চড়া সুদে নেয়া টাকায় সৌরভের চিকিৎসা

পায়ে গুলির ক্ষত কিছুটা শুকিয়েছে শিশু সৌরভের। ব্যাথাও কমেছে অনেকটাই। ছেলে আপাতত আশঙ্কামুক্ত। তবে নির্ভার হতে পারছেন না বাবা সাজু মিয়া। নিম্ন আয়ের এই মানুষটির জন্য চিকিৎসার ব্যয় মেটানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

সাজু মিয়ার শ্রমজীবী পরিবারে সঞ্চয় বলতে কিছু নেই। ছেলে মৃত্যুশয্যায় শুনে টাকা পয়সার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেছেন। সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে স্বজনদের কেউ কেউ। কিন্তু তার পরও চড়া সুদে ৩৫ হাজার টাকা ধার করেছেন তিনি। এর ২৫ হাজার টাকা এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে।

শুক্রবার গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের চেষ্টায় আপাতত শঙ্কামুক্ত শিশুটি। তবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ভয় কাটেনি এখনও। তাই তাকে নিবিঢ় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। হাসপাতালের পঞ্চম তলায় শিশু সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছে তার।

চিকিৎসক মাহফুজার রহমান জানান, ‘আমরা আশা করছি সৌরভের তেমন কোন সমস্যা হবে না। সংক্রমণ যেন না হয়, সে জন্য প্রতিদিন ড্রেসিং করছি’। তিনি জানান, সৌরভ এখনো বাম পা নড়াতে পারছে না। তবে সামান্য হলেও ডান পা নড়াচড়া করতে পারছে সে।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক বিমল কুমার জানান, সৌরভ কবে নাগাদ ছাড়া হবে, সে বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।

একেকটি দিন যায়, আর খরচের পরিমাণ বাড়ে। উদ্বেগ ছড়ায় বাবা-মায়ের মনে। বাকি টাকা শেষ হয়ে গেছে কে দেবে চিকিৎসার খরচ?

হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে থাকা শিশু পুত্রকে দেখিয়ে সৌরভের মা সেলিনা বেগম ঢাকা বলেন, ‘মোর কলিজার টুকরাটাকে নিয়ে এখন কী করমু? হামরা গরিব মানুষ। কোন ভুই (ভুমি) নাই। অন্যের জমিত কাম করি খাই। পোলার বাবা দিনে কাম করলে রাইতে খাওয়ন জোটে। পোলাপান নিয়া বহু কষ্টে থাকতি হয়। চিকিৎসা করামু কেমনে?’।

সেলিমা আপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ‘এতগুলা টাকা কেমনে শোধ করমু। ম্যালা টেকা খরচ হছি’।

সৌরভের বাবা সাজু বলেন, ‘হামার তো কেউ নেই। টেকাও নেই, লোকও নেই। ছাওয়ালরে এমপির গুলি করার পর হামার দিকে কেউ তাকায়নাই। অনেক কষ্টে আছি। টেকা নাই। কি করুম, বুঝবার পারতেছি না’।

বাড়ি ফিরে গেলে সাংসদ লিটনের লোকজন কোন ঝামেলা করে কি না, সে নিয়েও দুশ্চিন্তা আছে সৌরভের বাবা-মায়ের মনে। সেলিনা বেগম জানান, ভয়ে বাড়ি যেতে ইচ্ছে করে না তাদের। আবার যদি কেউ ঝামেলা করে তাহলে কে রক্ষা করবে সে চিন্তা ভর করেছে মনে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুন্দরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জিন্নাত আলী বলেন, ‘আমরা সৌরভের এবং তার পরিবারের নিরাপত্তা দিয়েছি। আশা করি তার কোন সমস্যা হবে না’।

স্থানীয়রা জানান, গত শুক্রবার সুন্দরগঞ্জে সৌরভকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ পায়ে গুলি করেন সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। এরপর থেকে সপরিবারে আত্মগোপনে আছেন তিনি। তাকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এরই মধ্যে নিকটাত্মীয় দুটি অস্ত্র থানায় জমা দেয়ার পর লাইসেন্স বাতিল করেছে প্রশাসন। স্থানীয় তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ থেকেও সরিয়ে দেয়া হয়েছে তাকে। ঢাকাটাইমস



মন্তব্য চালু নেই