‘ছবি না তুইল্যা মাংস দে’

তোগো শহরে এত গাড়িওয়ালা, এতক্ষণ ধইরা এহানে বইয়া আছি। একটুকরা মাংস পাইলাম না। ছবি না তুইল্যা মাংস দে। আর না পারলে এইখান থেইক্যা ভাগ।

ভাসমান মানুষের ঈদ পালনের খোঁজ নিতে গেলে রাজধানীর মৌচাক মার্কেটের সামনে এভাবেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান বৃদ্ধা মমতাজ বানু।

তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে, তিনি বলেন কি কথা কইবি, তোগ মত কত সাব আমার সামনে দিয়া হাইট্যা গেছে। কেউ একটু মায়া নিয়ে তাকাইলো না। সকাল থেইক্কা কিছু খাই নাই। এত মানুষ গাড়ি নিয়ে যাইতেছে। কেউ ফিরা তাকাইলো না। সবাই কোরবানি দিতাছে। বয়স হইছে বইল্যা হাইট্যা মাইনসের দ্বারে দ্বারে যাইতে পারতেছিনা। তাই এহানে বইসা আসি। এক টুকরা মাংসও পাইলাম না। অহন আইছস ঈদের খবর নিতে।

মমতাজ বলে চলেন, এক জানোয়ার জন্ম দিছিলাম। পিরিত কইরা বিয়া কইরা মারে ভুইল্যা গেছে। আর তার বাপতো আরেকটা ইবলিশ। বুড়ো বয়সে হাঁটতে পারি না, চলতেও পারি না।

আর একটু সামনে এগিয়ে শান্তিনগর মোড়ে দেখা হয় ছুরি-চাপাতি হাতে কয়েকজনের সাথে। জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায়, ঈদকে কেন্দ্র করে তারা বৃহস্পতিবার রাতে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় এসেছে। তাদের দলনেতা মাহিদুল, সঙ্গে এসেছে নাজমুল, সজল, বিদ্যুৎ, একরাম।

মহিদুল বলেন, অন্যের গরু কাটাকাটি করি গত দশবছর ধরে। নিজেরা কোরবানি দিতে পারি না। একটু লাভের আশায় ঢাকায় আসছি। গরু কাইটা দিলে টাকার সাথে কিছু মাংস দেয়। সেই মাংস দিয়া আমাদের কোরবানি ঈদ হয়।

গরুর নাড়িভুড়ি পরিষ্কার করেন রহিমা খাতুন। তিনি বলেন, আমরা গরিব মানুষ। ঈদ কি জিনিস জানি না। প্রতি বছর সাহেবগো গরুর নাড়িভুড়ি পরিষ্কার কইরা দিলে টাকা আর কিছু মাংস দেয়। সেটা দিয়া পোলাপাইনগো রান্না করে খাওয়াই। ওরা খুশি হইলেই আমাগো ঈদ।

রহিমার সঙ্গে কথা বলার সময় পাশ থেকে মরিময় নামের আরেকজন বলেন, এখন ঢাকা টাউনের মানুষ বদমাইশ হইয়া গেছে। আগের মত মাংস পাওয়া যায় না।

তিনি বলেন, এখন সব বাসায় দারোয়ান রাখছে। দারোয়ানগুলো ভেতরে ঢুকতে দেয় না। তাই সবার বাসায় যাওয়া সম্ভব হয় না। বড়লোকরা না দিলে আমরা মাংস কই পামু?



মন্তব্য চালু নেই