চূড়ান্ত রায়েও মুজাহিদের ফাঁসি

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।

মঙ্গলবার সকাল ৯টা ৬ মিনিটে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।

এই আপিল বেঞ্চের বাকি তিন সদস্য হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আপিল বিভাগের চতুর্থ রায় এটি। এর আগে আপিল বিভাগের রায়ের পর জামায়াতের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে এবং জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী আপিলের রায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করছেন।

গত ২৭ মে উভয় পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে মুজাহিদের মামলার রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগের একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর ২ অাগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়।

মামলার শুনানি শেষে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১২ সালের ২১ জুন ট্রাইব্যুনালে মুজাহিদের বিচার শুরু হয়।

২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুজাহিদের বিরুদ্ধে আনীত রাষ্ট্রপক্ষের সাতটি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ফাঁসির দণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।

সাতটি অভিযোগের মধ্যে ১, ৩, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয়। তবে ২ ও ৪ নম্বর অভিযোগে তার সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়নি বলে রায়ে জানানো হয়। আপিলের রায়ে তাকে কেবল ৬ নম্বর অভিযোগে ফাঁসির রায় বহাল রাখা হয়। ৫ ও ৭ নম্বর অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ৩ নম্বর অভিযোগে তার পাঁচ বছরের জেলের রায় বহাল রাখা হয়েছে। তবে ১ নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়।

প্রথম অভিযোগে সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে অপহরণের পর হত্যা এবং ষষ্ঠ অভিযোগে বুদ্ধিজীবীসহ গণহত্যার ষড়যন্ত্র ও ইন্ধনের অভিযোগে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয় মুজাহিদকে।

একই সাজা হয় সপ্তম অভিযোগে, ফরিদপুরের বকচর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বর্বর হামলা চালিয়ে হত্যা-নির্যাতনের ঘটনায়।

এ ছাড়া পঞ্চম অভিযোগে সুরকার আলতাফ মাহমুদ, গেরিলা যোদ্ধা জহিরউদ্দিন জালাল ওরফে বিচ্ছু জালাল, শহীদজননী জাহানারা ইমামের ছেলে শাফি ইমাম রুমী, বদিউজ্জামান, আবদুল হালিম চৌধুরী জুয়েল ও মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদসহ কয়েকজনকে ঢাকার নাখালপাড়ায় পুরোনো এমপি হোস্টেলে আটকে রেখে নির্যাতন এবং জালাল ছাড়া বাকিদের হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার জন্য মুজাহিদকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

আর তৃতীয় অভিযোগে ফরিদপুর শহরের খাবাসপুরের রণজিৎ নাথকে অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় মুজাহিদকে।

তবে দ্বিতীয় অভিযোগে ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে হিন্দু গ্রামে গণহত্যা এবং চতুর্থ অভিযোগে আলফাডাঙ্গার আবু ইউসুফ ওরফে পাখিকে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়।

ট্রাইব্যুনালের ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ১১ আগস্ট আপিল করেন মুজাহিদ।



মন্তব্য চালু নেই