জড়িত অভিযোগে ১৭৬ জনের যে তালিকা করেছে তার মধ্যে কক্সবাজারের টেকনাফেরই আছে ৭৯ জন। ৭৯ জনের মধ্যে সবার উপরের স্থানটির দখলেই আছেন বদি। তার বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদান, তাদের নাগরিকত্ব দান, ভোটার তালিকায় নাম তোলা, জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান এবং বাংলাদেশি পাসপোর্ট ইস্যুরও অভিযোগ ছিল প্রতিবেদনটিতে।

এদিকে সরকারি কর্মকর্তাদেরও বেশ কয়েকবার পিটিয়ে সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসেন এই সাংসদ। এমন কি প্রতিমন্ত্রী, প্রিসাইডিং অফিসার, ব্যাংক কর্মকর্তা, প্রকৌশলী কেউ রেহাই পায়নি তার হাত থেকে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দ্বিতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তার অবৈধ সম্পদের বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।



মন্তব্য চালু নেই