ছিন্নভিন্ন সংসার আর ফেরার আশা…

কারও বাবা, কারও ছেলে আবার কারও ভাই। কেউ মাস কেউবা আবার নিখোঁজ রয়েছেন বছর হয়ে গেল। নিখোঁজ হওয়ার পরমুহূর্ত থেকে ভাল-মন্দ কোনো খবরই পাওয়া যায়নি এইসব নিখোঁজ ব্যক্তিদের। কোনো খোঁজই পাওয়া যায়নি- এই একটি বিষয় ছাড়াও আরও একটি বিষয়ে মিল রয়েছে এই নিখোঁজদের মধ্যে। আর তা হলো, এরা সবাই প্রত্যক্ষভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট আয়োজিত মানববন্ধনে হাজির হয়েছিলেন নিখোঁজ এই বিএনপি নেতাদের স্বজনরা। তারা আসলেন, কাঁদলেন, আর বললেন- কী নিদারুণ যন্ত্রণায় কাটছে তাদের দিনগুলো, কীভাবে চলছে সংসার। তবে প্রিয়জন ফিরে আসবে সেই স্বপ্ন এখনও দেখছেন তারা সবাই।

নিখোঁজ ছাত্রদল নেতা জহির উদ্দিনের মা হোসনে আরা বলেন, ‘ছেলের জন্য আর কত অপেক্ষা করবো? বুক মানে না। জানি সরকারের কাছে অনুরোধ করেও লাভ নেই। তারপরেও আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করবো আমার ছেলেকে যাতে তারা ফিরিয়ে দেয়।’

বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর বড় ছেলে আবরার ইলিয়াস বলেন, ‘বাবা নিখোঁজের ২৮ মাস অতিবাহিত হলেও আজও তাকে খুঁজে পাইনি। সরকার আমাদের বাবাকে ফিরে দেয়নি। বাবার জন্য কাঁদতে কাঁদতে আর কান্না লাগে না।’

বাবার জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়ে আবরার বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে দাবি করছি বাবাকে ফিরিয়ে দিতে।’

নিখোঁজ বিমান বন্দর থানা ছাত্রদল নেতা নিজাম উদ্দিন মুন্নার বাবা সামসুদ্দিন অভিযোগ করেন, গত বছরের ৬ ডিসেম্বর রাজধানীর দক্ষিণখানের প্রেমবাগান এলাকায় তার সামনে থেকে র‌্যাব-পুলিশের সদস্য দাবি করে কয়েকজন ব্যক্তি নিজাম উদ্দিন মুন্নাকে (২৪) অপহরণ করে সাদা রঙ্গের একটি গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়। অপহরণকারীরা তাকে র‌্যাব কার্যালয়ে আসতে বলেন। পরে তিনি র‌্যাব কার্যালয়ে গেলে সেখান থেকে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। এরপর তিনি এক এক করে প্রতিটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে গেছেন। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। উল্টো হয়রানি ও নাজেহাল হয়েছেন তিনি।

অনেক খুঁজেও ছেলের কোনো সন্ধান না পেয়ে সরকারের কাছে এখন ছেলের কবরের সন্ধান চান এই বাবা।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন নিখোঁজ আরেক ছাত্রদল নেতা সম্রাট। ভাইকে ‘গুম’ করা হয়েছে এমন দাবি করে সম্রাটের বোন বলেন, ‘ভাইকে এখন আর দেখি না। ভাইয়ের হাসি ফিরে পাই না। কী দোষ ছিল আমার ভাইয়ের? কেন আমার ভাইকে গুম করা হলো? রাজনীতি করা কি অপরাধ?’

উল্লেখ্য, গত ৩০ আগস্ট ছিল আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস। ওইদিন ‘দেশব্যাপী গুম-খুনের প্রতিবাদে’ প্রেসক্লাবে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করে ২০ দলীয় জোট। কিন্তু একই দিন সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি থাকায় পুলিশ ২০ দলীয় জোটকে প্রেসক্লাবে কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেয়নি। পরে নয়াপল্টনে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু সেখানেও অনুমতি না পাওয়ায় ওই কর্মসূচি মঙ্গলবার পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।



মন্তব্য চালু নেই