ছাত্রদলের নুতন কমিটির সভাপতি পদ পাচ্ছে শিবির

ঈদ পরবর্তী আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকগুলোকে নতুন করে সাজানো শুরু হয়েছে ইতোমধ্যেই। কিছুটা ক্ষোভ আর অসন্তোষ সত্ত্বেও বিএনপির ঢাকা মহানগরে আহ্বায়ক কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ছাত্রদলকেও সাজানোর চেষ্টা চলছে।

ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ কাকে দেয়া হচ্ছে সে বিয়টিও প্রায় পাকা হয়ে আছে। এখন কেবল ঘোষণা বাকি। প্রবাস থেকে কলকাঠি নাড়ছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নতুন কমিটি গঠন করার জন্য বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীসহ সুলতান সালাউদ্দিন টুকু কাজ করছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এই দুই জনকেই ছাত্রদল গোছানোর দায়িত্ব দিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিবির মনোভাবাপন্ন অথবা অতীতে শিবির করেছিল এমন একজন নেতাকে সামনে নিয়ে আসার জোর চেষ্টা চলছে। যাদেরকে নেতৃত্বের গুরুত্বপূর্ণ আসন দেয়ার চেষ্টা চলছে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে বলে জানা গেছে। ঈদের পর ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়ে আছে।

বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে সভাপতিসহ যাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তাদের বেশিরভাগই শিবিরের কর্মী। এছাড়াও অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ। এসব বিতর্কিতদের কমিটির বড় বড় পদ দেয়ার প্রস্তাব করায় ছাত্রদলের সাধারণ নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশ ক্ষুব্ধ হয়ে আছে।

জানা গেছে, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মামুনুর রশীদ মামুনকে সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব আহসানকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি গঠন করার ব্যাপারে তোড়জোড় চলছে। এদের ব্যাপারে তৎপর হয়ে উঠেছেন শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সালাহউদ্দিন টুকু।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মামুন এক সময় শিবির করতেন। রাজধানীর মিরহাজারিবাগে অবস্থিত জামায়াত নিয়ন্ত্রিত তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছেন তিনি। ওই মাদ্রাসায় থাকা অবস্থায় তিনি ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। সেই সুবাধে জামায়াতের সঙ্গেও তার সখ্যতা রয়েছে। গত বছরের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় বর্তমান কমিটিতে বড় একটি পদ দখল করে থাকলেও তার বিরুদ্ধে নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ রয়েছে।

এই বিষয়ে মামুনুর রশীদ মামুন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমি জামায়াত শিবিরের সাথে সম্পৃক্ত নই। তবে হ্যাঁ আমি জামায়াতের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় একসময় লেখাপড়া করেছি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছি। কিন্তু জামায়াতের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করলেই যে আমি শিবির করবো এটাও ঠিক নয়। যারা এই ধরণের কথা বলছে তারাই মূলত শিবির করে এবং তারা আসলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার ষড়যন্ত্র করছেন।

ছাত্রদলের সভাপতি পদে আপনি থাকছেন কি? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে কারা থাকবে তা নির্ধারণ করবেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তারা যদি আমাকে সভাপতি করেন তাহলে তা মেনে নেবো, অন্য কাউকে দিলেও মেনে নেবো।

অপরদিকে রাজিবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ রয়েছে। গত সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় দল চালাতে তার মাধ্যমে সংগঠনকে ৩০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছিলো। অভিযোগ রয়েছে তিনি সেই টাকা সংগঠন গোছানোর কাজে ব্যয় না করে নিজেই আত্মসাৎ করেছেন।

এই বিষয়ে রাজিব আহসান ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ মিথ্যা। কারণ টাকা দিয়ে আন্দোলন হয় না। আর আন্দোলনের জন্য টাকা দিলেও সেটা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের হাতে দেয়া হয়। তাই এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাচ্ছি না।

কমিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংগঠনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ভিত্তিতেই কমিটি গঠিত হবে। তাই কে সভাপতি ও আর কে সাধারণ সম্পাদক হবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তবে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান যে সিদ্ধান্ত দেবে আমরা সেটাই মেনে নেবো।

দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, ছাত্রদলে আসলে ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন নেই। জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে যাদের ভালো সম্পর্ক আছে তাদেরই কদর বেশি। আর এর ফলে শহীদ জিয়ার আদর্শ ও লক্ষ্য থেকে অনেকটাই বিচ্যুত হয়ে গেছে সংগঠনটি।



মন্তব্য চালু নেই