জঙ্গিদের হদিস জানেন ইনু সাহেব

ইউএসএইড কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও নাট্যকর্মী মাহবুব তনয় খুনে বিএনপিকে দোষারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মন্ত্রীদের বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছে দলটি।

শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিস্ময় প্রকাশ করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী

এসময় তিনি বলেন, ‘অন্যদের দোষারোপ না করে, জঙ্গিদের অবস্থান সম্পর্কে তথ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চান। কথা-বার্তা শুনে মনে হচ্ছে, তিনিই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।’

গত ২৫ এপ্রিল রাজধানীর কলাবাগানে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনার প্রটোকল কর্মকর্তা জুলহাস মান্নান এবং তার বন্ধু নাট্যকার মাহবুব তনয়কে বাসায় ঢুকে কুপিয়ে খুন করে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ‘নৃশংস ওই খুনে জড়িতদের আড়াল করতে প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিএনপিকে দোষারোপ করছেন। তবে এ ঘটনায় বিএনপিকে জড়িয়ে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে কোনো লাভ হবে না। কারণ, জনগণ তা বিশ্বাস করে না। এই দেশের প্রতিটি নাগরিকের জীবন রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। তাই ‘আমরা দায় নেব না’- বলে এই দায়িত্ব এড়ানোর কোনো সুযোগ আপনাদের (সরকার) নেই।’

বিএনপি কখনোই হত্যা, সন্ত্রাস ও খুনের রাজনীতি করে না দাবি করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ শাসনামলেই যশোরে উদীচী শিল্পগোষ্ঠীর অনুষ্ঠানে প্রথম বোমা হামলা হয়। ওই বোমা হামলায় প্রকৃত দোষীকে না খুঁজে তৎকালীন সরকার বিএনপির শীর্ষ নেতা তরিকুল ইসলামকে প্রধান আসামি এবং স্থানীয় বিএনপি নেতাদের আসামি করে মামলা করে। একইভাবে গোপালগঞ্জে গির্জায় বোমা হামলা এবং নারায়ণগঞ্জে বোমা হামলার সঙ্গে জড়িতদের আড়াল করতেও তারা বিএনপির নেতাদের আসামি করে।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘পুলিশি তদন্তে পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়, ওই জঙ্গি হামলাসহ রমনা বটমূল, সিলেট এবং আরো অনেক জঙ্গি হামলায় জড়িত ছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ, যার জন্ম ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর। সরকার মূল জঙ্গিদের আড়াল করার জন্যই বিএনপি নেতাদের ওপর বার বার এসব জঙ্গি হামলার দায় চাপিয়ে যাচ্ছে। অথচ আলোচিত এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনো ক্লু বের করতে পারেনি সরকার।’

রিজভী বলেন, ‘বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি আমলে গ্রেপ্তার জঙ্গিরা নানা কৌশলে জেল থেকে পালিয়ে যায়। এতে কারা সহায়তা করেছে এবং কারা তাদের জামিনে মুক্ত করে দিয়েছে, তা জনগণের অগোচরে নেই। এক কথায় বলা যায়- জঙ্গিদের ধরেছে বিএনপি সরকার, আর তাদের ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার।’

সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র এ যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া বন্ধ করুন। আপনাদের মন্ত্রী ও নেতাদের কথাবার্তাতেই স্পষ্ট হয়, জঙ্গিরা আপনাদের প্রশ্রয় পাচ্ছে। কয়েকদিন আগে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, লাদেনের প্রশিক্ষিত ৮ হাজার জঙ্গি বাংলাদেশে এসেছে। আবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার বক্তব্যে তা অস্বীকার করেছেন।’

সরকারের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘জঙ্গি হামলার জন্য বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে প্রকৃত জঙ্গিদের আড়াল করার সংস্কৃতি বন্ধ করুন। এর পরিবর্তে আপনারা প্রকৃত জঙ্গিদের খুঁজে বের করে তাদের বিচারের আওতায় আনুন এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন।’

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, মাহবুবুল হক নান্নু, ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক সেলিনা সুলতানা নিশীতা, সহ-সাধারণ সম্পাদক আরিফা সুলতানা রুমা, যুবদলের কেন্দ্রীয় সদস্য গিয়াস উদ্দিন মামুন প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই