জঙ্গিদের ব্যবহৃত অস্ত্রগুলো ভারতে তৈরী : মেলেনি যোগানদাতাদের সন্ধান

কল্যাণপুরে জেএমবির আস্তানা এবং গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারী থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্রের যোগানদাতাদের সন্ধান মেলেনি। এছাড়া এগুলো কোন দেশের তৈরি তা নিয়েও চলছে পরীক্ষা নিরীক্ষা। তবে প্রাথমিকভাবে এসব অস্ত্র ভারতের একটি কোম্পানীর তৈরি বলে জানা গেছে। এছাড়াও বেশকয়েকটি অস্ত্রের গায়ে ইউএসএ, ইউকে ও ইতালির নামও লেখা রয়েছে।

ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, গুলশান ও কল্যাণপুর থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্রের উৎসের সন্ধানে গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম এখন সক্রিয় রয়েছে। জঙ্গিদের ব্যবহৃত অস্ত্রের উৎস এবং সরবরাহকারীদের খুজেঁ বের করার চেষ্টা চলছে। অস্ত্র সরবরাহকারীদের গ্রেপ্তার করে জঙ্গিদের অস্ত্রের উৎস বন্ধ করাই এখন গোয়েন্দাদের মূল লক্ষ্য। তারা অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য না পেলে নাশকতা চালাতে পারবে না।

জানা যায়, গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারী ও কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানা থেকে আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের পর গোয়েন্দা পুলিশ ও কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সদস্যরা অস্ত্রের উৎসের সন্ধান শুরু করে। উদ্ধারকৃত অস্ত্রগুলোর ব্যালাষ্টিক পরীক্ষা করা হয়। কোন দেশে তৈরী সে ব্যাপারে খোঁজ নেয়া হয়। হলি আর্টিসান বেকারী ও কল্যাণপুর থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্রগুলো মিলিয়ে দেখা হয়। এক পর্যায়ে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয় যে উদ্ধারকৃত সব আস্ত্রেয়াস্ত্র ভারতে তৈরী।

গোয়েন্দা পুলিশ ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, গুলশানের হলি আর্টিসান থেকে একে-২২ আধুনিক রাইফেল এবং ক্ষুদ্রাস্ত্র ও কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানা থেকে ৪টি ক্ষুদ্রাস্ত্রগুলো পরীক্ষা করে দেখা যায় যে, এ ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ভারতের বিহার রাজ্যের ‘মঙ্গের’ নামের একটি এলাকায় তৈরী করা হয়েছে। এই অস্ত্রগুলো আধুনিক হলেও এগুলো সেখানের লেদমেশিনে তৈরী। অস্ত্রের গায়ে খোদাই করা অক্ষরে ইতালি, ইউএসএ, ইউকে, চায়না ও বিহার লেখা রয়েছে। কিন্তু এগুলো প্রকৃত পক্ষে গায়ে উল্লেখিত কোন দেশে তৈরী হয়নি। একটি একে-২২ রাইফেলের গায়ে লেখা আছে, মেড ইন ইউএসএ। অপর একটি রাইফেলের একপাশে লেখা ইতালী, অন্যপাশে লেখা বিহার। বিভিন্ন দেশের আর্মি, আমর্ড ফোর্স বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর ব্যবহৃত অত্যাধুনিক একে-২২ রাইফেলগুলো আধুনিক সমরাস্ত্র করাখানায় তৈরী।

গোয়েন্দারা জানায়, সীমান্ত এলাকায় এ ধরনের রিভলবার ও পিস্তল ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের আন্ডারওয়াল্ড ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে এসব অস্ত্র বিক্রি হয়। অস্ত্রের একটি বড় অংশ বাংলাদেশের জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা সংগ্রহ করে। দেশের উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী ও চাপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে এগুলো পাচার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। সন্ত্রাসীরা পরবর্তীতে বিভিন্ন কৌশলে ঢাকায় নিয়ে আসে। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে একে-২২ রাইফেল উদ্ধার হয়েছে। অস্ত্র ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে। এরপর সাধারন যাত্রীবেশে বাস, ট্রেনে এবং পণ্যের আড়ালে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পৌছে দেয়।

গত বছর জিআরপি থানা পুলিশ রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকা থেকে ২টি একে-২২ রাইফেল উদ্ধার করে। এগুলো আসল একে-২২ রাইফেল ছিল। অস্ত্র ব্যবসায়ীরা মায়ানমারের অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিনে চট্টগ্রামে নিয়ে আসে। এরপর ট্রেনে ঢাকায় আনার পর দুইজন অস্ত্র বহনকারী জিআরপি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে উদ্ধারকৃত জঙ্গিদের ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রের বেশীরভাগই ভারতের বিহারে তৈরীর প্রমান মিলেছে।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান, গত বছর পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জঙ্গি আস্তানা থেকে রাজ্য পুলিশ অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করেছে। জঙ্গিদের ওই অস্ত্রের সঙ্গে ঢাকা থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মিল আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কে বা কারা ওই অস্ত্র সরবরাহ করেছে তাদের সন্ধানে পুলিশ ও গোয়েন্দারা তৎপর রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পর সন্দেহভাজন কয়েকজনকে তালিকায় রেখে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।



মন্তব্য চালু নেই