ছাত্রীদের যেভাবে ব্ল্যাকমেইল করতো ফেরদৌস!

কখনো ফেল করানোর হুমকি, কখনো পরিবারকে দিয়ে চাপে ফেলে ছাত্রীদের ফ্লাটে নিয়ে যৌন নির্যাতনের বাধ্য করতেন শিক্ষক ফেরদৌস।শুরুতে ভয়ে কেউ মুখ না খুললেও এক পর্যায়ে সহপাঠীদের নিয়ে আন্দোলনে নামেন নিপীড়িতরা। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় বরখাস্ত করা হয় অভিযুক্ত শিক্ষককে।এরইমধ্যে কলাবাগান থানায় দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ছাত্রীদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত আহ্ছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের পুরোনাম মাহফুজুর রশিদ ফেরদৌস। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ছিলেন।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্নভাবে ব্লাকমেইল করে ছাত্রীদের উপর যৌন নির্যাতন করেন ফেরদৌস।বিষয়টি অনেকটাই বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল শিক্ষার্থীদের কাছে ওপেন সিক্রেট ছিল। কিন্তু কেউ ভয়ে মুখ খোলেননি।

তবে নির্যাতিতরা যৌন নিপীড়ক শিক্ষকের বিরুদ্ধে মাঠে নামার চিন্তা করে। যেই চিন্তা সেই কাজ।গত শুক্রবার ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা `stop sexual Harrasment, save Aust’ নামে একটি ইভেন্ট খুলে শনিবার সকাল ১০ টায় বিক্ষোভ মিছিল করবে বলে প্রচার করেন। মূলত এর মাধ্যমেই সংঘটিত হন শিক্ষার্থীরা।শনিবার সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনসহ বিভিন্ন বিভাগে অভিযুক্ত শিক্ষকের বহিষ্কার ও শাস্তি দাবিতে বিক্ষোভ করেন।তার বিরুদ্ধে হাইকোর্ট কর্তৃক যৌন নির্যাতন ও যৌন হয়রানি বন্ধে গঠিত কমিটিতে পাঠানো হয় অভিযোগ।

পরে আন্দোলনের মুখে ওই শিক্ষককে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। ক্যাম্পাস সীমানায় প্রবেশে নিষেধ্বাজ্ঞা জারি করা হয়।

খোঁজ নিয়ে তার কুকীর্তি নিয়ে নানা ধরণের অভিযোগ করেছেন একাধিক শিক্ষার্থী। তারা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু মেয়েকে ওই শিক্ষক কৌশলে তার ফাঁদে ফেলেছেন। ফাঁদে ফেলে জিম্মি করে দিনের পর দিন ছাত্রীদেরকে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছেন। অনেক মেয়ের শরীরে ওই শিক্ষকের নির্যাতনের দাগও দেখা গেছে। তবুও ভয়ে কেউ মুখ খোলেননি।

প্রচণ্ড মানুষিক যন্ত্রণায় অনেকে সুইসাইডও করার চেষ্টা করেছেন বলে জানা গেছে।

ব্ল্যাকমেইল করার কিছু ধরণ সম্পর্কে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রথমে তিনি ছাত্রীদের টার্গেট করেন। পরে তার পেছনে লেগে পড়েন। তার যত কৌশল জানা আছে- সবই তিনি কাজে লাগান। প্রথমে স্বাভাবিক ও মিষ্টি কথার মাধ্যমে প্রস্তাব দিয়ে কাজ না হলে পরে, পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার ভয়, সেমিস্টার ড্রপ দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তিনি ছাত্রীদেরকে ব্ল্যাকমেইল করতেন।

কথা না শুনলে ক্যাম্পাসে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোর হুমকিও দিতেন লম্পট এই শিক্ষক।

অন্য কৌশল সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা জানান, ওই শিক্ষক তার টার্গেট করা কোনও ছাত্রীকে রাজি না করাতে পারলে অন্য আরও একটি কৌশলের আশ্রয় নেন। তা হলো- টার্গেটে থাকা ছাত্রীর বাবা-মায়ের কাছে ফোন করে বিভিন্ন রকমের মিথ্যা কথা বলেন। বলতেন,‘আপনার মেয়ে তো ক্লাস করে না, পরীক্ষা দেয় না, পারফরমেন্স খুব খারাপ। বাজে ছেলেদের সঙ্গে আড্ডা দেয়। আপনার মেয়েকে বলেন, ক্লাসের পরে আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য, ওকে পড়াটা বুঝিয়ে দেবো। এভাবে তাদেরকেও হাত করতেন এই মতলববাজ শিক্ষক।

শিক্ষার্থীরা জানান, অভিযুক্ত শিক্ষকের দুটি বাসা। এরমধ্যে পান্থপথের প্যারাডাইস সুইটসের পাশের ভবনের ফ্ল্যাটটিতে ছাত্রীদের নিয়ে গিয়ে যৌন হয়রানি করা হতো।

মাহফুজের ব্ল্যাকমেইলের পদ্ধতি সম্পর্কে আরও জানা যায়, ফ্ল্যাটে ডেকে কৌশলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে তিনি (শিক্ষক) তার অফিসিয়াল নম্বরে আজেবাজে ম্যাসেজ পাঠিয়ে রাখতেন, যা দিয়ে পরবর্তীতে তাদের ফাঁদে ফেলতেন। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের ফেসবুকের ইনবক্সে নিজের ন্যুড পিক পাঠানো ছিল ওই শিক্ষকের কাছে অতি সহজ একটা ব্যাপার। আজেবাজে টেক্সটিং,যা হরহামেশাই পাঠানো হত।



মন্তব্য চালু নেই