চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরে রাজনীতির খেলা, ভারতের কপালে চিন্তার ভাঁজ

স্পষ্ট করে প্রকাশ না করলেও পাকিস্তানের সাথে রাশিয়ার সম্পর্কের উন্নতি ঘুম কেড়ে নিচ্ছে ভারতের। সাম্প্রতিক সময়ে নিজেদের মধ্যে দেশ দুটির তৎপরতা ভারতের আন্তর্জাতিক নীতি-নির্ধারণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের চিন্তায় ফেলেছে। যারা সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে পাকিস্তানকে বিশ্ব থেকে একঘরে করতে নিরন্তরভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

পাকিস্তানের গণমাধ্যমে প্রকাশিত পাকিস্তান-চায়না অর্থনৈতিক অঞ্চল (সিপিইসি) নিয়ে নিজেদের সমর্থনের কথা সরকারিভাবে অস্বীকার করেছিল রাশিয়া। মস্কো চীনের অর্থায়নে গড়ে ওঠা ওই প্রকল্পে দৃঢ় সমর্থন ঘোষণা করেনি।

তবে পাকিস্তান-চায়না অর্থনৈতিক অঞ্চলের সাথে সংযোগ রেখে নিজস্ব ইউরেশীয় অর্থনৈতিক ইউনিয়ন প্রকল্প গড়ে তােলার অভিপ্রায় ঘোষণা করেছে রাশিয়া।

সিপিইসি করিডর পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের গােয়াদর বন্দরের সাথে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের সংযোগ করেছে। আর এখানেই ভারতের উদ্বেগ। দেশটির দাবি, পাকিস্তান শাসিত কাশ্মিরের গিলগিট-বাল্টিস্তানের ভেতর দিয়ে যাওয়া এই করিডর তাদের নিরাপত্তার জন্যে ঝুঁকিপূর্ণ।

এই ইস্যুতে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে দেখা করে সরাসরি উদ্বেগ জানিয়েছিলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু ভারতীয় উদ্বেগকে বিশেষ কোনাে গুরুত্বই দেয়নি চীন।

সিপিইসিতে যোগ দেয়ার কথা গত মাসে জােরেসোরেই অস্বীকার করেছিল রাশিয়া। তবে দু’দিন আগে পাকিস্তানে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত অ্যালেক্সি দেতভ বলেছেন, রাশিয়া ও পাকিস্তান সিপিইসিতে একত্রীকরণের জন্য ইউরেশীয় অর্থনৈতিক ইউনিয়ন প্রকল্পের আলোচনা করছে।

পাকিস্তান রেডিওকে দেয়া সাক্ষাতকারে দেতভ বলেন, ‘রাশিয়া জোড়ালোভাবেই সিপিইসি’র সমর্থন করে, এটা পাকিস্তানের অর্থনীতি ও আঞ্চলিক যোগাযোগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মস্কো থেকে আসা এই মিশ্র সংকেত বিষয়ে কৌশলগত সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ব্রহ্মা চেলানী বলেন, রাশিয়া-ভারত সম্পর্কের দীর্ঘদিন ধরে যে দৃঢ়তা ও স্থিতিশীলতা ছিল এর মাধ্যমে সেখানে অনিশ্চয়তার ইনজেকশন প্রয়োগ হবে।

টাইমস অব ইন্ডিয়াকে তিনি বলেন, এমন হতে পারে মস্কো ভারতকে এখন আর একটি নির্ভরযোগ্য বন্ধু বা অংশীদার হিসেবে দেখে না। একইভাবে সিপিইসি ও পাকিস্তান সমর্থিত আফগান তালেবানকে সমর্থনের মাধ্যমে আঞ্চলিকভাবে ভারতের স্বার্থ বিঘ্নিত করবে।’

ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার সাথে সম্পর্কের ‘নিম্নগামী প্রবণতা’ দেখা না গেলেও মস্কো লোকচক্ষুর অন্তরালে কাজ করে বোঝানোর চেষ্টা করছে পাকিস্তাকে এ অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদের উৎস রেখেই চলবে তারা।

ভারতের জন্য পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে যদি আফগান তালেবানকে নিয়ে রাশিয়া সেদেশের পরিস্থিতিকে জাতীয়-রাজনৈতিক মুভমেন্ট হিসেবে গণ্য করে।

আপাত দৃষ্টিতে আইএসকে পরাজিত করতে তালেবানকে হাতিয়ার হিসেবে দেখাচ্ছে রাশিয়া। কিন্তু গত সপ্তাহে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, শুধু আন্তর্জাতিক লাল দাগ মেনেই তালেবানের সাথে অন্য কোনো দেশের সংযোগ চায় ভারত। সেই সাথে আল-কায়েদার সঙ্গে সহিংসতা এবং বন্ধনও ছিন্ন চাই।

রাষ্ট্রদূত দেতভের বক্তব্য পাকিস্তান বিষয়ে চলতি বছরে করা রাশিয়ার দ্বিরুক্তির সর্বশেষ ভার্সন। আনুষ্ঠানিকভাবে এর শুরু গত সেপ্টেম্বরে। কাশ্মিরের উরিতে সন্ত্রাসী হামলায় ১৯ ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর ভারতের আপত্তি সত্ত্বেও পাকিস্তানের সাথে যৌথ সামরিক মহড়া চালায় রাশিয়া। তখন ওই মহড়াকে বৈধতা দিতে রাশিয়ার ভাষ্য ছিল, সন্ত্রাস প্রতিরোধে পাকিস্তানকে সাহায্য করতেই এই মহড়া।

গত অক্টোবরে ভারতের গোয়ায় অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে চীনা প্রতিরোধের মুখে ভারত প্রকাশ্যে লস্কর ও জয়শের মতো পাকিস্তান ভিত্তিক সন্ত্রাসীদের নাম সরকারিভাবে ঘোষণা করতে পারেনি। এক্ষেত্রে ভারতকে কোনো রকম সাহায্য করেনি রাশিয়াও।

সম্প্রতি ভারতে অনুষ্ঠিত ‘হার্ট অব এশিয়া’ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে রাশিয়ার একজন কূটনীতিক বলেছেন, পাকিস্তানের সাথে চলমান এই সম্পর্কের কারণে ভারতের সাথে সম্পর্কের কোনো ক্ষতি হবে না।

কিন্তু পাকিস্তান বিষয়ক রুশ দূত জামির কাবুলভ বলেন, ‘ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ট সহযোগিতা নিয়ে তো মস্কাে অভিযোগ বা অনুযোগ করেনি। সুতরাং রাশিয়া-পাকিস্তানের ‘অনেক নিম্ন স্তরের’ এই সম্পর্ক নিয়ে ভারতের কোনো অভিযোগ থাকার কথা নয়।’

তবে ভারত অভিযোগ করুক আর না করুক, এটা অবশ্যই তারা চোখ খোলা রেখে দেখছে।



মন্তব্য চালু নেই